somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় কেন আগ্রহী নয়

২৯ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে এসেছে বা পড়াশোনা করছে এরকম কাউকে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায় কিনা? প্রশ্নটি করলে অধিকাংশের ক্ষেত্রে একটা সহি উত্তর আসতে পারে- না। শিক্ষকতা পেশা হিসেবে মহান হলেও এবং এরা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতা করলেও, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে ক্ষেত্রে এই না আসার একটাই কারণ বেতন-ভাতা।

বিষয়টা আলোচনার জন্য সমকালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি গুরুত্বপুর্ণ। ২৪ জুন প্রকাশিত পত্রিকাটি ‘শিক্ষকতায় অনীহা মেধাবীদের’ শিরোনামে বলছে দেশের মেধাবী তরুণ-তরুনীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে দিন দিন অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রতিবেদনটি বিশেষত: দুটি বিষয়কে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে- কম বেতন ভাতা এবং কম সামাজিক সম্মান ।

প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক হলেও এ বিষয়টি আসলে আমাদের দেশের অনেক আগের সমস্যা। এটা নিয়ে লেখালেখি বা আলোচনা-সমালোচনা এবং একইসঙ্গে সরকারের প্রতিশ্রুতি যে কম হয়েছে তাও নয়। এ পেশায় আসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যে বিষয়গুলো রয়েছে তা দেখলে সহজেই এটা বলা যায়Ñ অনীহা আসলে মেধাবীদের নয়, বরং সমাজ এবং রাষ্ট্রই মেধাবীদের এই পেশায় আসতে দিচ্ছে না। কোন পেশা যত মহতই হোক তারা দ্বারা যদি কারও পেট না চলে সে পেশায় আসবে না এটাইতো স্বাভাবিক। সমকাল দেখাচ্ছে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে এবং কলেজ পর্যায়ের প্রারম্ভিক বেতন কাঠামো ৪ থেকে ৮ হাজারের মধ্যে। কলেজ পর্যায়ে কিছুটা বাড়লেও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে শিক্ষকদের খুবই অল্প টাকায় জীবন ধারণ করতে হয়। এর চেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো অনেক সময় বেসরকারি শিক্ষকরা ঠিকমতো মাসে মাসে এই কম বেতনটুকু ও পাচ্ছেন না। এবং সাম্প্রতিক সময়ে যেটা দেখা গেছে তারা থাকেন আন্দোলনে, রাস্তায় রাস্তায়, এমনকি আন্দোলনে শিক্ষক মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এই শিক্ষকতা পেশাকে আমরা যেভাবে অপমানিত অপদস্থ করেছি সেখানে কিভাবে আমরা মেধাবী দক্ষদের দেখার আশা করতে পারি?

আমাদের সরকার, প্রশাসন বরাবরই শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে গেছেন। তাদের বিষয়ে প্রতিনিয়ত কত কত প্রতিশ্রুতির ফলঝুড়ি শোনা যায়, কাজের কাজ কিছুই হয় না। শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর কথাতো আমরা কম শুনিনি। এটা ঠিক সাম্প্রতিক সময়ে সরকার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণী করেছেন আবার রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণের ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো আসলে খুবই সামান্য। দেখতে হবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা গোটা বিদ্যালয় সংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্য; যেখানে মোট ১৯ হাজার ৪০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় সংখ্যা মাত্র ৩১৭। আবার ধরা যাক রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ হবে কিন্তু জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধাইতো নাই। এর বাইরেও কলেজ শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধাও তেমন নেই এমনকি বিসিএসের অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা যেকোন মূল্যে কম।

অথচ গোটা দুনিয়া শিক্ষকদের জন্য বিনিয়োগে ব্যস্ত। ফলে সেখানে তারা ঠিকই মেধাবী আর দক্ষদের শিক্ষক হিসেবে পাচ্ছেন, সেখানে শিক্ষার মান ভালো। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ সুবিধার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ফারাক তা কোথাও নেই। ভারতে শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী প্রত্যেকটি দেশেই শিক্ষকদের বেতন বেশি। আর উন্নত বিশ্বের চিত্র worldsalaries.org দেখাচ্ছে, আমেরিকার একজন শিক্ষক মাসে গড়ে পান বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪ লাখ টাকা, ইংল্যান্ডের শিক্ষক পান সাড়ে ৩ লাখের মতো, জার্মানির শিক্ষকের বেতন সাড়ে ৪ লাখ প্রায় আর জাপানের শিক্ষকদের বেতনও সাড়ে ৩ লাখের বেশি। এসব দেশের শিক্ষকদের বেতনের একটা অংশ কেটে রাখা হয় এবং শিক্ষকদের কাজের সময় নির্ধারণ করা হয় সপ্তাহে ৩২ থেকে ৪০ ঘণ্টা।

এতসবের পরেও মেধাবী কিংবা দক্ষরা আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশায় যে একেবারে আসছেন না তা নয়। আসলেও বাস্তবতা দেখে তাদের চাকরিতে জব সেটিসফেকশন আসার কথা নয় আর কর্মে অতৃপ্তি নিয়ে শিক্ষকতা যিনি করবেন, তিনি কখনোই মানসম্মত শিক্ষক হতে পারেননা।

এর জন্য আমরাই মানে আমাদের সরকার, রাষ্ট্রই দায়ী যে কথাটি আগেও এসেছে। সবাই শিক্ষকদের ভালোভাবে জীবন ধারণের সুযোগ সুবিধা না দিলেও শিক্ষার গুণগান ভালোই গান। অথচ দিন দিন শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের সংখ্যা কমে গেলে আমাদের শিক্ষার অবস্থা যা আছে আরও শোচনীয় হবে। ভালো, দক্ষ শিক্ষক ছাড়া যত তোড়তোড়ই করা হোক না কেন কাজের কাজ কিছুই হবে না।

প্রকাশিত
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×