somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশাখের এই বেলায়

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈশাখ বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস। স¤্রাট আকবরের নির্দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমীর ফতেহউল্লাহ সিরাজী বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। বৈশাখ বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলা ভাষাভাষী নারী-পুরুষের আবেগের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের আবহমান সবুজ বাংলার সুন্দর প্রকৃতির বাতাসের সাথে সে মিশে আছে। সে মিশে আছে রাখালের বাঁশির সাথে। শিশুর হাসির সাথে। মাঝির গানের সুরের সাথে। নদীর ঢেউয়ের সাথে। কৃষি প্রধান এ দেশে ফসলভরা মাঠের সাথে। মায়ের শাড়ির আঁচলে সাথে। বোনের আদরের সাথে। প্রিয়তমা অভিমানি মুখটির সাথে।
বৈশাখ এলে মানুষ নতুনভাবে জেগে উঠে। সে পুরাতনকে, ব্যর্থতাকে, অপূর্ণতাকে, হতাশাকে, কূপমন্ডুকতাকে ছাড়িয়ে নতুনের দিকে অগ্রসর হয়। প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে। গাছে গাছে কচি পত্রপল্লব। পাখির গান আমাদের চারদিক মুখর হয়ে উঠে। হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বৈশাখ আমাদেরকে নতুনভাবে কাজ করতে, ভাবতে শেখায়। আগামীর জন্য প্রস্তুত করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই বৈশাখ এলে আমরা নতুনভাবে শিহরিত, পুলকিত, স্পন্দিত, আমোদিত হই। গভীর রাতে বৈশাখের ঝড়ো বাতাসে ঘরের কোণে নারিকেল গাছ এপাড় ওপাড় করার মধ্যদিয়ে আমাদের মনকেও নাড়া দিয়ে যায়। আকাশের তর্জন গর্জন আমাদের ভেতর এক ভিন্ন সুর জাগিয়ে তোলে। বৈশাখ আমাদেরকে সকল কুলুষতাকে, সাম্প্রদায়িকাকে, গোঁড়ামিকে অতিক্রম করতে শিক্ষা দেয়। বৈশাখ এলে আমাদেরকে স্বরণ করতে হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালিদাস, জীবনানন্দদাশ’কে। কাজী নজরুল ইসলাম যখন বলেন-‘তোরা সব জয়োধ্বনি কর তোরা সব জয়োধ্বনি কর, ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বৈশাখী ঝড়।’ অথবা আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ যখন খুব আদর করে গেয়ে উঠেন-‘এসো সে বৈশাখ এসে এসো।’ তখন আমরাও বসে থাকতে পারিনা। এভাবে বৈশাখ বাংলা সাহিত্যের কবিতা-গানে-উপন্যাসে-গল্পে-প্রবন্ধে বারবার উঠে এসেছে। বৈশাখ এলে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে রাস্তায় বের হয়ে আসে। মায়ের কোলে চড়ে আসে ছোট্ট শিশু। মানুষ দলবেঁধে হাজির হয় রমনার বটমূলে। আসে প্রেমিক যূগল। যেন বৈশাখের এই দিনে তাদেরকে কেউ ঠেলে ঠেলে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। অনেকে আবার দীর্ঘদিন পর্যন্ত মোবাইলের-এসএমএস এর মাধ্যমে প্রেম চালিয়ে যাবার পর প্রথম দেখা করার জন্য এই বৈশাখকেই বেছে নেয়। প্রথম দেখা! প্রথম চোখে চোখ রাখা! প্রথম হাতধরা! পাশে বসা! যা সম্পূর্ণ আলাদা শিহরণ নিয়ে হাজির হয় তাদের জীবনে। পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। সে মেলায় পুতুল নাচ, ষাড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই দেখানো হয়। যদিও তা বর্তমানে বৈশাখের এই উৎসবের ভেতর নানা অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের সরল সংস্কৃতিকে নোংরা করে দিচ্ছে। তবুও বৈশাখের যে একটা আলাদা আবেদন আছে তো আমার অস্বীকর করতে পারিনা।
একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পূর্ব শর্ত সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্থিলিশীলতা। গণতন্ত্রের উর্বব রাজনৈতিক মঞ্চ। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে সে রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই। একথা নির্দিধায় বলতে হয় যে, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের নামে চলছে স্বৈরতন্ত্রের নগ্ন ফ্যাসিবাদ। যা হিটলার, মুসোলীনিদের সাথেই কেবল তুলনীয় হতে পারে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে। অন্ধকার গহ্বরে সে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই এই অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশকে পরিশুদ্ধ করার জন্য। ধনী-গরীবের আকাশসম ব্যবধান দূর করার জন্য। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য। খেটে খাওয়া কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীর জন্য প্রয়োজন একটি ভয়ংকর ‘কাল বৈশাখী’। যে সবকিছু ভেঙ্গে চুরে নতুন করে গড়বে। তাই বৈশাখ শুধুমাত্র ধ্বংসের বার্তাই বহন করেনা সে নতুন করে গড়তেও জানে। তাই তো বৈশাখ আমাদের মনে-মননে-দেহে অনুরনিত করে প্রতিক্ষণে। বৈশাখ আমাদের হৃদয়ের, আমাদের প্রাণের, আমাদের ভালবাসার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×