somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারাদিন কিচ্ছু খায় নি

২৮ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখনকার মায়েদের একটি বড় মাথাব্যথা হলো তার সন্তান ‘’সারদিন কিচ্ছু খায় নি।‘’ অভুক্ত সন্তানকে খাওয়ার জন্য কত রকম পন্থাই না তারা অবলম্বন করেন! ভুলিয়ে ভালিয়ে, মারধোর করে, বকা ঝকা দিয়ে, কাতুতি মিনতি করে, টিভি দেখিয়ে, কোন কিছুর লোভ দেখিয়ে, ভুতের ভয় দেখিয়ে, আরো কত রকম নিষ্ঠুর ও মজার পদ্ধতি যে বাবা-মায়ে আবিষ্কার করেছেন তা ইয়ত্তা নেই। তবু বাচ্চাটি খাচ্ছে না। কখনো মা হাল ছেড়ে দেন এই বলে, ‘’যা, তোকে আজ কিচ্ছু খেতে দেব না।‘’ কিন্তু তাতেও বাচ্চাটির খাবারের কথা মনে পড়ছে না। মায়ের মন আর কত পারে? তাই মাকে আবারও খাবার খাওয়ানোর জন্য রণরংগিনীর ভূমিকায় নেমে পড়তে হয়। এখন চলুন দেখি, এই বাচ্চারা কেন খেতে চায় না?
 তার পেট ভরা,
 খাবারটি সুস্বাদু হয় নি
 অসুস্থতার কারণে অরুচিভাব
 পেট ফাঁপা হলে
 জাঙ্ক ফুড খাবার অভ্যাস থাকলে (বাইরের এসব খাবারের সাথে মা-বাবাই পরিচিত করে দেন। শুধু মা-বাবাই নন, অন্যান্য আত্নীয় স্বজন, বন্ধু, অতিথিরাও এ ধরনের খাবার বাচ্চাদের আদর করে কিনে দেন।)
 বড়দের দেখাদেখি সেও ডায়েটিং করতে চায়
 একটু স্বাস্থ্যবান শিশুদের অন্যরা ‘’মোটা’’, ‘’মোটকু’’ এ ধরনের কথা বলে হাসাহাসি করে থাকে। এজন্যও তার অনীহা হতে পারে।
 সকালবেলা ঘুম থেকে তুলে জোর করে, তাড়াহুড়া করে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলে খাবারের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হওয়া। ইত্যাদি

শিশু কিছু খাচ্ছে না, এটা যতটা না শিশুর সমস্যা তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো শিশুর মায়ের। মানে, শিশুটি ঠিকই খাচ্ছে। কিন্তু মায়ের অযথাই মনে হচ্ছে, সে খাচ্ছে না বা পরিমাণে কম খাচ্ছে। এটা মায়ের মানসিক সমস্যা। আগে আমাদের পরিবারগুলোতে অনেকগুলো করে ছেলেমেয়ে ছিল। বড় সংসারের সব কিছু দেখাশোনা করতে গিয়ে মায়েদের সন্তানদের খাবার খাওয়ানোর পেছনে অত সময় ব্যয় করতে হতো না। আর এখন, একক পরিবারে একটি দুটি সন্তান থাকায় মায়েরা সন্তানদের নিয়ে চিন্তা করার জন্য অনেক বেশি সময় পাচ্ছেন। তাই তার মনে হয় বাচ্চাটি ‘’সারদিন কিচ্ছু খায় নি।‘’ শিশু খাবার পরেও যদি বাড়িয়ে বলা হয় বা অভিযোগ করা হয়, ‘’কিচ্ছু খায় না’’, তখন সে জেদ করে, ইচ্ছে করে খায় না। মায়েরা অনেক সময় বোঝেন না, তার সন্তান কতটুকু খাবার খেতে পারবে। ফলে তিনি বেশি খাবার খেতে দেন আর সন্তান খাবার খেয়ে বাকিটুকু না খেতে চাইলে তাঁর মনে হয়, বাচ্চা খাচ্ছে না, কম খাচ্ছে, পুষ্টি পাচ্ছে না। অর্থাৎ, বাচ্চাটি খেয়েও খেল না। মায়েরা অনেক সময় অন্যদের কাছে এমনভাবে গল্প করেন, ‘’আমার বাচ্চা তো অমুক খাবারটা ছাড়া আর কিছুই খায় না‘’ বা ‘’কিচ্ছু খায় না‘’,যাতে বাচ্চাটি মনে করে তার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সে বরং এতে গর্বই বোধ করতে থাকে। তাই অন্যের মনোযোগ পাবার জন্যও সে খেতে চায় না। এছাড়াও সব সবজি একসাথে মিশিয়ে খিচুড়ি নামক একটি পদার্থ ছোটবেলা থেকে শিশুদের খেতে দেওয়া হয়। এতে বাচ্চাটি জানতেই পারল না, কোন সবজির স্বাদ, গন্ধ, রঙ কেমন, আর এভাবেই সে বেড়ে উঠছে। প্রতিদিন একখাবার খেয়ে সে একঘেঁয়েমিতে ভোগে। খিচুড়ির সবজিগুলোই আলাদা আলাদা করে বাচ্চাদের খেতে দেওয়া উচিত। ব্যস্ত মায়েদের জন্য এটা অবশ্য একটু ঝামেলারই। স্বস্তির ব্যাপার, আমাদের মায়েরা সন্তানের জন্য কোন ঝামেলাকেই ঝামেলা মনে করেন না। এ ব্যাপারে বাবাদেরও উচিত বাচ্চার মাকে কাজে সাহায্য করা।
বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যাপারে কখনোই জোর করা যাবে না। এতে পরে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হবে। বাচ্চা জেদি হয়ে যেতে পারে। ভুলিয়ে ভালিয়ে, কাতুতি মিনতি করে, টিভি দেখিয়ে (টিভি দেখে বাচ্চা হয়ত খায়, কিন্তু তাতে খাবারের প্রতি মনোযোগ তার থাকে না, খাদ্যের স্বাদ বোঝে না) , এই খাবার খেলে ঐ খাবার খেতে দেব এমন শর্ত দিয়ে খাওয়ানো যাবে না। আপনার সন্তান যদি সত্যিই কিছু না খায়, তাহলে সে বেঁচে আছে কী করে, বলুন? আর ‘’সারাদিন কিচ্ছু খায় নি’’ এই কথা এখন থেকে বলা বন্ধ করে দিন। আজকে কী খেল, না খেল তার হিসাব নয়, কাগজে কলমে হিসাব রাখুন পুরো সপ্তাহ জুড়ে সে কী খেল, কতটুকু খেল সেটা। একদিনের হিসাব নয়, হিসাব রাখুন টানা ৭দিনের। তাহলেই প্রমাণ পাবেন, আপনার সন্তান খাচ্ছে কি খাচ্ছে না।

শেষ করব একটা ঘটনা বলে। দিনা ওর বাচ্চাকে স্কুল ছুটির পরে বাসায় ফেরার পথে খাইয়ে দেবার চেষ্টা করছিল। এমনিতেই বাচ্চাটা খাবার নিয়ে সারাক্ষণ জ্বালায়, কিচ্ছু খেতে চায় না। আর আজ তো সারাদিন কিচ্ছু খায় নি। সেদ্ধ ডিমটা ওর মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দেবার পরে ‘ওয়াক’’ করে ও গাড়ির জানালা দিয়ে ফেলে দিল। আর অমনি রাস্তার এক ছোট্ট ছেলে, অনেকটা দিনার ছেলের বয়সীই, দৌড়ে এসে ওটা নিয়ে চলে গেল। রাস্তাতে জ্যাম ছিল। তাই দিনা দেখতে পেল ফুটপাতে ঐ ছেলেটি ফেলে দেওয়া ডিমটা গোগ্রাসে খাচ্ছে। দিনার যেমন মনে হয় ‘’আমার ছেলেটা আজ সারাদিন কিচ্ছু খায় নি’’ তেমনি রাস্তার ঐ ছেলেটার মায়েরও মনে হয়, ‘’আমার পুলাডা আইজ সারাদিন কিছুই খায় নাই।‘’

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×