সকাল থেকে হাবিজাবি কিনতে কিতে কখন যে ৪টা বেজে গেল বুঝতেই পারলাম না। দুপুরের খাওয়াটাও হল না। পেটের মধ্যে আগুন চলছে, সাথে মাথায়ও। অবশেষে বাড়ি ফেরার গাড়িতে উঠে বসলাম। সবাই একে 'ইমা' বলে ডাকে। পিছনের দিকটা দেখতে টেম্পুর মতো, মাথাটা মাইক্রোর মতো। আসলে এর নাম যে কি আমি জানি না। গাড়ি ছাড়ার পরই কেমন এলোমেলো লাগা শুরু। বুঝলাম কোন একটা গণ্ডগোল আছে। গাড়ি কখনোই সোজা যাচ্ছে না। একবার বাঁয়ে তো আরেকবার ডানে। মাঝে মাঝে যাত্রী উঠানামা করার জন্য থামে তাও কেমন এলোমোলো থামা মনে হয়। কন্ডাক্টরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম 'ড্রাইভার নতুন নাকি?' সে একগাল হেসে বলল ' বলতে পারেন আজকেই শুরু। রোডে না উঠলে শিখবে কি করে? ' শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। মনে হলো গন্তব্যে পৌছাতে পারব তো? অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পাব তো? মনেমনে আল্লাহকে ডাকছি, কখন ভালয় ভালয় গন্তব্য পৌঁছব। কিন্তু ভালয় ভালয় গন্তব্যে আর পৌছা হলো না। ফেনী থেকে ১২/১৩ কি:মি: উত্তরে পদুয়া নামক স্থানে আসতেই পিছন থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের প্রচন্ড আঘাত। চোখের পলকে আবিষ্কার করলাম গাড়ি রাস্তার বাহিরে। গাড়ির সবাই উলট পালট হয়ে একে অন্যের উপর পড়েছে। আমার পাশেই এক মহিলা বসেছিল, তার মাথা থেকে গলগল করে রক্তা পড়ছে। সেই সাথে অনেকের আত্মচিৎকার। প্রথমে আবিস্কার করলাম আল্লাহর রহমতে অক্ষত আছি। শুধু বাঁ পাজরে একটু ব্যাথা। কাছেই অনেকগুলো সিএনজি দাড়িয়ে ছিল। একটাতে কোন রকমে পড়িমরি করে উঠে বসলাম। বাড়ি আসতে আসতে ব্যথাটা আরো বাড়ল। বাঁ পাজরের পিছন থেকে ব্যথাটা সামনে পর্যন্ত চলে এলো। নড়াচড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। একটু এদিক ওদিক হলেই ব্যাথা ঝিলিক মারছে। ডান চোড়ালেও ব্যাথা লাগছে।
এই দেশে বেঁচে থাকাই এক বিস্ময়। কি করে যে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি এটাই মাঝে মাঝে ভাবি।
আমার ইচ্ছে করছে শাহজাহান খানকে কান ধরে হিঁ..হিঁ করে টেনে এনে সেই গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে বলি 'এবার মনের সুখে চালা, যেভাবে পারিস চালা।'
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৪