somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবিধ বাহানা ও কিছু প্রশ্ন

২৬ শে জুন, ২০১২ ভোর ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়া হলে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতি হতে পারে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বলে আর কিছু থাকবে না। প্রতিদিনই মানুষ খুন হবে। এসব যুক্তি তুলে ধরে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন দেয়া সম্ভব নয়। তাহলে আপনার মনে কী প্রতিক্রিয়া হবে? অনুমান করতে অসুবিধা হচ্ছে না। এ খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটা গণতন্ত্রমনা মানুষই তীব্র ক্ষোভ আর প্রতিবাদে ফেটে পড়বেন।
না, একথাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়। নির্বাচন দেবেন না এই কথা তিনি ভুল করেও বলেন নি। এমনকি নানা অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন পেছানোর কোনো ঘোষণাও দেন নি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না দেওয়ার জন্য ওপরের ওই ধরনের যুক্তির-ই আশ্রয় নিয়ে চলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাননীয়’ উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গত ২১ মার্চ বিবিসি বাংলার পরিক্রমা পর্বে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলছে। এ অবস্থায় ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা-কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এখন সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তাহলে এই সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় নির্বাচন না দিয়ে উপাচার্য কী মহামারি-পূর্ণ দশায় নির্বাচন দিতে চান? নাকি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পাশ কাটিয়ে যেতে চান? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও-তো মনোনীত; নির্বাচিত নয়। উপাচার্য নির্বাচন হয় না কেন? উপাচার্য নির্বাচনে কি শিক্ষকদের মধ্যে লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়া-দৌড়ীর আশঙ্কা কাজ করে? এই ভয়ে উপাচার্য নির্বাচন হয় না? এ রকম আরও অনেককিছুই তুলে ধরা সম্ভব; কিন্তু আমরা সেদিকে যাচ্ছি না।
আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ক্লাসরুমের শিক্ষাই কি উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা? ক্লাসরুমের শিক্ষাই উচ্চশিক্ষা নয়। উচ্চশিক্ষাকে পরিপূর্ণ করতে আরও কতকগুলো অনুষঙ্গ জারি থাকা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ মূলত সেই কাজগুলো করতেই সহায়তা করে। পৃথিবীর সব শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই ছাত্র সংসদ আছে। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটগুলো ঘেঁটে দেখুন; ওদের ছাত্র সংসদ আছে নানান আকারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউরোপ-আমেরিকার আরও বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চালু আছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ সক্রিয় আছে। বিদেশী নামকরা বিশ্ববিদ্যাগুলোর ছাত্র সংসদ যেটা করে থাকে- স্বাধীনভাবে কথা বলা, ইতিবাচক পরিবর্তনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একযোগে কাজ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে ভূমিকা রাখা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশ ঘটানো, শিক্ষার্থী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্চার থাকাসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড- পরিচালনা ইত্যাদি। নেই শুধু আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামান নিচে নামার কারণ এখানকার সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও তার বিকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়া। ডাকসু সর্বশেষ কার্যকর ছিল ১৯৯০-১৯৯১ শিক্ষাবর্ষে। অর্থাৎ স্বৈরাচার সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে নির্বাচিত ডাকসু থেকে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা। প্রতিনিধিত্বের এ ব্যবস্থার কারণ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ শিক্ষার্থীদের তাবৎ সমস্যা সমাধানের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু রাখা। কিন্তু তা নেই ২১ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি যৌথ জ্ঞান বিকাশের প্রতিষ্ঠান হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন সিনেটে থাকবে না? বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে-না চলবেÑ এই সব বিষয়ে কেন শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হবে না? অধ্যাদেশে যে ৫ জন শিক্ষার্থী থাকার বিষয়ে বলা হয়েছে সেটি ছাড়া সিনেটে গত ২১ বছরে যতগুলো বাজেট পাস হয়েছে সেগুলো কি অবৈধ হয়ে যায় না?
সিনেটে আইন দ্বারা ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধির কথা থাকলেও সিন্ডিকেটে এর কোনো নামগন্ধও নেই। সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি থাকার বিষয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও নেই। এর মানে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে শুধু শিক্ষক এবং সরকারি কিছু আমলাদের দ্বারা। পুরোটাই একরোখা এবং অগণতান্ত্রিক সিনেট-সিন্ডিকেট দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়।
ছাত্র সংসদ অচল থাকলেও কর্তৃপক্ষ বছর বছর ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় ১২০ টাকা করে। প্রতি বছরে শিক্ষার্থী বিবেচনায় সেই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ। সেই টাকা কোথায় যায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে মঞ্জুরী কমিশন হতে প্রাপ্ত টাকার হিসেব থাকলেও শিক্ষার্থীদের থেকে আদায়কৃত টাকার কোনো হিসেব কেনো দেওয়া হয় না? ছাত্র সংসদ বাবদ টাকা-পয়সা নিয়েও নির্বাচন না দেওয়ার আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি কি?
আজকে যখন সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি উদ্যোগে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হয়, তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকাশের জন্য সরকারের সদিচ্ছা মিডিয়াতে জোরালো ভাবে উপস্থাপন করা হয়, তখন ডাকসুসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিকাংশ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত থাকা এবং সে ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা দৃষ্টিগোচর না হওয়াটা রহস্যজনক ও হতাশাজনকও বটে! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়, কর্মচারী সমিতির নির্বাচন হয়; শুধু হয় না ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
ডাকসুসহ সব হল সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাট্টা হয়ে গড়ে তুলেছি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’। এ দাবিতে সোচ্চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবৎ শিক্ষার্থীদের জোটবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে এ মঞ্চ। ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নিয়ে আমরা গবেষণা জরিপ, স্বাক্ষর গ্রহণ, বুলেটিন প্রকাশ, ব্যাঙ্গ কার্টুন প্রদর্শনী, মিছিল-সমাবেশসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা শিক্ষার্থীরা অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে তীব্র হুঙ্কারে শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়ছি শিগগির...
***
নাদিম মাহমুদ, সেঁজুতি নওরোজ, তারিফ হক, সৌমিত্র শুভ্র, আমির খসরু ইমন, ইউনা ইসলাম, তৌফিক ইমাম, মাহির দায়ান, কামরুস সালাম সংসদ, হারুন-অর-রশিদ মুরাদ, নুর বাহাদুর, মওদুদ মিষ্টি এবং নুরে আলম দুর্জয়।
লেখকবৃন্দ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্নবর্ষের শিক্ষার্থী যোগাযোগ: [email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×