somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিধ্বস্ত স্মৃতি (ছোটো গল্প)

২৪ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথায় বড় একটা টাক। হাসি দিলে মনে হয় টাকসহ হাসছে-অগোছালো হাসি। ভাল একটা নাম থাকলেও মেসের সবাই তাকে পটল নামে ডাকে। পেশা প্রাইভেট পড়ানো। অবশ্য বড় ক্লাশের ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু যাদেরকে পড়ায় তাদের বইয়ের কোন্ পাতায় কোন্ অংশে কি লেখা আছে সব মুখস্ত। পুরনো মেস মেম্বার হিসেবে জুনিয়র অনেকে তাকে ডাকে বড় ভাই। শাওন কয়েক মাস হল একই মেসে উঠেছে। নতুন চাকরীতে যোগ দিয়েছে। মেসের পুরো একটা রুম নিয়ে থাকে একা। ছাত্র জীবনেও মেসে থাকার অভিজ্ঞতা আছে তার। মনে মনে ভাল একজন রুমমেট খুঁজছে শাওন। একদিন সবার মাঝে রুমমেট হওয়ার প্রস্তাব করলে সবার আগে পটলই বলল-
'আমি রুমমেট হতে পারি। তবে এখন একরুমে চারজন যে হারে ভাড়া দেই তার চেয়ে বেশী দিতে পারবোনা।’ শাওন তাতেই সম্মত হল। অন্য সদস্যগণও খুশি হল। কারণ মেসের অধিকাংশ সদস্যই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। প্রতি রাতে পটলের গল্প শুনতে শুনতে সকলে তীক্ত-বিরক্ত।

এদিকে শাওনের রুমে ওঠার পর থেকে কয়েক মাস হল পটলের রুম ভাড়া বাকি। উল্টো শাওনের কাছ থেকে ধার নিয়ে মেসের খাওয়ার টাকা পরিশোধ করতে হয় তাকে। রাত নয়টা-দশটার দিকে বাসায় ফিরে প্রতিদিন। এমনই এক রাতে বাসায় ঢুকে কোন কথা-বার্তা না বলে নিশ্চুপ শুয়ে আছে পটল। শাওন দেখল পটলের মন খারাপ তাই জিজ্ঞেস করলো-'পটল ভাই, আপনার কি মন খারাপ?'
পটল উঠে বসলো। কোন কথা নেই। শাওন দেখল পটলের জামার পকেটের কাছে অনেকখানি ছিড়ে ঝুলে আছে। আবার জিজ্ঞেস করলো-'কি ব্যাপার?’
পটল বলল- 'শাওন ভাই, এই দুর্মূল্যের বাজারে মাত্র ক’টা টাকায় বাসায় গিয়ে ক্লাশ টু এর একটা ছাত্রী পড়াই। প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে সারা সপ্তাহ। আমার জামাটায় সামান্য একটা ফুটো ছিল। ছাত্রীটা ফুটোর মধ্যে কলম ঢুকিয়ে টান মেরে দেখেন জামাটার কি হাল করেছে। মাত্র একটাই ভাল জামা ছিল সেটাও শেষ। জানেন শাওন ভাই, হাতে যদি আর একটাও টিউশনী থাকতো তাহলে এটা আমি আজকেই ছেড়ে দিতাম। খুব দুর্দিন চলছে।’ কথাগুলো বলতে বলতে পটল ওয়াশরুমে চলে গেল।
শাওনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে জানে পটলের পকেট খালী। ভাল জামা কাপড়ও নেই। পটল আবার ফিরে আসতেই শাওন বলল- 'পটল ভাই, চা খাবেন?’
-'কি বলেন এই মেসে চা পাবেন কোথায়।’
শাওন বলল-'আমার চা খাওয়ার অভ্যেস আছেতো, আপনি খেলে চা এর সরঞ্জামাদি নিয়ে আসতে পারি দোকান থেকে। মাঝে মাঝে খাওয়া যাবে।’
পটল বলল-'তাহলে আপনি বসেন, আমি সবকিছু নিয়ে আসি। আমি আপনাকে চা বানিয়ে খাওয়াবো।’ কথাগুলো বলতে বলতে পটল উঠে দাঁড়ালো। শাওন কিছু টাকা দিয়ে দিলে অতি দ্রুত দোকান থেকে এসে চা করে দুটো গ্লাসে দুজনে নিল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শাওন বলল- 'পটল ভাই, শুনেছি আপনি ভালো রান্না করতে পারেন। মেসে অনেক লোকের এক সাথে রান্না খাবার আমার কাছে ভাল লাগেনা। চলুন আমি আর আপনি এক সাথে রান্না করে খাই। আপনার টাকা দিতে হবেনা।'
কথাগুলো শুনে পটল মনে মনে খুশীই হল। বলল-'তা খাওয়া যেতে পারে। তবে টাকা নিবেন না এটা কি হয়?’
তারপর থেকে এভাবেই চলল। যখন যেখানে যত টাকা লাগে শাওন দিয়ে দিচ্ছে আর যাবতীয় কাজ সব পটলই করছে। শুধু রান্নার কাজই নয়। শাওনের জামা-কাপড় ধোঁয়া, বাজার সদায় সবই। এমনকি কোন্ শার্ট পরলে শাওনকে ভাল মানাবে তেমন শার্ট পটলই কিনে দিচ্ছে। কিন্তু শাওনের কাছে কেমন যেন লাগছে। পটলের জীবনে কি কোন চাওয়া পাওয়া নেই? রাতে শুয়ে শুয়ে শাওন জিজ্ঞেস করে-'আচ্ছা পটল ভাই, আপনার বাড়িতে কে কে আছেন বলুনতো।'
পটলের বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আর ধীরে ধীরে বলল-’বাবা, মা, আর দুটো বোন আছে।’
-'তাদের কোন খোঁজ খবর আছে আপনার কাছে?’
-'অনেক বছর ধরে তাদের কোন খোঁজ নেই। আমাদের কোন যায়গা-জমি নেই। বাবার দুটো হালের গরু আছে তা দিয়ে অন্যের জমি চাষ করে দিন চলে -যেটাকে দিন চলা বলে না। হয়ত এখনো খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। জীবনের কষ্টের কথা আমি মনে করতে চাই না।’ কথাগুলো বলতে বলতে সেই কখন ঘুমিয়ে পড়লো পটল। শাওন মাথা উচিয়ে দেখে সেই টাক মাথা ওয়ালা পটল ঘুমাচ্ছে শান্ত শিশুর মত। শাওন ভাবে আসলেই জগৎসংসারে তার কোন ভাবনা নেই, চাওয়া নেই, পাওয়া নেই। জীবনে কিছু করতে হবে সে চিন্তাও নেই। আর থাকলেই বা কি করার ছিল তার।
এভাবেই দিন চলে যায়- পটল আর শাওনের মধ্যে কেমন যেন এক অদৃশ্য স্নেহের বাঁধন গড়ে ওঠে। অন্য দিকে শাওনকে তার বাবা মা বিয়ে করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সেও মনে মনে ভাবে পাত্রী পছন্দ হলে বিয়েটা করে ফেলবে। বিয়ে করার মানসিকতা নিয়েই পটলকে একবার তাদের বাড়ি নিয়ে গেল এবং বিয়ে করে ফেলল। শাওনের বিয়েতে পটল খুব আনন্দিত। গ্রামে গিয়ে অনেক মজা করেছে সে।
কিন্তু বিয়ের পরেই শাওনের মনে অনেক দায়িত্ব অনেক চিন্তা এসে গেল। পটলকে একদিন বলল-'পটল ভাই, দুই রুমের, কম দামে কোন বাসা ভাড়া পেলে দেখবেন।’
পটল অতি সহজভাবে বলল- 'ও, বুঝছি এবার আপনি ভাবীকে নিয়ে আসবেন ঢাকায় তাইতো। ভাড়া পেলে দেখবো মানে! আমি পটল দু-এক দিনের মধ্যেই ম্যানেজ করছি।’
ঠিক তাই হল। মেসের সিট ছেড়ে দিয়ে দুজনেই নতুন ভাড়া বাসায় উঠলো। প্রথমে একটা সংসারে যা যা দরকার সবকিছু যোগাড় করলো। শাওন ঠিকই স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য বাসাটি ভাড়া নিয়েছে। তাই একদিন অফিস থেকে ফিরে কথাচ্ছলে শাওন বলল-'পটল ভাই, এ বাসাটা আপনার ভাবীর জন্যই নেয়া। এখন তো আপনাকে আপনার পথ দেখতে হবে। আমিই বা আপনাকে এভাবে আর কত দিন টানবো বলুন।’
আচমকা পটলের মাথা হেড হয়ে গেল। নেমে এলো কালো অন্ধকার জীবনে। রাতের খাবার খেলোনা পটল। এমনিতেই কেন যেন মুখে খাবার উঠতে চায়না। দু-এক দিন পরে শাওন আবার পটলকে জিজ্ঞেস করলো- 'পটল ভাই, আপনার কি কোন ব্যবস্থা হল?’
পটলের মনটা খারাপ। অতি স্বাভাবিক কন্ঠে পটল বলল-হুঁ, হয়েছে। আপনাকে ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট লাগে।’ তারপর পটল তার গলা থেকে স্বর্ণের চেইনটা খুলে বলল- 'শাওন ভাই, এই চেইনটা আমার মা আমাকে দিয়েছিলেন। আমার মাকে দিয়েছিলেন আমার দাদা। এভাবেই বংশ পরস্পরায় এটা আমার হাতে চলে এসেছে। এই চেইনটা আমি আপনার ঘরে যে নতুন মেহমান আসবে তার জন্য রেখে যেতে চাই। আমার কাছে এটা অনেক দামী।’
শাওন চেইনটা রাখতে চাইলোনা। তারপরও জোর করে রেখে দিল টেবিলের উপর। রাতের খাওয়া শেষে পটল বাইরে যাওয়ার কথা বলে চলে গেলো- আর ফিরে এলোনা। সারাটা রাত শাওন ছটফট করলো বিছানায়। দু-চোখে ঘুম এলোনা। তারপর দিন যায় রাত যায় কত কি ভাবনায়-কি জানি কোথায় না খেয়ে পড়ে আছে ইত্যাদি।
আগে পটলের বাবা মা শাওনের মোবাইলে কথা বলতো পটলের সাথে। অনেক দিন পরে হঠাৎ এমনই একটা কল এলো শাওনের মোবাইলে। মনটা কেমন কেমন লাগলো। হয়তো পটলই কলটা করেছে। তাই উৎসাহ নিয়ে কলটা রিসিভ করতেই পটলের মা বললেন-
'বাবা, অনেক দিন ভেবেছি তোমার সাথে কথা বলবো। তুমি আমার পটলকে একটা ভাল চাকরী দিয়েছো। গত মাসেও কিছু টাকা পাঠিয়েছে। অফিসের কাজের ঝামেলায় পটলের সাথে নাকি তোমার এখন দেখা কম হয়। তো বাবা, আমার পটলের জন্য তুমি এত কিছু করলে সে জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি-তুমি আরো অনেক বড় হও, ভাল থাকো।’
তারপর অনেক কথা হল। ফোন রেখে শাওন ভাবলো-তাহলে পটল নিশ্চয়ই কোন চাকরী নিয়েছে, অথবা ভাল আছে। যাক। এবার শাওনের বুক থেকে একটা চাঁপা কষ্ট দূর হল। ভাবলো- বন্ধু ভালই আছে।
দীর্ঘ বছর দুয়েক পরে বাসার একটু সামনে রাস্তার মোড়ে শাওন তার স্ত্রীসহ রিকশা থেকে পা ফেলতেই চোখে চোখ পড়লো জীবনের সাথে মিশে যাওয়া আবার হারিয়ে যাওয়া সেই পটলের দিকে। কিন্তু আনন্দিত হলনা মোটেই। মুহূর্তেই বেদনায় ভরে গেল জীবন। পটল চোখ ফিরিয়ে নিলো। রিকশার ড্রাইভিং সিটে বসে গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মূছছে তো মূছছেই। শাওন পটলের রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ডাকলো-'পটল ভাই, পটল ভাই।’
পটল মাথা জাগালোনা। সেই টাক মাথা ঘামে ভিজে গেছে, পকেটের কাছে অনেকখানি ছেড়া সেই জামাটাই রয়ে গেছে আজও। আবার ডাক দিতেই পটল রিকশা চালিয়ে যেতে উদ্যোগি হলে শাওন সামনে গিয়ে তার হাত দুটি ধরলো। বললো-
'পটল ভাই, আমি ভাবতেই পারিনি আপনি কোন কাজ করে খেতে পারবেন। জানেন, এই মুহূর্তে গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে, আমার জীবনে আর কোন কষ্ট নেই। এখন আপনি কাজ করছেন, আপনার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসছে। আপনার কর্মকে আমি সেলুট জানাই।’
পটল একবার শুধু শাওনের দিকে মুখ ফিরে তাকায়। চোখ দুটো পানিতে ভেঁজা। তারপর ধীরে ধীরে পটলের রিকশাটা চলতে থাকে। চলতে থাকে দূর হতে বহু দূরে, হয়ত এই বিদ্ধস্ত শহর ছেড়ে অন্য কোথাও।
----- ০০০ -----
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বেনজিরের হালচাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

পারাপার – হুমায়ূন আহমেদ (কাহিনী সংক্ষেপ)

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৬

বইয়ের নাম : পারাপার
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : হিমু বিষয়ক উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩
প্রকাশক : অন্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যা :... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করায় আপনার কেন দুঃখিত হওয়া উচিত নয়।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮

সোহান ছিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঈশ্বরা গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে ও স্থানীয় শহিদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×