somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেইজিং------গ্রেটওয়াল আর ফরবিডেন সিটি

২৪ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেইজিং এ মাত্র ৩ দিন ছিলাম। প্লেন থেকে নেমেই অফিস চলে গেলাম , বাকি বেলাটুকু কাজের মধ্যেই ডুবে ছিলাম। পরদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন স্বভাবতই কাজ আর কাজ । সন্ধ্যার পর গেলাম সিল্ক মার্কেট । আমাদের হোটেলটা ছিল এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে তাই সিল্ক মার্কেট থেকে বেশ খানিকটা দুরে। ৫ তলা মার্কেট একেকতলায় একেক জিনিশ, বিদেশীদের ভিড়, মেয়ে সেলস্ পারসন গুলো টানাটানি করছে কেনার জন্য, না কিনলে ওদের ভাষায় গালিগালাজ।আমাকে ওদের পছন্দ হয়নি,না হবার যথেষ্ট কারনও ছিল কেননা আমি যা দাম চাইছিল তার ১/১০ ভাগ বলছিলাম শুধু তাই না পুরুষদের কাছে গছানো যত সহজ মেয়েদের কাছে তত নয়। এদিকে রাত ৯:৩০ বাজে মার্কেট বন্ধ বেরিয়ে ট্যাক্সি নিলাম তাও সে ৫ মিনিটের মধ্যেই নামিয়ে দিল কারন সে নাকি না চিনে আমাকে উঠিয়েছে। এদিকে মার্কেট থেকে খানিকটা দুরে চলে এসেছি হাতে ব্যাগ আর পোটলা নিয়ে আবার গেলাম মার্কেটের সামনে ট্যাক্সি পেতে , ট্যাক্সিওয়ালা বললো যাবো কিন্ত্ত ভাড়া ৩ গুন আমি তাতেই রাজি। হঠাৎ এক নির্জন রাস্তার সামনে থামিয়ে বলল টাকা দাও এখনি, আমি বাধ্য হয়ে তাকে ১০০ টাকার নোট দিলাম সে বলল না এটা ছিড়া,ওটা ভাজ খাওয়া এভাবে ৩ বার ১০০ টাকার নোট বদলালো আমি বিরক্ত হয়ে বললাম যা বেটা, তোর ট্যাক্সিতে যাবোই না। রাত তখন ১০:৩০ নির্জন রাস্তা, ভাষা বুঝি না পুরাই ভয় ভয় করছিল।
২ হাতে প্যাকেট নি্যে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম যদি ট্যাক্সি পাই । অবশেষে হোটেলে পৌছালাম রাত ১১:৩০ এর দিকে। এত ভয় পেয়েছিলাম সেদিন, এত বছর পর ২বার ভয় পেলাম একা ট্রাভেল করতে গিয়ে ।
পরদিন সারাদিনের ট্যুর ঠিক করে রেখেছিলাম বেইজিং এ নেমেই , এই একটা দিনই ছিল আমার off day । প্যাকেজ ট্যুর প্রথমে Forbidden City অতঃপর Greatwal। ছোট্ট একটা গ্রুপ আমাদের গাইডসহ মোট ৮ জন। India, Dubai, South African, Bangladeshi, Malaysia একেকজন একেক দেশের কিন্ত মানবিকতা আর একই উদ্দেশ্যের কারনে হয়ে গিয়েছিলাম এক পরিবার।

প্রথমেই মাইক্রোবাসে উঠেই বেশ আরামদায়ক সোফা টাইপ চেয়ারে বসে ঝিমাতে লাগলাম। আমি যে কোনো জিনিস দুলতে থাকলে ছোট বেলার দোলনার কথা ভেবে ঘুমিয়ে পরি গতকালের তিক্ত অভিঙ্গতায় রাতে ভাল ঘুম হয়নি তাই আরাম করে ঝিমাছিছলাম । একটু পর সুতনু সুন্দরী মেয়ে সফরসঙ্গী হয়ে পাশে বসল।
মেয়েটির perfect 10 টাইপ ফিগার আর আমার বিরাট ভুড়ি পাশাপাশি দেখে রাগে দুঃখে হিংসায় জ্বলে পুরছিলাম । মনে মনে পন করলাম এবার দেশে ফিরেই crush diet এ যাবো। এভাবে চলে এলাম শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্হিত Forbidden City ।

লোকে লোকারন্য কোনোরকমে লোকজোনের ফাঁক ফোকোর দিয়ে ছবি তুললাম । রাজার জন্মদিনের কুঁচকাওয়াজ হত এখানে। একের পর এক গেট পেরিয়ে অবশেষে রাজার মুল বাড়ী, মোট ২৪ জন রাজার মিঙ্গ (১৪) কিঙ্গ (১০) ডাইনাস্টির প্রাসাদ ছিল এটি।পাথরেরে খাঁজে খাঁজে কাঠের কারুকার্যে যে ইতিহাস আর ঐতিহ্য লুকি্যে ছিল তা হাত দিয়ে স্পর্ষ করে গায়ে কাঁটা দিল, মনে হল এই সেই প্রাসাদ যা ১৪০৬ সালে শুরু হয়েছিল আর আমি ২০১২ তে দাড়িয়ে দেখছি। লাল উচু প্রাচীর ঘেরা বিশাল জায়গা, গার্ডেন, গার্ড রুম, সিড়ি, চাতাল, রেলিং, বাড়ীর ছাদে মুর্তি সব কিছুতেই চাইনীজ কালচার ফুটে উঠেছে। রাজার মুল ঘরের মাঝখানে সিংহাসন দেয়ালে বিরাট বিরাট আয়না আর চারদিকে ৭ টা দরজার আড়ালে ৭টি ঘর। রাজা কখন কোন রুমে থাকতেন কেউ জানত না ।ইতিহাস বলে ক্ষমতা ও অর্থ শাসকদের জনতার কাছ থেকে দুরে সোরিয়ে নেয়। দেবতার আসনে বসে উনারা এত অত্যাচার করেন যে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত থেকেছেন এই সব অপদেবতারা ।
দুপুরে খাবার ব্রেক, এবার চললাম গ্রেটওয়ল অভিমূখে । খাবারের বিল পরিশোধ করতে গি্যেই বুঝলাম গতকাল আমাকে সেই ট্যাক্সি ড্রাইভার ৩টি ১০০ RMB নকল টাকা ধরি্যে দিয়েছিলেন। Restaurent Manager অনেক বার এসে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন তার দেশের ট্যাক্সি ড্রাইভার দারা আমি প্রতারিত হয়েছি বলে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম আমাকে তাহলে কতজন বিদেশী ট্যুরিস্টের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আমাদের দেশে এসে প্রতারিত হবার জন্যে !


Great Wall যেতে Rope way র বিশাল লাইনে দাড়িয়ে পাহাড়ে উঠলাম, ওরে বাপ মানুষ পিল পিল করছে। বেশ চওড়া ৪ টি ঘোড়া চলবার পথ । ঢালু সিড়ি পাহাড়ের পর পাহাড় বেয়ে এগিয়ে গেছে , বেশ উঁচু বলে ঠান্ডা বাতাস । Great Wall এ অনেক গুলো জায়গা দিয়ে যাওয়া যায় আমরা ঢুকেছি বাদালিং দিয়ে। বাচ্চা বুড়ো কেউ বাদ নেই সব বেড়াতে এসেছে। ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা বেজে গেল , ঘুমে চোখ ভেঙ্গে এল। কাল যে দেশে ফিরতে হবে। আবার সেই লম্বা পথ পারি দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৩:০১
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×