somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখি ...... আমার একলা পাখি

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিনও যথারীতি সকাল ৮টার প্রথম ক্লাসটা মিস । সময় কাটানোর জন্য হাটাহাটি করছিলাম । বিজনেস ফ্যাকাল্টি থেকে কলা ভবন, সেখান থেকে জৈন মন্দির, টিএসসি হয়ে কাজী নজরুল ইসলামের মাজারের পর চারুকলা । বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে নাকে লাগছিলো শাহবাগের বিক্ষোভের গন্ধ । চারপাশের সবার মাঝেই কি যেন এক চনমনে ভাব, কিছু একটা করে ফেলতেই হবে এমন ইচ্ছা ঠিকরে বেরোচ্ছে । এমন একটা সময়েই বন্ধুটার সাথে দেখা হয়ে গেলো, বহুদিন পর । শেষ দেখিছিলাম কলেজের শুরুর দিকের কোন একটা দিনে, পরে আর যোগাযোগ থাকে নি । বন্ধু তখন ঝলমলে নতুন প্রেমে মগ্ন, দুনিয়ার অন্য কারোর খোঁজ তার না রাখলেও চলে । আর শুধু ওকেই দোষারোপ করা কেন? ইচ্ছার তীব্রতার অভাব নিশ্চয়ই আমারও ছিলো ।

কাঁধটা শিথিল করে ছড়ানো, হাতদুটো বাতাসে দুলছে, মাথাটা নিচু করে হাটছে আপনমনে । হিসাব মেলে না । সকালের তাজা রোদ, সামনের উত্তাল আবেগ আর মানুষের চঞ্চলতার মাঝে বন্ধুর এই আনমনা হতাশ মূর্তি বড়ই বেমানান, চোখে খট করে বেঁধার মতো । আমাকে দেখতে পায় কিনা দেখতে রাস্তারর ফুটপাতের উপর দাড়িয়ে গেলাম । আমার একেবারে গা ঘেষে চলে গেলো, তবুও দেখলো না! পিছন থেকে আমিই এবার চিৎকার করে ডাক দেই ।

তারপর একটা গালি দিয়ে একেবারে টান দিয়ে এনে বুকে জড়িয়ে ধরা । ছোটবেলার স্কুলের বন্ধুদের বেলায় এই এক সুবিধা । এটা একেবারে মন থেকে এমনিতেই চলে আসে । এমনটা কলেজের খুব বেশী বন্ধুর সাথে করা যায় না আর তারও পরের প্রায় পর্যায়ের সঙ্গীদের অধিকাংশকে বোধহয় কেবল পরিচিতর কাতারেই ফেলা উচিত, যাদের সাথে ফর্মাল হ্যান্ডশেক করা যায় এবং পড়াশোনা সংক্রান্ত জরুরী ব্যাপারে কথা বলা যায় । যাই হোক, সে অন্য ব্যাপার; বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছুও না । আমার বহুদিন পরে দেখা হওয়া হাসি - খুশি উচ্ছ্বল বন্ধুর আজ অনেক বেশী মন খারাপ সেটাই ভাববার বিষয় । দু'জন দেয়ালে পা ঝুলিয়ে বসে গল্প করলাম, একসাথে হাটলাম । তবুও যেন তার মনের মেঘ কাটে না । স্কুলের বন্ধুদের সাথে রাখঢাক বা ভদ্রতার নিয়ম নেই । তাই দুম করেই জিজ্ঞেস করে ফেলি,

- ওই শালা এমন ঝিম মেরে আছস কেন? ছ্যাঁক খাইছস নাকি?

ছ্যাঁক শব্দটা শুনে বন্ধু যেন একটু কষ্ট পেলো । কেমন আহত চোখে তাকিয়ে থাকে । বুঝলাম ঘটনা আসলেই তাই এবং খুব সম্প্রতিই ঘটেছে ঘটনাটা । মন খারাপের মাঝে আমার কথাটা গায়ে লেগেছে সেজন্যেই । বেঁফাস প্রশ্নটা করে আমারও একটু মন খারাপ হয় । ক্ষতিপূরণ হিসেবে খাবো না, খাবো না বলার পরও জোর করে ধরে নিয়ে গেলাম টিএসসির চায়ের দোকানগুলোর একটাতে । দুইটা ওভালটিন চা অর্ডার করি । দোকানদারকে মামা বলে ডাকি, মজা করে বললাম মামা চা এমন মজা করে বানাবেন যেন খেয়ে আমার বন্ধুর মন ভালো হয়ে যায় । অনেকদিন পর আজ দেখা হলো ।

আমার কথা শুনে বন্ধু ঠিক আগের দিনগুলোর মতোই হেসে ফেলে । তারপর হাসতে হাসতেই আমাকে সবার সামনেই অদ্ভুত রকমের সিরিয়াস একটা প্রশ্ন করে বসে ।

- আচ্ছা দোস্ত, এই প্রেম-ভালোবাসা জিনিসটা আসলে কি একটু বলতো ।

অস্বস্তিকর জানতে চাওয়া । এই ধরনের কৌতূহল একা থাকলেও মেটানো দুরুহ ব্যাপার, আর এখন তো দাড়িয়ে আছি অনেক মানুষের সামনে । পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে হাতে নিতে নিতে একটু সময় নিয়ে নিজেকে একটু গোছালাম । ঠিক করলাম অস্বস্তিকর প্রশ্নটার জবাব আমি দেবো । এবং সেটা দেওয়ার মতো করেই ।

- অনেক ভাবেই তো বলা যায় । থিওরিও আছে অসংখ্য । তুই কিরকম সোর্স থেকে শুনতে চাস? হুমায়ুন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ, ডিকশনারি, ইংলিশ সিনেমা ..... নাকি আমি কেমন ভাবি তেমন?
- হুমায়ুন আহমেদের নকশা থিউরি আমি জানি । তোরটাই বল শুনি ।
- হুমম্..... জবাবটা একটু ঘুরিয়ে দেই । ধর তুই কোন একটা মানুষের সাথে সারাদিন থাকলি, অনেক ঘুরলি, গল্প করলি । সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবি । দুজনের রাস্তা একটা মোড় থেকে দুই দিকে । মোড়ে দাড়িয়ে বিদায় নিয়ে দু'জন দু'দিকে হাটা ধরলি । দু'জনের আলাদা হাটতে থাকার পর ঐ মানুষটা যদি পিছু ফিরে তোর দিকে একবার হলেও তাকায় তাহলে আমি বলবো সে তোকে ভালোবাসে । কারণ আমার কাছে এই পিছুটানটা, সবসময় একসাথে থাকতে চাওয়াটাই ভালোবাসা মনে হয় ।

জবাব দিয়ে অস্বস্তি কাটাতে নিঃশ্বাস নিতে থামি । খুব একটা আস্তে বলিনি । তাই দেখা গেলো পাশের দোকানে চা খেতে আসা শাড়ি পরা শ্যামলা এক মেয়ে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে আর তার সাথের ছেলেটা চায়ে চুমুক দিতে দিতে হাসছে মিটিমিটি । আমার জবাব শুনে বন্ধু কি যেন একটু ভাবে আপনমনে । স্মৃতি হাতড়ে হিসাব মেলায় যেন, হিসাব মেলে না । মুচকি হাসে একটু । তারপর জানতে চায় আরো এক প্রশ্নের জবাব ।

ওভাবে আপনভাবে আমার দিকে কি কেউ পিছু ফিরে তাকায়?

ততক্ষনে আমাদের দোকানদার মামার চা বানানো শেষ । ডাক দিয়ে দু'জনের হাতে কাপ ধরিয়ে দেয় । সুন্দর ধোঁয়া উঠছে কাপ থেকে, সাথে বেশ মিষ্টি একটা গন্ধ । এসবের ফাঁক গলিয়ে বন্ধু আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । আমি তার প্রশ্নের জবাব দেই না, কারণ সব প্রশ্নের জবাব দিতে নেই । চায়ে চুমুক দিয়ে দৃষ্টি মেলে দেই অন্য কোথাও । সকাল রোদটা হঠাৎ একটু বিষন্ন হয়ে যায় কেন যেন । চোখ পড়ে রাস্তার ওপাশের সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ফুটপাথের উপরের ইলেকট্রিসিটির তারে ভাস্কর্য হয়ে বসে থাকা একটা পাখির উপর । শালিক বোধহয়, দূর থেকে ঠিক স্পষ্ট বোঝা যায় না ।

আমি সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেবল মনে মনে একবার বলি, পাখি ..... আমার একলা পাখি ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×