somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনার ছেলেদের চরিত্র - ফুলের মত পবিত্র

২৩ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের
কাছে তিন হাজার অস্ত্র

চাঁদাবাজিতে পুলিশি 'মদদ'

ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে শতাধিক দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধারের পর গত দেড় মাসেও কোনো সন্ত্রাসী বা ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফলে কাটেনি সাধারণ ছাত্রদের আতঙ্ক। বিভিন্ন সূত্র মতে, কলেজের বিভিন্ন হলে এখনো বিপুল অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে এবং এর সংখ্যা হবে আনুমানিক তিন হাজার। এই পরিস্থিতিতেই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে এবং এ নিয়ে রয়েছে একাধিক গ্রুপের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। এ থেকে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না গোয়েন্দারা।
বিভিন্ন সূত্র মতে, ঢাকা কলেজের সাতটি ছাত্রাবাসের মধ্যে ছয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রলীগের ঢাকা কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম টিটো ও তার অনুসারী ক্যাডাররা। আরেকটি ছাত্রাবাস ছাত্রলীগ নেতা আল মাহমুদ সরকার তারেক ও তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ কাজে সহযোগিতা করছেন নিউ মার্কেট থানার এসআই মিজান।
এসব নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমণ্ডি বিভাগের উপকমিশনার নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে দেশি-বিদেশি শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঢাকা কলেজের ছাত্রনেতাদের অনেকের সঙ্গে বহিরাগতদের সুসম্পর্ক থাকার অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহিরাগতদের হাত ধরে ক্যাম্পাসে অস্ত্র ঢোকে। এসব অস্ত্রের সন্ধানে গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি নুরুল ইসলাম বলেন, ক্যাডারদের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ সত্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, টিটো নিয়ন্ত্রিত ছয়টি হলের বিভিন্ন কক্ষে ৪০০-৫০০ ককটেল, প্রায় দুই হাজার রামদা, চাপাতি, চায়নিজ ছুরি, হাতকুড়াল, রামদাসহ দেশি অস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া পিস্তল, রিভলবার, পাইপগানও রয়েছে। সূত্র মতে, বর্তমান সরকারের তিন বছরে ছোট-বড় সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের কোন্দলে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
কোনো কোনো ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন না ছাত্রলীগ নেতা টিটোও। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনেকেই চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁরা সংখ্যায় অনেক কম। এ ধরনের বেশির ভাগ ঘটনায় ছাত্রদলসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা জড়িত। টিটো দাবি করেন, ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্রদল ও শিবিরের কিছু ক্যাডারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ছাত্রদলের সাতজনকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে তিনিসহ তাঁর অনুসারীদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে টিটো বলেন, এসব অপপ্রচার। তিনি যোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে চলছিল। ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি সব দেখাশোনা করছে। টিটো বলেন, 'সম্প্রতি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে কিছুটা অস্তিরতা রয়েছে। তবে নতুন কমিটি আসার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে।'
ছাত্রলীগ নেতা তারেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ক্যাম্পাসে যত রকম গোলাগুলি, টেন্ডারবাজি, হলের অস্ত্র মজুদ রাখা সবই টিটো গ্রুপের কাজ। ক্যাম্পাসের রাজনীতি করতে গেলেই টিটো হস্তক্ষেপ করে।
এদিকে আশপাশের এলাকার ফুটপাতসহ বিপণিবিতানগুলোর ব্যবসায়ীরাও ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হয়রানির অভিযোগ করেন কালের কণ্ঠের কাছে। একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এই ক্যাডারদের সঙ্গে নিউ মার্কেট থানার এসআই মিজানের রয়েছে অর্থ ভাগাভাগির সম্পর্ক।
ঢাকা কলেজ সংলগ্ন একটি পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করেন অভিযুক্ত এসআই মিজান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে তারেক ও দুটি গ্রুপের হাতে অস্ত্রশস্ত্র আছে এবং তারা নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আরেকটি গ্রুপ বর্তমানে কোণঠাসা।
ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগ সম্পর্কে এসআই মিজান বলেন, 'আমাকে টিটু গ্রুপের সহযোগী বলা হলেও এটা সত্য নয়। আমি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য মাঝেমধ্যে অভিযান চালাই, অস্ত্র উদ্ধার করি। এ জন্য টিটুর বিরোধী গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়।' চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের ছেলেরাই এসব করে। পুলিশ এতে জড়িত নয়। চাঁদাবাজির ভাগ পাওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজের সাতটি ছাত্রাবাসে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ক্যাডারদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। মিছিল, মিটিং থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে অস্ত্রধারীরা যা বলবে তা মেনে নিয়েই হলে থাকতে হচ্ছে ছাত্রদের। অন্যথায় তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে হল থেকে বিতাড়ন করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষকরাও ক্যাডারদের ভয়ে তটস্থ থাকেন। কোনো ধরনের প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে গেলে ক্যাডাররা তাঁদের হুমকি দেয়।
জানা যায়, ঢাকা কলেজের ছাত্রনেতাদের আয়ের বড় একটি অংশ টেন্ডার ও চাঁদাবাজি। কলেজের পাশে নায়েম হলের তিন কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে গত মাসে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে টেন্ডারটি হাতিয়ে নেয় টিটো গ্রুপ। কলেজের সামনের পেট্রলপাম্পের পাশে একটি খুপরি ঘর আছে। সেখানে বসে আবদুস সামাদ নামের এক ব্যক্তি ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা ওঠান পুলিশ ও ক্যাডারদের নামে। দিনের বেলা সামাদ কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি চায়ের দোকানে বসেন। সন্ধ্যার পর চলে চাঁদাবাজি। এসআই মিজান তাঁকে চাঁদার টাকা ওঠাতে সহযোগিতা করেন।
অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে এসআই মিজান বলেন, 'আগ্নেয়াস্ত্র থাকার খবর পেয়েই আমরা অভিযান চালাই। কিন্তু অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে সম্ভবত সরিয়ে ফেলা হয়।'
গত মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতের এক অভিযানে শতাধিক দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধারের পরও সহিংসতা থেমে নেই। অস্ত্র উদ্ধারের পর ঢাকা কলেজের সামনে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে ক্যাডাররা। ওই রাতে ঢাকা কলেজের ভেতরে এক সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়। এসআই মিজান এ ব্যাপারে বলেন, এই দুই ঘটনার পর পুলিশ ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে অভিযান চালালেও কাউকে ধরতে পারেনি। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় মামলা করে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

তথ্যসুত্র

এই পোস্টটি ও দেখবেন কাজে লাগতে পারে
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×