somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাধের রাজনীতি!!!

২২ শে জুন, ২০১২ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার’ শিরোনামে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দেশপ্রেমিক যুব শক্তি’ আয়োজিত এক সেমিনারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংবিধান পরিপন্থী।’ খবরটি ১২ মে ২০১১ তারিখ বৃহস্পতিবার ইসলামী টিভিতে প্রচার করা হয়। পরদিন ১৩ মে ২০১১ দৈনিক আমাদের সময়ে খবরটি প্রকাশিত হয়। এই অনুষ্ঠানে জনাব মওদুদ আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জনাব মওদুদ যে সংগঠনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ওই সংগঠনটি কাদের এবং কারা এই সংগঠনের জš§দাতা সংগঠক, আমি সুনির্দিষ্টভাবে জানি না। তবে অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, সংগঠনটি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির, রাজাকার, আলবদর, আলসামসদের ঔরসে জš§। আর জনাব মওদুদ যে লোকটির পাশে বসা ছিলেন, তার নাম শফিউল আলম প্রধান। যাকে আমরা সাত খুনের ফাঁসির আসামি বলেই জানি। তার একটি রাজনৈতিক দলও আছে। জাগপা। তিনি এই দলের প্রধানও বটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের সাতজন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে এই শফিউল আলম প্রধান। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ছিলেন। যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত এই খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার আদেশ দেয়। জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করলে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, ‘যে সাতজন নিষ্পাপ ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে, কেবল তাদের মাতা-পিতাই পারেন ক্ষমা করতে। আমি ক্ষমা করার কোনো অধিকার রাখি না।’ কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ওই নিহত ছাত্রদের পিতা-মাতা বা রাষ্ট্র ক্ষমা না করলেও ’৭৫-এর পর ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়াউর রহমান এই খুনিকে, জেলে বন্দী জামায়াতের খুনিদের সঙ্গে মুক্ত করে দেন। কথাগুলো বললাম এ জন্য যে নতুন প্রজšে§র ছেলেমেয়েদের সত্য জানা দরকার। তাদের জানা দরকার, কে এই শফিউল আলম প্রধান, যিনি প্রায়শই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আজ যার পাশে বসেন, মওদুদ আহমদ মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত-আলবদর-রাজাকারদের হাতে নিহত শহীদদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। অবশ্য বিএনপির জš§ যেমন হত্যা, ক্যু এবং খুন-খারাবির মধ্য দিয়ে, তেমনি পতনও হয়েছে হত্যা-খুন, লুটপাট গুম আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মানুষ বিএনপির আমলেই পাকিস্তানে তৈরি আর্জেস গ্রেনেড দেখেছে। এই গ্রেনেড মেরে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীকে হত্যা করতে দেখেছে। মওদুদ বলেছেন, আজ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে সুনির্দিষ্ট করে বলুন। আজ দেশের মানুষ অত বোকা নয় যে যা বলবেন বিশ্বাস করবে। জামায়াত-শিবিরের গণহত্যার পক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ অবস্থান নেবে, বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তবে হ্যাঁ, একসময় পাকিস্তানিদের ছত্রচ্ছায়ায় জামায়াতের খুনিরা সৌদি আরবকে ভুল বুঝিয়ে নানাভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছে এবং এই ডাকাতরা সেই সব টাকা মেরে দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলেছে। সেটা আমাদের জানা। মসজিদ, মাদ্রাসার নামে টাকা সাহায্য এনে মেরে দিয়েছে, এ কথা গোপন নেই। তবে জামায়াত বিএনপি অবিরাম চেষ্টা করে চলেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য। বিশেষত, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, এ কথা বলা যায়। তাই সৌদি কূটনীতিক খুনের বিষয়টি সেই আলোকেই তদন্ত করার প্রয়োজন আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। তবে জনাব মওদুদ এবং তার দল বিএনপি এবং পাকিস্তানি এজেন্টরা যে নাখোশ, সে কথা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। মওদুদ সাহেবদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যেসব স্বাধীনতাবিরোধী জড়ো হয়ে বিএনপির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে, তারা হালে পানি পাচ্ছে না। তাই দেশে-বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে বিচার না করে। কিন্তু উপায় নেই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে কথা দিয়েছে, গণমানুষের সঙ্গে ওয়াদা করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। আমরা এই বিচারের আশায় ভোট দিয়েছি। সুতরাং এখান থেকে সরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। আর একটা কথা, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ, আমি ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধে আমার পিতা এবং একমাত্র বড় ভাইকে হারিয়েছি। এমনিভাবে এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে এবং ২ লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে নিয়ে কাউকে আর ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। খুনি, রাজাকার-আলবদর, আলসামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে আর কোনো দিন বাংলাদেশের পতাকা উড়বে নাÑএটাই হোক আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধার অঙ্গীকার।
মোহাম্মদ সেতাবউদ্দিন :
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার। তথ্যসূত্র: সাপ্তাহিক কাগজ, ইস্যু-জুন ২০১২।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×