somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রভাবশালী খেলাপিদের গ্যাসলাইন কাটা হয় না,শুধু আমাদের মতো আবুল পাবলিকের লাইন কাটা হয়।

২২ শে জুন, ২০১২ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্যাস বিল বাবদ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে তিতাসের পাওনা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। বিলখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় না। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ঘটছে এর উল্টো।সরকারি বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী বেশ কিছু গ্যাস গ্রাহক রয়েছেন, যাঁদের কাছে কোটি কোটি টাকা বিল বকেয়া থাকা সত্ত্বেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। সমাজে এসব গ্রাহকের রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব থাকায় তাঁদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় না বলে অধিদপ্তরের অভিমত।ওই সূত্র জানায়, এ ছাড়া একশ্রেণীর গ্রাহক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করে সংযোগ বহাল রাখেন। যেসব গ্রাহক এর কোনো শ্রেণীতেই (ক্যাটাগরি) পড়েন না, অর্থাৎ সাধারণ নিরীহ গ্রাহক, তাঁরা সংযোগ বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে কখনো রেহাই পান না।
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিলখেলাপি গ্রাহক হচ্ছে বেক্সিমকো গ্রুপ। এই গ্রুপের নয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৫৮ লাখ ১১ হাজার ১৪৫ টাকা (গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত)। এই হিসাবের পর আরও প্রায় দুই মাস চলে গেছে। ফলে বকেয়ার পরিমাণও বেড়েছে।
তিতাসের হিসাব থেকে দেখা যায়, বেক্সিমকো গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মাসের বিল বকেয়া আছে। এর মধ্যে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ) উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাসের বিলও রয়েছে। সরকার ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভর্তুকিমূল্যে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।
এই বিল পরিশোধের জন্য ৬ জুন তিতাসের পক্ষ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের। এই বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা বিলগুলো পরিশোধ করে দেবেন।
দীর্ঘদিন বিল পরিশোধ না করেও যাঁর প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি, এমন আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিল না দেওয়া তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে লোটাস কামাল নিটওয়্যার লিমিটেড, সিএমসি কামাল টেক্সটাইল লিমিটেড ও এল কে ইউনিটেক্স লিমিটেড। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তিতাসের বকেয়া রয়েছে যথাক্রমে ১৪, ১১ ও ১২ মাসের বিল। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট বকেয়া টাকার পরিমাণ তিন কোটি ৬১ লাখ ৯৫ হাজার। এখন তা বেড়ে পাঁচ কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে বলে তিতাস সূত্র জানায়। মুস্তফা কামাল সরকারদলীয় সাংসদ। দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া আর কে ফেব্রিকস এবং আর কে কটন স্পিনিং মিলস নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে (একই মালিকানার) বিল বকেয়া পড়েছে যথাক্রমে ১৯ ও ২৯ মাসের। মোট টাকার পরিমাণ তিন কোটি ৪২ লাখ ছয় হাজার টাকা।
একই মালিকানার মুন্নু সিরামিকস, মুন্নু বোন চায়না ও মুন্নু পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে বকেয়া পড়েছে তিন কোটি ২৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
কুশিয়ারা কম্পোজিট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া প্রায় এক বছরের, মোট তিন কোটি ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
একই মালিকানার বিশ্বাস গার্মেন্টস এবং বিশ্বাস সিনথেটিকসের কাছে প্রায় ছয় মাসে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এক কোটি টাকার কাছাকাছি পাওনা রয়েছে আরও শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে।
চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) গতকাল পর্যন্ত তিতাস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মোট নয় হাজার ৮১৫টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে (পরে বকেয়া পরিশোধ করে এদের প্রায় সবাই পুনঃসংযোগ নিয়েছে)। এর মধ্যে শিল্প ১৬১টি, ক্যাপটিভ বিদ্যুতের জেনারেটর ২৫টি, সিএনজি স্টেশন পাঁচটি এবং বাকি সব আবাসিক গ্রাহক।
তিতাসের নথিপত্র থেকে জানা যায়, অনেক কম বকেয়া থাকার পরও এসব শিল্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু যাদের বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি, তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না। এর কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ততটা সহজ নয়।
তিতাসের বিতরণ এলাকায় স্থাপিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা। সরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বকেয়া পড়েছে প্রায় ১৯৭ কোটি। সার কারখানার কাছে ১১৯ কোটি টাকার মতো।
অপচয়ও ব্যাপক: শুধু যে বিল বকেয়া থাকে তা নয়, এসব প্রভাবশালী গ্রাহকের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের অপচয়ও হচ্ছে ব্যাপকভাবে। তিতাস গ্যাসের হিসাব অনুযায়ী, তাদের আওতাধীন এলাকায় শিল্পের বয়লার অদক্ষ হওয়ায় প্রতিদিন গ্যাসের অপচয় হচ্ছে ২৫ কোটি (২৫০ মিলিয়ন) ঘনফুট। এটি দেশের বর্তমান চাহিদার তুলনায় মোট ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি। কিছু অর্থ ব্যয়ে বয়লারগুলো জ্বালানিদক্ষ করলেই বর্তমানে যত গ্রাহক নতুন গ্যাস সংযোগ চাইছেন, তাঁদের সবাইকে দেওয়া সম্ভব।
সার কারখানা এবং সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রেও গ্যাসের মারাত্মক অপচয় হচ্ছে। সাধারণভাবে গ্যাসভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার ফ্যাক্টর যেখানে অন্তত ৪৫ শতাংশ হওয়ার কথা, সেখানে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার ফ্যাক্টর ৩০ শতাংশেরও নিচে। ফলে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পুড়িয়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, তা করতে গ্যাস পোড়াতে হচ্ছে ১৫ কোটি ঘনফুট। সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য অনেক কথা বললেও এসব অপচয় বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×