somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৯৯% রড ও স্টিল নিম্নমানের

২১ শে জুন, ২০১২ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে উত্পাদিত রড ও স্টিলের প্রায় পুরোটাই নিম্নমানের। দাম কম হওয়ায় বাজারে নিম্নমানের রডের চাহিদাই বেশি। এতে ইমারত অবকাঠামোর স্থায়িত্ব যেমন কমছে, তেমনি ভূমিকম্পে ক্ষতির
ঝুঁকিও বাড়ছে।
ভার সহ্য করার ক্ষমতার পাশাপাশি ওজন কতটা কম, তার ওপর নির্ভর করে রডের গুণগত মান। এ গুণগত মান নির্ণয়ের একক হলো মেগা প্যাসকেল (এমপিএ)। পশ্চিমা দেশগুলোয় সাধারণত ১৩০ থেকে ১৮০ এমপিএ ক্ষমতাসম্পন্ন রড ব্যবহার করা হয়। উন্নয়নশীল দেশে ১০০ এমপিএর রড ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশে উত্পাদিত অধিকাংশ রডই ৫০ এমপিএর বেশি নয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ধাতব ও ধাতব প্রকৌশল বিভাগের (এমএমই) এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে রড ও স্টিল উত্পাদন প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করা হয় না যথাযথ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির অভাবের পাশাপাশি অতি মুনাফার লোভে কাঁচামাল মেল্ট না করেই রড ও স্টিল তৈরি করা হয়। অবশ্য দু-একটি প্রতিষ্ঠান উত্পাদন প্রক্রিয়া কিছুটা উন্নীত করলেও তা আন্তর্জাতিক মানের নয়।
গবেষণা থেকে জানা যায়, উন্নত মানের স্টিল ও রড তৈরিতে প্রয়োজন— কন্টিনিউয়াস কাস্টিং মেশিন, ইন হাউস অপটিমাম ইমিশন স্পেক্ট্রামিটার (ওইএস), ইন্ডাকশন ফার্নেস ও উন্নত মানের স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড। পাশাপাশি উত্পাদন প্রক্রিয়ায় রিফাইনিং, ডিঅক্সিডাইজেশন, ডিগ্যাসিং ও অ্যালয় এডিশন— এ চারটি ধাপ নিয়মানুযায়ী যথাযথভাবে অনুসরণ করলে কেবল দেশে উত্পাদিত স্টিলের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছবে।
দেশে প্রায় ৩৫০টি রি-রোলিং ও ১০০টিরও বেশি স্টিল মিল রয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম, কেএসআরএম, বসুন্ধরা, বায়েজিদ, জিপিএইচ, রহিম স্টিল মিলসহ সর্বোচ্চ ১০টি প্রতিষ্ঠান উত্পাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের ৫০-৭০ শতাংশ অর্জন করতে পারছে। এর দু-একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান ৭০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, উন্নত বিশ্বে ৫০ বছর মেয়াদি বাড়ি তৈরি করলে তা টেকে ১০০ বছরের বেশি। অথচ দেশে যদি একই মেয়াদের বাড়ি নির্মাণ করা হয়, তাহলে তা অর্ধেক মেয়াদেই ধ্বংস হতে শুরু করে। এর পেছনে অন্যসব কারণের মধ্যে নিম্নমানের রডের ভূমিকাই বেশি।
রড ও স্টিল উত্পাদনে কাঁচামাল হিসেবে জাহাজ ভাঙা ও দেশীয় বিভিন্ন শিল্পের স্ক্র্যাপ ব্যবহার হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্ক্র্যাপ আমদানিও করা হয়। উত্পাদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে তিনটি পদ্ধতি। প্রথমত. মেল্টিং পদ্ধতিতে স্ক্র্যাপগুলো মেল্ট করার পর কাস্টিং বিলেট তৈরির মাধ্যমে সবচেয়ে উন্নত মানের রড তৈরি। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশের গুটিকয় প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয়ত. ইনগটস পদ্ধতিতে স্ক্র্যাপ রিফাইনিং ছাড়াই মাঝারি মানের রড ও বার তৈরি। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তৃতীয়ত. আমদানি করা বিলেট বা স্ক্র্যাপ সরাসরি হট রোলিং করে নিম্নমানের রড তৈরি। দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এ পদ্ধতির অনুসারী। ইনগটস ও স্ক্র্যাপ থেকে সরাসরি প্রস্তুত করা রড নির্মাণকাজে ব্যবহার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
উত্পাদন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বিএসআরএমের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত জানান, একটা সময় পর্যন্ত দেশে স্ক্র্যাপ থেকে সরাসরি রড উত্পাদন হতো। তা পরিবর্তনে এগিয়ে আসে বিএসআরএম। দেশের উন্নত অবকাঠামোয় ব্যবহারোপযোগী ও রফতানিযোগ্য রড উত্পাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। উন্নত মানের রড উত্পাদনের পুরোধা হিসেবে এর মানোন্নয়নে কাজ করবে বিএসআরএম।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, মেল্টিং প্রক্রিয়ায় বিলেট তৈরি করে এক টন রড উত্পাদনে খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার, ইনগটস প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার এবং হট রোলিং পদ্ধতিতে ৭-৮ হাজার টাকা।
দেশে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান অটোমেটেড বিলেট ও ২০টি সেমি-অটোমেটেড প্রতিষ্ঠান ইনগটস পদ্ধতি অনুসরণ করে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হট রোলিং পদ্ধতিতে রড উত্পাদন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরচ কমাতেই প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত মানের রড তৈরি করছে না।
এ বিষয়ে শাহরিয়ার স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এসকে মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, দাম কম হওয়ায় নিম্নমানের রডের চাহিদা বেশি। বাড়তি চাহিদার সুযোগটিই নিচ্ছে দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। ফলে যারা উন্নত মানের রড উত্পাদন করতে চায়, তারা দামের কারণে পেরে ওঠে না। এ জন্য উত্পাদনকারীর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হতে হবে।
দেশে বছরে উন্নত ও স্বল্পোন্নত রডের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টন। ৪০ লাখ টনই এখন দেশে তৈরি হলেও উন্নত মানের রডের পরিমাণ খুবই কম। এসব পণ্যের গুণগত মান তদারক করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)।
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এ কে ফজলুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের শিল্পোন্নয়নসহ অবকাঠামগত উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে স্টিল ও রি-রোলিং মিলের উত্পাদিত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন জরুরি। আর তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারখানা তদারকি, ল্যাব সুবিধা বাড়াতে সহযোগিতা, মানোন্নয়নে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ছাড়াও রফতানি বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে সনদ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইনস্টিটিউট (আইআইএসটি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী স্টিল উত্পাদন বাড়ছে। উত্পাদনে নেতৃত্বে দিচ্ছে এশিয়ার দুটি দেশ চীন ও জাপান। ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী স্টিল উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৪ মিলিয়ন টন, ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫২৭ মিলিয়ন টন। ওই বছর চীন ৬৯৪ মিলিয়ন টন উত্পাদন করে শীর্ষে অবস্থান করে। জাপান ১০৮ মিলিয়ন টন উত্পাদন করে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত ৭২, দক্ষিণ কোরিয়া ৬৯ ও তুরস্ক ৩৪ মিলিয়ন টন উত্পাদন করে। বাংলাদেশে পাঁচ বছর আগে উত্পাদন ৩০ লাখ টন হলেও গত বছর তা ৪০ লাখ টনে পৌঁছে।
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×