স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগটা রেখেই মাঠে যাওয়ার জন্যে রিপন দৌড় দিবে এমন সময় রিপনের মা ভাত নিয়ে হাজির।রিপন মহা বিরক্ত হয়।কারন তার দেরি হয়ে যাচ্ছে।অন্যরা হয়তো ওকে বাদ রেখেই খেলা শুরু করে দিবে।
কিন্তু মা জাতিও নাছোড়বান্দা।সন্তানদের খাওয়ার বেপারে একদম ছাড় দিতে চাননা।তার উপর রিপন একমাত্র ছেলে।জোর করে রিপনের মা কয়েকবার খাইয়ে দেয়।শেষবারের খাওয়া মুখে চিবাতে চিবাতে রিপন কলপাড়ে যায়।ওখান থেকে কোনরকমে এক ঢোক পানি খেয়েই এক দৌড়ে মাঠে যায়।
সন্ধ্যাবেলা খেলা শেষে রিপন বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুদের কাছে বলে যে আর ১মাস পরেই ওর একটা বড় খেলনা গাড়ি হবে।ঐ গাড়ি ব্যাটারীতে চলবে।সবাই আগ্রহ নিয়ে রিপনের কথা শুনে।এরপর যার যার মতো বাড়ি চলে যায়।
রিপন এবার ক্লাস থ্রি তে পড়ে।পাশের বাড়ির মাস্টারের ছেলে তপুর অনেকগুলো খেলনা গাড়ি আছে।ওগুলো দেখেই রিপনেরও একটা গাড়ি কেনার খুব ইচ্ছে হয়।রিপনের বাবা সৌদি খেকে দেশে ফিরবে ১মাস পর।তাই আগেভাগেই রিপন বাবার কাছে একটা গাড়ির আবদার করে রেখেছে।রিপনের বাবাও ছেলেকে কথা দিয়েছে যে গাড়ি নিয়ে আসবে।
হঠাত্ রিপনের ছোট ফুপুর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।রিপনের দাদা বেঁচে নেই অর রিপনের কোন চাচাও নেই।তাই বোনের বিয়ের সব খরচ রিপনের বাবাকেই দিতে হবে।তাছাড়া বাড়িতে একটা নতুন ঘরও দেয়া লাগবে।সব মিলিয়ে অনেক টাকা দরকার।বিদেশে থাকলেও রিপনের বাবার আয় খুব বেশিনা।তাছাড়া বিদেশ যাওয়ার সময় যে ঋন হয়েছিল তা এতদিন শোধ করতে হয়েছে।জমানো টাকাও নেই।টাকার অভাবের জন্যে শেষ পর্যন্ত রিপনের খেলনা গাড়ি আর আনা হয়ে উঠেনা।এই নিয়ে রিপন ওর বাবা আসার পর দুইদিন কোন কথাই বলেনি।রিপন ছোট মানুষ বলে ওর বাবা ওকে বোঝাতেও পারেনি।একমাত্র ছেলের অভিমান দেখে রিপনের বাবারও খারাপ লাগে।শেষ পর্যন্ত ছেলের মন খারাপের কাছে হার মেনে রিপনের বাবা রিপনকে নিয়ে খেলনা কিনতে শহরে আসে।সুযোগ পেয়ে রিপন বাবার কাছে আবদার করে একটা শার্ট আর একটা গেঞ্জিও কিনে।এরপর সেই শখের খেলনা গাড়িও কিনে।রিপনের খুশির বাধ ভাঙে।দুপুরে ছেলের পছন্দের পোলাও মাংস খাইয়ে বিকেলের দিকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয় রিপনের বাবা।রিপনকে বাসে বসিয়ে পান খেতে নিচে নামে রিপনের বাবা।রাস্তার এইপাশটাতে কোন দোকান নেই।রাস্তা ক্রস করে ওপাড়ে যাওয়ার সময় একটা ট্রাক এসে রিপনের বাবাকে ধাক্কা দেয়।
১বছর পরের কথা।
রিপনদের সংসারে খুব টানাটানি।
গাড়িটা অনেক আগেই বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।কারন তখন গাড়ি বিক্রির টাকাটাও অনেক টাকা।
আশেপাশের সবাই বাবার মৃত্যুর জন্যে রিপনকেই দায়ি করে।রিপন নিজেও সবসময় অপরাধবোধে ভুগে।বাবার মৃত্যুর জন্যে নিজেকে ঘৃণা করে।হয়তো সারা জীবনই এই কষ্টটা তাকে ভুগিয়েই যাবে.....।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১২ ভোর ৪:৪৩