৪৫
জরিনার ছেলে বিপু বড় হয়েছে। তাকে স্কুলে পাঠাতে হবে। বর্তমানে শহরে লেখা-পড়া নিয়ে যে প্রতিযোগিতা তাতে ভাল স্কুলে চান্স পাওয়া খুব কঠিন। বিপুকে চারজন শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হয়। একজন পড়ায় বাংলা, আরেকজন ইংরেজি, আরেকজন অংক, আরেকজন আরবি। আরবির শিক্ষক খুব সকালে এসে বিপুকে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে।
শিক্ষক বলে, ‘আউযু বিল্লাহে মিনাস শাইতনের রাজিম।’
বিপু বলে, ‘আমি এখন হাগু দিবো।’ এই বলে চেয়ার থেকে নেমে দৌড় মার কাছে।’
হাগু শেষ করে আবার পড়ার টেবিলে আসে। শিক্ষক বলে, ‘বলো, আউযু বিল্লাহে মিনাস শাইতনের রাজিম।’
বিপু বলে, ‘বললো না। আমি লায়লার সাথে খেলতে যাবো।’ এই বলে দৌড়ে আবার মার কছে। লায়লা পাশের বাড়ির তার খেলার সাথি। অবসর সময়ে তারা রান্না-বাড়া খেলে। গাছের লতা-পাতা ছিড়ে লায়লার ছোট্র এ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে রান্না চড়িয়ে দেয়। হাসুমাসু রান্না, হাসুমাসু খাওয়া।
জরিনা বিপুকে বলে, ’লেখা-পড়া শিখে তুমি গাড়িতে চড়বে, প্লেনে চড়বে, চাঁদের দেশে যাবে। দুষ্টামি করে না বাবা, হুজুরের কাছে যাও।’
বিপু বলে, ‘আমি আগে চাঁদের দেশে যাব তারপর পড়তে যাবো।’
জরিনা বলে ’বড় না হলে চাদেঁর দেশে যাওয়া যায় না।’
বিপু বলে, ’তাহলে বড় হয়ে পড়বো।’
এভাবে বাংলার স্যারও এক অক্ষর পড়াতে পারে না। ইংরেজি, অংকের স্যারেও না।
শহরের কিছু স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করাতে গেলে অবিভাবককে একটা বিশেষ পরীক্ষা দিতে হয়। সে যদি পরীক্ষায় পাস করে তবে বাচ্চা ভর্তি কনফ্রাম হয়। জরিনার জন্য দু’জন শিক্ষক নিয়োগ হলো। শিক্ষকরা একটা ফাইনাল সাজেশন করে বিশেষ বিশেষ বিষয়গুলো পড়াচ্ছে জরিনাকে। জরিনা সারাদিন তা নিয়েই ব্যস্ত।
পরীক্ষায় জরিনা ফেল, বিপু পাস কিন্তু তাতে কাজ হবে না। অবিভাবক পাস না করলে ভর্তি নেওয়া হবে না। শেষে একজন বললো, ‘টাকা ঢালেন, আপনার ছেলেকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি।’ যে বললো সে স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান।
মফিজ বললো, ‘তাহলে পরীক্ষা কি জন্য ?’
সে বললো, ‘আরে মশাই এটা আই ওয়াস। টাকা খরচ না করলে এসব স্কুলে বাচ্চা পড়ানো যায় না।’
মফিজ বললো: গরীবের বাচ্চারা তাহলে কোথায় পড়বে ?
সে বললো, ‘গরীব বাচ্চাদের লেখা-পড়ার দরকার নাই।’
মফিজ টাকা দিতে রাজি হই নাই। সে শিক্ষামন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানালো বিষয়টা। ঢাকা শহরে গরীবদের লেখা-পড়ার সুযোগ কম কিন্তু তাদের সংখ্যা অনেক। সরকার কি এসব ভর্তি বাণিজ্যে বন্ধ করবে? গরীবদের লেখা-পড়ার সুয়োগ করে দিবে ? ভর্তি নিয়ে কোন বাণিজ্য হোক এটা আমরা চাই না।
মফিজ সিদ্বান্ত নিলো ময়না বিবি তার সাথে থাকবে। যে তার জীবনের সুখ- দুংখের সাথী, তাকে কাছে না রাখলে মনে শান্তি পাবে না সে।
জরিনা প্রথম বিষয়টা মানতে চায় নাই। তাকে বুঝানো হলো, ময়না বিবি জন্যই তাদের আজ এ পর্যন্ত আসা। তাই তাকে দূরে রেখে মনে সুখ নাই। জরিনা বিষয়টাকে মেনে নিন।
ময়না বিবিকে মফিজ মিয়ার কাছে নিয়ে আসলো। টুনি আর আতাহার আলী সুখেই আছে। তাদের কোন অভাব অভিযোগ নাই।
আগের প্রশ্নের উত্তর: ৫.৫ - ৬.৫ আউন্স।