somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তাম। ক্লাসের লেকচার খুব ভালোভাবে অনুসরণ করতাম। শিক্ষকেরা যেটা বোর্ডে লিখতেন না, মুখে বলে যেতেন, সেগুলোও খাতায় টুকে রাখতাম।

২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








অনেক সময় ক্লাসে যে পদ্ধতিতে অঙ্ক বোঝানো হতো তা আমি ঠিকভাবে বুঝতে পারতাম না। হয়তো আমি একভাবে করে অভ্যস্ত আর শিক্ষকের শেখানোর পদ্ধতিটা আলাদা। সেটা নিয়ে যখন পরে বন্ধুদের কাছে বুঝতে যেতাম, অনেকেই বিরক্ত হতো। বলত, ‘তুমি তো কিছুই বোঝো না। যা বোঝো, তাও ভুল। মেয়েদের অত বুঝে কাজ নেই!’ যেন মেয়ে তাদের ধারনা ছিল আমি অঙ্ক বুঝি না। এখন সেই বন্ধুরাই বলে, ‘তুমি যে স্বীকৃতি পেয়েছো, এটা পাওয়ার যোগ্যতা শুধু তোমারই।’ একরাশ হাসি হেসে এভাবেই নিজের প্রথম হওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ডলি রানী পাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হয়েছেন তিনি। সিজিপিএ ৩.৮৪।
ডলির গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। বাবা মধুসূদন পাল পেশায় ব্যবসায়ী। মা কল্পনা পাল গৃহিণী।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের তাচ্ছিল্লই নয়, এ পর্যন্ত নানা বাধা পেরোতে হয়েছে তাঁকে। আর সেসব পাহাড় পেরোতে সাহায্য করেছেন মা।
ডলির মায়ের শখ ছিল মেয়ে গান শিখবে। হয়তো নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নের বাস্তবায়ন চেয়েছিলেন ডলির মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেটাও হয়নি। পরিবারের বাকি সদস্যরা বলেছেন, মেয়েদের এত সবে কী দরকার? স্বপ্নটা তাই অসমাপ্তই রইল।
তারপর মাধ্যমিকে পা রাখলেন। এবারও মা-ই স্বপ্ন দেখালেন। ডলি বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেন। উচ্চমাধ্যমিকেও বিজ্ঞান। আর ডলির ফলাফলের খাতায় যুক্ত হলো আরেকটি সাফল্য। পেলেন জিপিএ-৫।
ডলির স্বপ্ন ছিল ঢাকায় এসে মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। তাতেও আপত্তি। মেয়ে হয়ে এত দূরে কেন? পাশেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে পড়ো!
আবারও পাশে এসে দাঁড়ালেন মা। স্বপ্নের সিঁড়ি গড়তে মেয়েকে পাঠালেন ঢাকায়।
‘মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হই। তাই ঢাকায় এসে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগ হয়নি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিই। গণিতে চান্স পেয়ে যাই প্রথমেই।’ জানান ডলি।
গণিত বিষয়ে কেন পড়লেন প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে পড়ার সুপ্ত বাসনা তৈরি করে দিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক রবিউল ইসলাম। অঙ্কটা যে মজার বিষয় তিনিই প্রথম আমাকে বুঝিয়েছিলেন।’
ফলাফলে মায়ের অনুভূতি কেমন, জিজ্ঞেস করতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ডলি।
তারপর একটুকু থেমে বলেন, যখন আমি ডিন স্যারের কাছ থেকে স্বর্ণপদক পেলাম, তখন সেই অনুষ্ঠানে মা-বাবা দুজনেই এসেছিলেন। আমি পুরস্কার নিয়ে কাছে যেতেই মা আমায় জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন, ‘সন্তান সফল হলে মা কত খুশি হয়, বুঝবি না। মা হলে বুঝবি!’
প্রথম বর্ষে ফলাফল ছিল মোটামুটি। দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই আমি পড়াশোনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করি। তৃতীয় বর্ষে যখন প্রথম হলাম, মনে হলো আমি পারব। প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তাম। ক্লাসের লেকচার খুব ভালোভাবে অনুসরণ করতাম। শিক্ষকেরা যেটা বোর্ডে লিখতেন না, মুখে বলে যেতেন, সেগুলোও খাতায় টুকে রাখতাম। যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকেরা সাহায্য করতেন। সহপাঠীরাও অনেক সহযোগিতা করেছে পড়াশোনার ক্ষেত্রে।
ডলি রানী পাল এখন মাস্টার্সে পড়ছেন ফলিত গণিতে। তাঁর সামনের স্বপ্নটা আরও বড়।
স্বাপ্নিক ডলি জানান, ‘গণিত নিয়ে আরও উচ্চতর গবেষণা করতে চাই। এখানে এমন কিছু আছে নিশ্চয়ই যা এখনো কেউ বের করেনি। আমি এ রকম নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চাই। ইচ্ছে আছে, দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করব।
দুই ভাইবোনের মধ্যে ডলি বড়। গান আর আবৃত্তি শুনতে ভালোবাসেন। আর পড়েন গল্পের বই। সে ক্ষেত্রে সায়েন্স ফিকশনবিষয়ক বই-ই প্রথম পছন্দ।
পাঠকের মন্তব্য


Click Here
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×