somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয় আর আত্মবিশ্বাসের মধ্যে সমঝোতা করতে হবে

২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :










টম হ্যাঙ্কস বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা, লেখক ও পরিচালক। জন্ম ১৯৫৬ সালে। তিনি দুবার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, যা অস্কার নামে বহুল পরিচিত। ২০১১ সালের ২২ মে ইয়েল কলেজের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই বক্তৃতা দেন।
আজকের দিনটি শুধুই তোমাদের। প্লিজ, তোমাদের ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো বন্ধ করে ফেলো না যেন। তোমার আইফোন, আইপ্যাড, ব্ল্যাকবেরি, রেকর্ড করার যন্ত্র যেগুলো তথ্য, ছবি, কথা ছড়িয়ে দিতে পারে, সেগুলো বন্ধ করে দিয়ো না। এখান থেকে বেরিয়ে তোমরা টুইটার বা ফেসবুকে তর্কবিতর্ক করে তুলনা করতে পারবে যে আজ স্মরণীয় কিছু ঘটেছে না ঘটেনি। এমনকি এই উপদেশটাও ‘টুইট’ করতে পারো!
আমার বক্তব্যের মধ্যে একটু গানটান দিয়ে, গ্রাফিকস ‘এডিট’ করে ওয়েবে ছেড়ে দাও। এটা ‘সেনসেশনাল’ হয়ে উঠতে পারে। সেটা নিয়ে নেটে অনেক আড্ডা হতে পারে। আমাদের সব সম্ভবের এই বিশ্বে এমনটা হওয়া অসম্ভব নয়। সামনের এই বিশ্বে তোমাদের স্বাগতম। এক চাচা তাঁর ভাস্তেকে বলেছিলেন, ‘যত দিন পারো কলেজে থেকে যাও। কারণ ঠিক যেদিন তুমি এখান থেকে বের হবে, এর পরদিন থেকে জীবনের শেষ দিন অবধি তোমাকে কাজ করে যেতে হবে।’
আমি যতবারই কোনো হিসাব-নিকাশে যাই, ততবারই আমাদের আশাভরসার সঙ্গে এসে যায় আমাদের ভয়। আমি এই ‘ভয়’ শব্দটাকে নিয়ে একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। ভয় আমাদের ২০১১ সালের সবচেয়ে মানসিক বাধা। আমরা তোমাদের কলেজে প্রতিবছরই এই প্রত্যাশা করি, এটাই গড়ে দিতে চাই যে ভয় থেকে তোমরা বেরিয়ে আসো। কারণ আমরা আসলেই বহু কিছু ভয় পাই। ভয় যেন এ শতকের সবচেয়ে সস্তা একটা পণ্যতে পরিণত হয়ে গেছে। সহজে ছড়িয়ে যায় এবং সবচেয়ে দ্রুততার সঙ্গে ভয় সবকিছুকে বদলে দেয়।
অনেক আগে মার্কিন নৌকর্মকর্তা জন পল জোনস বলেছিলেন, ভয়কে যদি বাড়তে দেওয়া যায় তাহলে সেটা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
আমি ভয়কে দেখি ভীতিপ্রদ ও স্থবির হিসেবে। আর বিশ্বাসকে সেভাবেই দেখি যা আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করে রেখেছি। ভয় প্রতিদিন আমাদের মুখের ওপর চিৎকার করে। বিশ্বাসকে তাই গতিশীল হতে হবে আমাদের চেষ্টায় যার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন আয়নায় আমরা নিজেদের দেখব আত্মবিশ্বাসীরূপে। তাই কে হবে আমার গুরু, ভয় না বিশ্বাস?
তিনজনকে খুঁজে পাওয়া গেল যারা ভয়ের চোটে রাতে ঘুমাতে পারে না। এটা অবশ্যই একটা গল্প। মনের ভয় দূর করতে এই তিনজন তীর্থপথে রওনা হলো কোনো এক জ্ঞানীর খোঁজে। অনেক দূরে, পাহাড়ের গুহায় জ্ঞানীর খোঁজ পাওয়া গেল। সেখানে কোনো গাছ হয় না, কোনো প্রাণী বাস করে না, এমনকি পোকামাকড়ও না। তিনজন পৌঁছে কাতরভাবে শরণাপন্ন হলো জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে। প্রথমজন বলল, ‘আমাকে রক্ষা করো, ভয় আমাকে পঙ্গু করে ফেলল!’ জ্ঞানী ব্যক্তি জানতে চাইলেন, ‘কী তোমার ভয়ের কারণ?’ সে উত্তর দিল, ‘মৃত্যু। কখন যে সে আমার জন্য আসবে!’ জ্ঞানী ব্যক্তি উপদেশ দিলেন, ‘তোমার ভয়কে দূর করতে দাও আমাকে। মৃত্যু ততক্ষণ পর্যন্ত আসবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তাকে আলিঙ্গন না করছ। তুমি যখনই এই সত্য ধারণ করবে, মৃত্যু আর তোমাকে ভয় দেখাবে না।’
দ্বিতীয় ব্যক্তি তার ভয়ের কারণ জানাল, ‘অপরিচিত ব্যক্তি, আমার নতুন প্রতিবেশী, তারা আমার থেকে আলাদা।’ জ্ঞানী উত্তর দিলেন, ‘ভেবো না আমি তোমার এই ভয় কাটিয়ে দেব। বাড়ি গিয়ে একটি কেক বানিয়ে তোমার প্রতিবেশীর কাছে নিয়ে যাও। তাদের শিশুদের নতুন খেলনা উপহার দাও। তাদের গানবাজনায় যোগ দাও, তাদের জীবনধারাকে জানতে শেখো। তুমি তাদের সঙ্গে এক হয়ে যাবে, বন্ধু হবে। আর তোমার ভয় দূর হবে।’
তৃতীয় ব্যক্তি বলল, ‘প্রতিরাতে ঘুমাতে গেলে মনে হয় মাকড়সা সিলিং বেয়ে আমার মাংসের জন্য নেমে আসছে।’ জ্ঞানী ব্যক্তি খেঁকিয়ে বললেন, ‘তোমার কী ধারণা, আমি এত ওপরে এই পাহাড়ের গুহায় কী করছি যেখানে কোনো প্রাণী বাস করে না? এমনকি মাকড়সাও না?’
ভয় আমাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর সবচেয়ে খারাপ দিকটা নিয়ে নেয় আর আমরা সেটা সম্ভব হতেও দিই।
আমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করি যেখানে সবাই এমন বহু জিনিসে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে যেগুলোর অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। জাতিগত বৈচিত্র্য আমরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করি না, যা হয়তো আমাদের মধ্যে একতা সৃষ্টি করতে পারত। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে তুমি কি ভয়কে শক্তিশালী হতে উসকে দেবে, নাকি আত্মবিশ্বাসকে একটা সুযোগ দেবে? তোমাকে ঠিক করতে হবে কোনটিকে হতে দেবে। ইয়েল কলেজে আজকের দিনে তোমার সব অর্জন, বুদ্ধিমত্তা এবং ক্ষমতা দিয়ে তোমরা জানো তোমাদের কী করতে হবে।
সামনের দিনগুলোয় সারা পৃথিবীর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যোদ্ধারা দেশে ফিরতে থাকবে। ভয়ংকর যুদ্ধের ময়দানে তাদের আত্মবিশ্বাস ভয়ে পরিণত হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হবে সেই ভয় দূর করা তাদের চোখ থেকে। তাদের শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা জানতে পারে। কাজ দিতে হবে যাতে তারা যোদ্ধা থেকে একজন সচেতন নাগরিক হতে পারে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বুনে দিয়ো। বাকিটা তারা নিজেরাই করে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তো, সমাবর্তন তো এল বলে। তোমাদের দায়িত্ব শুরু হলো। কিন্তু সব সময় কাজের ক্ষেত্রটি আমাদের জন্য সুখকর হবে না। পরিশ্রম সব সময় সাফল্য না-ও এনে দিতে পারে। দিনগুলো একটির চেয়ে আরেকটিকে অসহ্য মনে হতে পারে। সমাবর্তন থেকে বাকি জীবন পর্যন্ত প্রতিদিন কাজ করে যেতে হবে। ভয় আর আত্মবিশ্বাসের মধ্যে সমঝোতা করতে হবে। ভয় তোমাকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে। আত্মবিশ্বাস তোমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোন পথে তুমি যাবে? সব সময় সামনে এগিয়ে যাও। তারপর তোমার ফল টুইটারে জানাও সারা পৃথিবীকে। ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন সবাইকে।
সূত্র: ওয়েবসাইট
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ:
শিখ্তী সানী


Click Here


আগামী দিন যা হতে যাচ্ছে ।
Click Here
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×