দুর্নীতি যখন প্রত্যাশিত
তারপর আরও প্রাণহানি, রক্তপাত, সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান, সশস্ত্র বিদ্রোহ (সামরিক বাহিনীতে ও তার বাইরে) ও গদি ওলট-পালটের মতো দুঃখজনক ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের ঐতিহ্য সৃষ্টিই হতে দেয়নি। ওইসব গণতন্ত্রহীন অবস্থাকে বিদায় দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার বার, কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে আমরা এই অবস্থায়ও যা দেখছি তাকে গণতন্ত্র বা বহুমতের বিবেক-বিবেচনাভিত্তিক চর্চা না বলে ভোটের রাজনীতি বললেই যথার্থ হয়। কারণ এই গণতন্ত্রে কেবল খোলস আছে, প্রাণ নেই। আর প্রাণ নেই বলেই এখানে অনুপস্থিত রয়েছে ন্যায়নীতি, আইনের শাসন এবং সুবিচার। এখানে সুবিচার বলতে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক এই তিন ক্ষেত্রেই আইন, বিবেচনা ও বিবেকভিত্তিক ন্যায্যতা বোঝাচ্ছি।
এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি যে প্রকট ও ব্যাপক হবে তা-ই স্বাভাবিক এবং বাংলাদেশে তেমনই হয়েছে। এদেশে এখন চলছে দুর্নীতির মাধ্যমে যারা অঢেল ধনদৌলত ও সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে তাদের টাকা ও পেশিশক্তির দ্বারা সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত শাসন। এই শক্তিমানরা এখন ভালোভাবেই দৃশ্যমান। পরিস্থিতি এমনই যে, নীতি, আইন ও সুবিচারের শাসন বা এক কথায় বাংলাদেশে সুশাসন ফেরত আসুক একথা দেশি ও বিদেশি বিশিষ্ট অথবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রতিদিনই বলে বেড়ালেও তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার লক্ষণ নেই বললেই চলে। অর্থাত্ চলমান দুঃশাসন, সন্ত্রাস আর দুর্নীতি আমাদের যে দুঃস্বপ্নের মধ্যে রেখেছে তা আজ-কাল-পরশুর মধ্যে শেষ হচ্ছে না।
এরকম গভীর হতাশার কথা বাধ্য হয়েই বলছি। যশোরের দৈনিক ‘গ্রামের কাগজ’ পত্রিকার সাংবাদিক জামালউদ্দিন সীমান্তে চোরাচালানের খবর রিপোর্ট করেছিলেন বলে চোরাচালানিরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল গত ১৫ জুন রাতে। দেশজুড়ে সাংবাদিকরা পরদিন কালো দিবস পালন করছিলেন, জামালউদ্দিন হত্যাকাণ্ডে তাতে দুঃখের আরেকটা অধ্যায় যোগ হলো। সাংবাদিক দম্পতি সারোয়ার সাগর ও মেহেরুন রুনি তাঁদের ফ্ল্যাটে যে একসঙ্গে খুন হলেন তারও কারণ তাঁদের অনুসন্ধানী তত্পরতা, একথা এখন দেশে-বিদেশে মানুষের বিশ্বাসে প্রোথিত হয়েছে। অল্প কয়েকটা দিন বিরতির পর ইদানীং আবার বেওয়ারিশ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে পথের পাশে, মাঠে, ডোবায় ও নদীতে। দেশের সুপ্রিমকোর্টের জমিতে অবস্থিত সড়ক ভবনে ঠিকাদারদের মধ্যে কাজ অনৈতিকভাবে ভাগ-বাটোয়ারা করার সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা বাজপাখির মতো হামলে পড়ে পাঁচজনকে গুলি করে চলে যাওয়ার ঘটনার দিন দুই-তিনেকের মধ্যে দেখা গেল যে, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে একটা আস্ত সেতু ধসে নদীতে পড়ে গেল। সেইসঙ্গে পানিতে ডুবে গেল তখন ব্রিজ পার হচ্ছিল যে আট-দশটা গাড়ি সেগুলো।
আরও বিস্ময়কর হলো যে, এই পুল ভেঙেপড়া নিয়ে দায়িত্বশীল মহলে কোনো উদ্বেগ দেখা গেল না। তার কারণ হলো যে, আমরা এখন ধরেই নিই যে সরকারি উদ্যোগে যা কিছু তৈরি হবে তা এভাবেই ভেঙে পড়বে। কারণ দুর্নীতি ও লুটপাটের দরুন সেগুলো ঠিকভাবে তৈরি করা হয় না। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোতে খবর বেরিয়েছে যে, দেশের বৃহত্তম এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে একটি লোকসানী কোম্পানিকে ঋণ হিসেবে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দুর্নীতি ধরা পড়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের সময়। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের ওই শাখার কয়েকজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর কোনো ব্যবস্থা অথবা টাকাটা পুনরুদ্ধার করা এসব নিয়ে কিছু শোনা যাচ্ছে না।
জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যরাও এত বড় দুর্নীতির ব্যাপারে চলমান বাজেট অধিবেশনে এ বিষয়ে সরকারের কাছে কিছু জানতে চেয়েছেন বলে শুনিনি। এই যে গত ক’দিন ধরে গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে, পথে পথে ব্যারিকেডে আগুন জ্বলছে, এর মূল কারণ হচ্ছে তাঁরা বর্তমান হারের বেতন-ভাতা বা মজুরি দিয়ে পেট চালাতে পারছেন না। একইসঙ্গে বাড়িওয়ালারা যে ভাড়া বাড়িয়েছে তা পরিশোধ করতে পারছেন না। সোজা কথা তাঁদের পেট খালি থাকছে, সেই অবস্থাতেই মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে যাচ্ছে। সরকার দেশে যে লাগামহীন মূল্যস্ফীতি ঘটতে দিয়েছে তার দরুনই খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শ্রমিকরা তাই বেতন-বৃদ্ধি চাইছেন কিন্তু মালিকরা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁদের ধন-সম্পদের বাহার তো দৃশ্যমান, কাজেই শ্রমিকরা বিশ্বাস করছেন না যে মালিকরা অসুবিধায় আছেন।
এরই মধ্যে সরকার কালোটাকা সাদা করার সহজ সুযোগ করে দিয়েছে এবং অর্থমন্ত্রী এই সুবিধাদান দেশের জন্য মঙ্গলজনক হিসেবে যুক্তি দেখাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কালোটাকা সাদা করার পক্ষে রয়েছেন। এসব দেখে একথা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, দুর্নীতি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ভিত্তি এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে যেসব ঘটনা উল্লেখ করলাম বাংলাদেশে সন্ত্রাস, অন্যায় আর দুর্নীতির প্রাত্যহিক দানবিক নৃত্যের যিকঞ্চিত উদাহরণ হিসেবে তার প্রতিটিই তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে এবং মহা দুশ্চিন্তায় ফেলে।
আমরা হয়তো তবু আশা করি যে, অন্ততপক্ষে বিচারালয় ও জাতীয় সংসদে কিছু উদ্যোগ কেউ নেবেন দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের রাস টেনে ধরতে। কিন্তু তা হচ্ছে না। বরং যা হচ্ছে তা উল্টো। জাতীয় সংসদে যা দেখা যাচ্ছে তাকে আপসকামিতা বললে যদি কেউ রাগ করেন সেজন্য তা না হয় আপাতত না-ই বললাম; কিন্তু তা যে দায় এড়িয়ে যাওয়া তা না ভেবে পারি কী করে? এই দায় এড়ানো তো অন্যান্য অন্যায় ও ভুল করার সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের রাজের কাছে মাথা হেঁট করা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারা গর্বিত বোধ করেন তারা এরকম নিষ্কর্মা হন কী করে! নাকি তাঁরাও অনেক মন্ত্রী ও তদীয় স্বজনদের মতো দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত আর সেজন্যই তাঁরাও তাঁদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য। আর বিচার বিভাগ? সে তো এক অভেদ্য দুর্গ। সেই দুর্গের প্রাকারে বসানো আছে ‘আদালত অবমাননা’ নামক কামান। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন কণ্ঠরোধকারী ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। বরং দুর্নীতিপরায়ণ বিচারকদের জেলে পাঠানো হচ্ছে সেসব দেশে। এ সম্পর্কে অদূর ভবিষ্যতে লেখার আশা রইল।
(সূত্র: আমার দেশ,১৯/০৬/১২)
Click This Link
পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম
ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট
আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ল অব অ্যাট্রাকশন
জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
চরফ্যাশন
নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।
প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?
১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন