সর্বস্তরে ঘুষ আর দুর্নীতির খাওয়া-খাওয়ি দেখে উপেন্দ্রকিশোরের ২টি ছোট গল্প হুবহু তুলে দিলাম :-
যদু যেমন ষণ্ডা ছিল, সে খেতেও পারত তেমনি। যখন সে খুব ছোট সে খুব ছিল, একদিন সে গেল এক বড়লোকের বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে। ভারি ভারি খাইয়ে সব সেখানে খেতে বসেছে, লুচি কোরমার ধুম লেগে গেছে। খাইয়েরা খুব খেতে পারাটাকে বড়ই বাহাদুরি মনে করে। তাই খাওয়া শেষে হবার সময় তারা বললে, ‘আচ্ছা, আজ কে সকলের চেয়ে বেশি খেয়েছে?’ এ কথায় কেউ বলছে, ‘আমি!’ আর কেই বলছে, ‘না আমি! ত শুনে যারা পরিবেশেন করছিল তাদের একজন বলল, ‘আজ্ঞে না; সকলের চেয়ে বেশি খেয়েছে এ ছেলেটি (মানে, যদু)।’ সে ‘এতগুলো’ লুচি আর ‘এত টুকরো’ কোরমা খেয়েছে।
সকলে তাতে ভারি আশ্চর্য হয়ে যদুকে জিজ্ঞেসা করল, ‘হ্যাঁ রে, সত্যি নাকি তুই এত খেয়েছিস?’ যদু বলল, ‘খেয়েছি বৈকি। আরো খেতে পারি!’ তা শুনে সবাই বলল, ‘বটে? আচ্ছা আন্ দেখি লুচি কোরমা, দেখি ও আর কত খেতে পারে।’ শুনেছি তখন নাকি যদু আরো এক দিস্তা (চব্বিশখানা) লুচি আর আঠার টকুরো কোরমা খেয়েছিল। সত্যি মিথ্যে ভগবান জানেন, আমার তখন জন্ম হয় নি। এত খেয়েও যে যদুর পেট ভার হয়েছিল তা মনে করো না। সে তখনি সুপারির ডালের ঘোড়া হাঁকিয়ে বাড়ি এল, এসে কালোজাম গাছে উঠে আরো অনেকগুলো কালোজাম খেল।
(এদের খাওয়া খাওয়ি কবে যে থামবে আল্লা মালুম!)
এদের পরিণতিটাও এবার পড়ুন উপেন্দ্রকিশোরের আরেকটি ছোট গল্পে :-
এ হল বহুকালের কথা। তখন ‘খাইয়ে’ বললে ভারি একটা গৌরবের কথা হত। সে সময় এক ব্রাহ্মণ এই বাহাদুরির লোভে মারাই গিয়াছিলেন। কোন বড়লোকের বাড়িতে তাঁকে মাঝে মাঝে নিমন্ত্রণ করে, তাঁর যা ইচ্ছা, যত খুশি খেতে দেওয়া হত। একদিন সেখানে খেতে বসে বললেন, ‘আজ আমি শুধু ছানা আর চিনি খাব।’ তাই তাকে এনে দেওয়া হল। তিনি তখন সাতসের ছানা চেঁছেপুছে শেষ করে, বিস্তর বাহদুরি পেয়ে, বাড়ি এসে সেই রাত্রেই পেট ফেঁপে মরা গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১২ ভোর ৬:৩০