somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামছাগল

১৯ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)

জাহিরুল মিয়ার পেটভর্তি রাগ , আর মাথা ভর্তি গোবর ! তার সদা সিরিয়াস মুখখানা যেন বাংলার পাঁচ ! সাধে কি আর ছেলেরা তাকে “ভেটকি মাছ” বলে ডাকে ?
ভেটকি মাছ দেখতে কেমন , যদিও কারো তা জানা নেই । তবে জাহিরুলের ভেটকে রাখা মুখ আর পিণ্ডি চটকে দেয়া চাহনি দেখলে তারা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে ।
দিন দিন ভেটকি মাছের রাগের মাত্রা যত বাড়ছে, বুদ্ধির মাত্রাও ব্যস্তানুপাতে ঠিক ততটাই কমছে ! ক্ষেপে গেলে আমের আঁটির মত লম্বাটে মুখখানা তার কুঁচকে একেবারে বরইয়ের বিচির সমান হয়ে যায় ! আর দাঁতে দাঁত চেপে রাখতে রাখতে ফর্সা মুখটা গাঢ় লাল থেকে নীলচে বর্ণ ধারণ করে । তখন হঠাৎ তার রাম চিৎকার কিছুক্ষণের জন্য সবার হার্ট ফেইল করিয়ে দেয় ! এমন কাউকে পাওয়া যায়নি, যে তার হাতে থাবড়া খাওয়ার মত বিরল সম্মাননা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ! এমনকি সেই বোকা-সোকা , পড়ুয়া ছেলেটাও ; যাকে সবাই ‘আঁতলা মিয়া’ বলে ডাকে ; সেও একবার বিশাল একখানা চড় খেয়ে দুইদিনের জন্য বধির হয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল । আর তাতেই আশীর্বাদ হিসেবে তার কপাল জুড়ে জেঁকে বসেছিল ভীষণ জ্বর । সুতরাং স্কুল বন্ধ । ইচ্ছামত খাও, আহ্লাদ পাও আর ঘুমাও । যাকে বলে ‘সাক্ষাত স্বর্গ’ ! অনেকেই এজন্য তাকে ‘হিংসে’ করত ।

ভেটকি মাছের বিরুদ্ধে কথা বলবে , এমন দুঃসাহস কারো নেই । কিন্তু আজ বিকেলবেলায় ঘটল অঘটন !

কদমা এসে জানাল হেডস্যার ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন । ওর আসল নাম কামরুল । কদম ছাঁট চুলের জন্য নামের এই কিঞ্চিৎ পরিবর্তন । তাছাড়া দলে থাকতে হলে সবারই ছোট , সহজে উচ্চারণযোগ্য এবং হাস্যকর একটা ডাক নাম চাই !
কদমা মিয়ার ভাগ্যটাই যেন কেমন ! যতবারই সে জন সিনার মত হেয়ার কাট দেবার বাসনা নিয়ে সেলুনে ঢুকেছে , ততবারই ফিরে এসেছে মাথায় এক বিশাল কদম নিয়ে ! কিন্তু নাম কদমা হলে কি হবে ? সারা মাথার ছোট ছোট ধারালো চুলগুলোর মত তার বুদ্ধির ধারও কম নয় । ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রস্তাবটা সে-ই দিয়েছিল স্যারকে ।
খবরটা শুনে সবাইকেই খুব খুশি খুশি দেখাল । ভেটকি মাছও গম্ভির গলায় ঘোষণা করল,
“ তাহলে তো আমাদের জার্সি বানিয়ে ফেলা উচিত !”
নেতার মত নির্দেশ দেয়া শুরু হল তার ; জার্সি কেমন হবে – কি রঙের হবে – সস্তা কাপড় চলবে না – মাঠে কার অবস্থান কোথায় হবে ইত্যাদি । ভাবখানা এমন, যেন এক সুপরিচালক রাখাল বালকের নেতৃত্বের অপেক্ষায় কতগুলো হাবা ভেড়ার দল মুখে বুড়ো আঙুল পুরে বসেছিল !
হুট করে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য কিছু রুলসও দাঁড় করিয়ে ফেলল সে । এর মধ্যে প্রথম শর্ত হল, চাঁদা ! তাও আবার এক হাজার টাকা !
কলিমউদ্দিন ওরফে কলা আপত্তি তুলে বসল,
“ এত টাকা কিভাবে সবাই দেবে ?”
- তাইলে খেলিস না ! আমাদেরকে তো ফুটবলও কিনতে হবে ! দোকানদার তো তোদের মামা হয় না , যে আবদার করলেই হাতে রসগোল্লার মত ফুটবলটাও ধরিয়ে দেবে !

নুরুজ্জামানদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় । এদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র সে নিজেই । বাবা রিকশা চালান । বাকিদের বাবা সরকারি চাকুরে কিম্বা ছোট-খাট ব্যবসায়ী । পাড়ার সরকারি স্কুলেই নুরুর সাথে এদের পরিচয় ।
চাঁদার কথা শুনে প্রথমে বিশাল এক ঢোক গিলল সে । এরপর ঝি ঝি পোকার মত চিঁ চিঁ করে বলল ,
“ আরেকটু কমানো যায় না ?”
ভেটকি মাছ তীব্র চোখে তাকাল সেদিকে । নুরুকে সে অকারণেই অপছন্দ করে ,
“না । যার টাকা নাই , তার খেলা নাই । নুরার ব্যটা নুরাকে খেলতে হবে না । তুই দুধভাত ! কিমবা চিয়ার লিডারও হতে পারিস !
মাত্র একদিনের জন্যও যে এক হাজার টাকা জোগাড় করতে পারে না , সে একটা আস্ত রামছাগল !”
কথাটা কারো কাছেই ভাল লাগল না । ঝাড়ু হঠাৎ প্রতিবাদ করে বসল । ঝাঁকড়া চুলের জন্য সবাই তাকে ঝাড়ু বলে ডাকে । ওর মাথায় এতই চুল যে, সবার ধারণা তার ভেতরে একজন আস্ত মানুষের পক্ষেও হারিয়ে যাওয়া সম্ভব !!!
বলল,
“ একজন কিছু কম টাকা দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তোর ?”
কিছুক্ষণ তর্কের পর আমতা আমতা করে ভেটকি মাছ বলতে থাকল,
“ তাহলে ক্যাপ্টেনের কথা তোরা মানবি না ? আমার কথা না শুনলে, যা গা ! নিজেরা নিজেরা খেল ! দেখি কেমন পারিস !”
কলা চুপ করে মাঠের ওপর বসে ঘাসের আগাগুলো ছিঁড়ছিল ।
বলল,
“ভেটকিরে তো ডিফেন্সে নামাব !”
কলিমউদ্দিনের তপ্ত বাক্যে জাহিরুলের গায়ে যেন ফোসকা পড়ে গেল । ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দুটো টেনে তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল দুই প্রান্তে । সবার কাছ থেকে একটানা প্রতিবাদ সহ্য করে ব্রাউনীয় গতি শুন্য হয়ে গেছে তার ! কিন্তু স্বভাবসুলভ গোঁয়ার্তুমিটা যে না দেখালেই নয় । তারই বহিঃপ্রকাশ এটা !
স্ট্যাম্পগুলো ছিল কলার । ভুরু উঁচিয়ে হাল্কা রসিকতা মিশ্রিত স্বরে সে বলল ,
“ এর জন্য কিন্তু পে (pay) করতে হবে !”
অসহ্য রাগে গট গট করে চলে গেল জাহিরুল । সামনে একটা ফুটবল পড়তেই ছুটে গিয়ে সজোরে লাথি লাগাল তাতে । ক্ষেপে সুপারসনিক হয়ে গেছে সে । কিন্তু ভাগ্যটাও বিশ্বাসঘাতকতা করল তার সাথে । হ্যাঁচকা টানে প্যান্টের পেছনের প্রান্ত ছিঁড়ে সগৌরবে নির্লজ্জের মত বেরিয়ে এলো তার লজ্জা স্থান !

এর পরের ঘটনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঘটেছিল ! ২,৯৯,৭৯২,৪৫৮ মি/সে এর চেয়েও যেন দ্রুত দৌড়ে আলোকেও হার মানিয়ে দিয়েছিল সে !



(২)

“খালি এইডা লাগব ! হেইডা লাগব ! আশ্চার্যি পুলাপাইন !”
গতরাতের বাসি হাঁড়ি-পাতিল মাজছিলেন মা । তার সমস্ত রাগ যেন হাঁড়িগুলোর ওপর গিয়েই পড়েছিল । তার দিয়ে ঘষে ঘষে চকচকে ক্রোমিয়ামের স্তরখানাও তুলে ফেলবেন তিনি !

নুরু স্কুল থেকে ফিরেছে । আজকে বৃহস্পতিবার । হাফ ক্লাস । দরজার এক পাল্লায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে হজম করছিল বকুনি । মায়ের রাগ অবশ্য তার উপর নয় । এখনো সে কাউকে ফুটবলের কথা বলেনি । রাগটা মূলত তার সাবিনার ওপর । বেশ কিছুক্ষণ আগে সাবিনা ভয়ে ভয়ে রান্নাঘরের কাছে এসে স্টাডি টুরের কথা বলে গেছে । তখন থেকেই মায়ের ভীষণ রাগ । না, তিনি তাকে পঞ্চাশ টাকাও দিতে পারবেন না ,
“ টাকা কামাই করা কি সহজ কথা রে ? আবার বলে, পঞ্চাশ টাকা মাত্তর ! পঞ্চাশ টাকা তোদের কাছে কিছুই না ! পারলে একদিন কামাই করে দেখাইস !”

নুরু ওখান থেকে সরে এলো । এরকম মুহূর্তে কি করে সে চাঁদার কথা বলবে ? নিজেকে একটা আস্ত রামছাগল মনে হল তার ।
আজকে ভেটকি মাছের আচ্ছা শিক্ষা হয়েছে । নুরু নিজেও জানে এটা জাহিরুলের প্রাপ্য ছিল । মানুষ তাই পায়, যা সে করে । কিন্তু তবুও ভেটকির নেগেটিভ কথাগুলো মাথার চারদিকে ঘুরতে থাকল তার !

(৩)

বিকেলের দিকে আরেকবার মাঠে গেল নুরু । প্রায় সবারই টাকা জোগাড় করা শেষ । কাল সন্ধ্যার মধ্যে জমা দিতে হবে ।
ইতস্তত করে ঝাড়ু একবার তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ তুই পারবি তো ?”
ভীতু ভেড়ার মত সিটকে পড়ে থাকা নুরুর আত্মসম্মান বোধে ঘা হানল কথাটা । মুহূর্তে সিংহের মত বলিষ্ঠ স্বরে সে বলল,
“ হা । পারব ।”

কিন্তু ভেতরকার সেই রামছাগলটা তাকে তাড়া করে ফিরল ।



(৪)


নুরু ভেবে রেখেছিল রাতের বেলায় কথাটা তুলবে সে । হ্যাঁ, সে বীরের মতই বুক ফুলিয়ে বলবে – তার টাকা চাই । এক হাজার টাকা !
বাবা-মা তার জন্য কি করেছেন ? এটুকু আবদারও তারা পূরণ করতে পারবেন না ?

ঠিক খাবার সময় প্রসঙ্গটা তুলল নুরু । এরপর যথারীতি মায়ের মুখ কালো হয়ে গেল । বাবা কিছুই বললেন না । তার নিজের একদিনের ইনকামই তো এক হাজার টাকার নিচে !
মা-ও সুযোগ বুঝে বকার ঝুড়ি নিয়ে বসলেন ।

আজ অনেকদিন পর বাড়িতে দুধ আনা হয়েছে । জ্বাল দিয়ে দিয়ে গাঢ় সর ফেলা হয়েছে তাতে । নুরু আর সাবিনা দুধ পেলেই খুশি । আর কিচ্ছু চাই না তখন !
সর দুজনেরই খুব প্রিয় । তবে তা খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কিছু রুলস আছে । যেদিন নুরু সর খায় , সেদিন হাঁড়িটা সাবিনার । সবার দুধ খাওয়া শেষে সে হাঁড়িটা নিয়ে বসে । এরপর চামচ দিয়ে চেছে হাঁড়ির গায়ে লেগে থাকা সরগুলো জমিয়ে রাখে এক কোণে । জমানো শেষে সারা ঘর হেঁটে বেড়ায় আর নুরুকে দেখিয়ে দেখিয়ে খায় ! ব্যাপারটা নুরুর খুবই অপ্রিয় ! সাবিনার ঢং দেখলে ওর কান টেনে ছিঁড়ে দিতে ইচ্ছে হয় তার !
আজকে নুরুর সরের দিন ।

মা বকতে বকতে নুরুর প্লেটে দুধ ঢেলে দিলেন । মোটা হলদে সরখানা তুলে প্লেটের এক কিনারে রেখে দিলেন তিনি । নুরু এতক্ষণ চুপ ছিল । এবারো কিছুই বলল না । একটি আঙুলও ছোঁয়ালো না দুধে । হঠাৎ মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো । হাত ধুয়ে তাদের কাঠ আর ইটের তৈরি চৌকির এক কিনারে গিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল ।
মা বললেন,
“ না খাইলে নাই । এত চ্যাত কিসের ? নবাবজাদা হইছেন আপনারা !”
তবে তিনি যে দুঃখ পেয়েছিলেন, সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত । বাবা মাথা নিচু করে খেয়ে দেয়ে উঠে গেলেন ।
একমাত্র সাবিনাকেই আনন্দিত দেখাল । আজকে তার সুখের দিন । নুরুর সরটা এখন তার-ই !



(৫)

কদিন ধরেই প্রচণ্ড গরম পড়েছে । বৃষ্টির কোন পাত্তাই নেই । অথচ আষাঢ় মাস প্রায় শেষের পথে ।
নুরুর বাবা রিকশা চালাচ্ছেন । অসহ্য গরমে মাথার তালুটাও ফেটে চৌচির হয়ে যাবার উপক্রম ! রোদের ভেতরে রিকশা চালান যায় না । ক্যালরি খরচ হয়ে হয়ে একসময় ফুয়েল ফুরিয়ে যায় ! তখন আর জোর খাটানর মত বল থাকে না শরীরে । প্যাসেঞ্জাররা প্রায়ই রেগে যান,
“ নবাবের রিকশায় উঠছি ! চালাইতেও শেখো নাই !”

গরমে তারও মেজাজ বিগড়ে যায় । তবুও কিছুই বলেন না । ভারবাহী গাধার মত নিঃশব্দে চালিয়ে যান । পিপাসায় শুষ্ক জিহ্বা বেরিয়ে আসে তার । জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকেন । আজকে সে কোনমতেই ছায়ায় বিশ্রাম নেবে না । ছেলেটা তার আবদার করেছিল । কাল রাতে কিছুই খায়নি । আজ সকালেও অভিমান করে কিচ্ছুটি মুখে দেয়নি । বুকের মধ্যে অদ্ভুত এক সুক্ষ দুঃখবোধ কাজ করতে থাকে ।

কাল চামড়া বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরতে থাকে তার । একটা সময় যেন শরীরের পানির পরিমাণও অস্বাভাবিক কমে যায় । পিশাচ কোষগুলো তখন রক্তধারা থেকে শুষে নিতে থাকে প্রয়োজনীয় পানির কণা । মাথাটা বনবন করে ঘুরতে থাকে তার । মনে হয়, এই বুঝি উত্তপ্ত মগজটা গলে গলে গড়িয়ে পড়বে মাথার দুধার দিয়ে । আজই কি কিয়ামত ?

রিকশাটাকে এক পাশে রেখে একটা নাম না জানা গাছের ছায়া প্রায় শুয়ে পড়লেন তিনি । পাশ দিয়ে এক আইস্ক্রিম আলা ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে চলে যাচ্ছিল !

টিং! টিং! টিং! টিং! আইস্ক্রিম মালাই মালাই !
টিং! টিং! টিং! টিং!

অস্পষ্ট চোখে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করলেন তাকে । জল খাওয়ার মত ভঙ্গি করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন পানি আছে কি না ! আইস্ক্রিমআলা একটা ঠাণ্ডা মামের বোতল এগিয়ে দিল । টাকা না দিয়েই আগে ঢক্ ঢক্ করে গিলতে শুরু করলেন তিনি । এরপর বোতল নামিয়ে রাখলেন । টাকা দিলেন তাকে । চলে গেল আইস্ক্রিম আলা -

টিং! টিং! টিং! টিং! আইস্ক্রিম মালাই মালাই !
টিং! টিং! টিং! টিং!


নুরুর বাবা বসে আছেন গাছের ছায়ায় । নিরব ! নিথর ! মামের বোতল পড়ে গেছে । তা থেকে গলগল করে বেরিয়ে যাচ্ছে জল । পিপাসার্ত মাটি বুবুক্ষুর মত শুষে নিচ্ছে তা ।
সামান্য পরেই ভেজা মাটি আবার ধূলিময় হয়ে উঠল ।
নুরুর বাবা বসেই আছেন । কতগুলো কাক কোত্থেকে যেন জড় হয়েছে । ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে তারা । এই ভরদুপুরে একটানা কাকের ডাক আসলেই কুলক্ষণ ! একটা কাক তার ঘাড়ের ওপর বসল । এ কি উপহাস !
রাক্ষসী সূর্য এখনো খ্যান্ত দেয়নি । আগুন লাগিয়ে দিয়েছে চারিদিকে । এবার সে অন্য কাউকে গ্রাস করবার ফন্দি আঁটছে ।
আর নুরু ? সে এখন স্কুলে । ক্লান্ত দুপুরে একঘেয়ে পাটিগণিত করছে ফ্যানের গরম বাতাসের নিচে বসে । খিদের চোটে পেটের ভেতরকার গুড়ু গুড়ু ডাক তাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে জার্সির কথা ।
আশায় ঝিকিমিকি চোখ নিয়ে সে তাকাল জানালার দিকে । একটা কাক বড়ই জ্বালাতন করছে ! এত ডাকাডাকির কি হল !

নুরুর মন পড়ে নেই সুদ কষাকষির জটিল-প্যাঁচালো অঙ্কে ! জানালা ছাড়িয়ে বহুদুর অতিক্রম করেছে তার দৃষ্টি । প্রখর রোদের মাঝে বাবা ফিরে আসবেন । নুরুর এত বড় অপমান কিভাবে সহ্য করবেন তিনি ?


নুরুর বাবা আগের মতই বসে আছেন নাম না জানা গাছের ছায়ায় । মামের বোতলটা শুধু নেই । টোকাইরা নিয়ে গেছে ওটা ! কেউ জানে না তার কি হয়েছে ! কেউ জানে না সে কোথায় ! শুধু জানে আইস্ক্রিমআলা আর কাকগুলো ।
আর এভাবেই একটি প্রাণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে , মৃত্যু ঘটে গেল আরো কিছু সম্ভাবনাময় প্রাণের । কেউ কিছু জানল না । কেউ কিছু বুঝল না । বোকা নুরুটাও জার্সির আশায় বসে রইল । বুঝতেও পারল না তার জন্য কি অপেক্ষা করছে ! আস্ত একটা রামছাগল সে ।

এখানে কোন নিশ্চয়তা নেই কারো...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১২ সকাল ১০:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×