তিনজনের সংসার, তিনজনের ইনকাম, মাস শেষে বাড়িভাড়া গুণতে হয় না; তারপরও সমঝে চলতে হয়। এসবের মধ্যে উটকো অতিথি এসে উপস্থিত হলে বিরক্তি তো লাগবেই । একজন হলেও কথা ছিল- পুরো গুষ্টি। কর্তাটি গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক, অসুস্থ;রেকটামে টিউমার হয়েছে। পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসা করাতে।
ইংরেজির শিক্ষকটি আমার ভগ্নিপতির ঠিক আত্মীয় নয়, গ্রামের পরিচিত। আমি এর আগে ভদ্রলোককে কখনও দেখেনি। আমার ভগ্নিপতিটির আবার হাজি মুহাম্মদ মহসিনের স্বভাব- গ্রামে গেলে লোকজনের খোঁজ-খবর নেন; কারও অসুখ-বিসুখের কথা শুনলে ঢাকায় আসতে বলেন চিকিৎসার জন্য। গ্রামের ছেলে, গ্রামের জন্য মায়ার টান তো থাকবেই।
ওদিকে সংসারের খরচ দিনদিন বাড়ছে ...
গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশের গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টিমটিমে প্রদীপ; বহু আশা করে বড় শহরে এসেছেন, আমাদের বহুতল দেখে আশান্বিত হয়ে উঠেছেন-বিনা চিকিৎসায় ধুকতে হবে না। ভালো চিকিৎসা হবে। ওদিকে অজানা আশঙ্কায় ভদ্রলোকের চোখমুখ বসে গেছে; হয়তো মৃত্যুচিন্তায়। সবাই ভরসা দিলে কী হবে-ভোরবেলা উঠে দেখি বারান্দায় বসে আছেন। টিউমার যখন রেকটামে ... ব্যথাও সহ্য করছেন বোধহয়।
তো, চিকিৎসার খরচ মন্দ না; আমাদের পরিচিত ডাক্তার দেখছেন, তারপরও । পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতন অবস্থায় নেই শিক্ষকটি। কাজেই আমরাই ভরসা। এবং আমি যেহেতু বোন/ভগ্নিপতির সঙ্গে থাকি- সেহেতু শিক্ষকটির চিকিৎসার খরচ কেবল আমার বোন/ভগ্নিপতির ওপর বর্তাবে না। চরম বিরক্ত হলাম। যুগের নেশার টানে একটা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছিলাম।এখন সব টাকা যাবে। আমার বিরক্তির এই কারণ। আবার ভাবলাম-আমি কেবল নিজের কথা ভাবলে আমি পিশাচ না-হলেও অন্তত অমানুষ তো বটেই। আবার আমার এও মনে হল যে- আমরা কেবল আমাদের দেশের কথা ভাবলে আমরা পিশাচ না-হলেও অন্তত ফ্যাসিস্ট তো বটেই ...আবার আমার এও মনে হল যে-আশুলিয়ায় গার্মেন্টস সেক্টরে যে ভাঙাভাঙি চলছে তা মালিকপক্ষের লাভের গুড় পুরোটা তুলে নেওয়ার জন্য নয়তো?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:৪৭