somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১১ সালের অস্কার বিজয়ী সেরা ছবি দ্য আর্টিস্ট

১৮ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তি : ১৫ মে ২০১১ (কান), ১২ অক্টোবর ২০১১ (ফ্রান্স)
দৈর্ঘ : ১০০ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : মাইকেল হাজানাভিজি
প্রযোজনা : টমাস ল্যাঙম্যান
অভিনয় : জ্যাঁ ডুজারডি, বেরেনিস বেজো, জন গুডম্যান, জেমস ক্রোমওয়েল, মিসি পাইলে, পেনেলোপি এন মিলার, ম্যালকম ম্যাকডোয়েল, বিৎতসি টুলোক
সঙ্গীত : লুডভিক বাউর্স
চিত্রগ্রহণ : গুইলাউম স্কিফম্যান
সম্পাদনা : এনে-সোফি বিয়ন, মাইকেল হাজানাভিসিয়াস


২০১১ সালে যখন হলিউডের টেকনোলজি আর কম্পিউটার গ্রাফিক্সের একছত্র রাজত্ব চলছে, তখন একটা সাদাকালো এবং নির্বাক ছবি বানানোর কথা কী ভাবা যায়? এমনই দুঃসাহস দেখিয়েছেন ফরাসি পরিচালক মাইকেল হাজানাভিজি যে তিনি ২০১১ সালে নির্মাণ করেছেন ১৯২৭ সালের হলিউডের নির্বাক ছবির আঙ্গিকে দ্য আর্টিস্ট ছবিটি। স্পিলবার্গ থেকে জেমস ক্যামেরুন পর্যন্ত সবাই যখন দূর্দান্ত রোমাঞ্চ, অসম্ভব গ্রাফিক্স কিংবা মারদাঙ্গা গল্প নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন তখন হাজানাভিজি অত্যন্ত সরল, সহজ আর মধুর একটি প্রেমের গল্প নিয়ে ছবি করেছেন। ১৯২৭ সালে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসাবে মুক্তি পায় দ্য ঝ্যাজ সিঙ্গার। প্রথম স্বার্থক সবাক ছবি হিসাবে জ্যাজ সিঙ্গারের মাধ্যমেই দর্শক চলচ্চিত্রে সংলাপ ও সুরের যাদুতে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়। অথচ শুরুতে এই ছবিতে সংলাপ সংযোজন নিয়ে দ্বিধা ছিলো। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন ওয়ার্নার ব্রাদার্স অর্থনৈতিক টানাপোড়নে ভোগে তখন স্যাম ওয়ার্নার তার ভাইকে বুদ্ধি দেয় সবাক চলচ্চিত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় ভিটাফোনের সাথে যুথবদ্ধ হতে। তার এই বুদ্ধিতে সে সময় অনেকেই হেসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাক ছবি নির্মাণ করা হয়। দূর্ভাগ্যক্রমে, তার এই বুদ্ধির সাফল্য স্যাম দেখে যেতে পারেননি। জ্যাজ সিঙ্গার মুক্তি পাওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে তিনি মারা যান। আর এই ছবির মুক্তিতে শুধু যে নির্বাক চলচ্চিত্রের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠে। মনে রাখতে হবে স্বয়ং, চার্লি চ্যাপলিন তার মর্ডান টাইমস ছবিতে সংলাপ ব্যবহার করতে ভয় পেয়েছিলেন। সবাক ছবি নির্মিত হওয়ার ১৩ বছর পর অনেকটা দ্বিধার সঙ্গেই তিনি দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ছবিতে আংশিক সংলাপ ব্যবহার করেছিলেন। চ্যাপলিনের ভয় ছিলো যে, এতোদিন ধরে নির্বাক অভিনয়ে চ্যাপলিনকে যে ভাঁড় হিসাবে দর্শক গ্রহণ করেছে সেই ভাঁড়ের মুখে সংলাপ শুনতে হয়তো দর্শক আগ্রহী হবে না। তাছাড়া, সংলাপ দিলে ইংরেজি না-জানা ভক্তরা হয়তো তার ছবি গ্রহণ করবে না। তাই তিনি বেশ কৌশলের সঙ্গে মডার্ন টাইমস ছবিতে কিছু সংলাপ ব্যবহার করেছেন। চ্যাপলিনের পরবর্তী কালের ছবি মঁসিয়ে ভের্দ্যুতে তিনি সংলাপ ব্যবহার করেছিলেন পুরোটাই, কিন্তু এই ব্ল্যাক কমেডি দর্শক গ্রহণ করেনি, ব্যর্থ হন চ্যাপলিন। এই সবই ইতিহাস। মোদ্দা কথা হলো, নির্বাক যুগ থেকে চলচ্চিত্রে সবাক যুগ আসার সময়ের টানাপোড়নটা কম ছিলো না। সেই টানাপোড়নকেই একটি সরল প্রেমের গল্পের বাঁধনে আটকে তৈরি করা হয়েছে দ্য আর্টিস্ট ছবিটি।


গল্পটি শুরু হয়েছে ১৯২৭ সালে যখন নির্বাক যুগের বিখ্যাত অভিনেতা জর্জ ভালেন্টিন তার নতুন ছবি আ রাশিয়ান এফেয়ারের প্রিমিয়ারের জন্যে সাংবাদিক, ফটোগ্রাফারদের মুখোমুখি হয়েছেন, এমন সময় পেপে মিলার নামে এক নারী দূর্ঘটনাক্রমে তার উপর এসে পড়ে। ভ্যালেন্টিন তাকে নিয়ে একটু মজাই করেন। পরদিন ভ্যারাইটি পত্রিকায় শিরোনাম আসে ‘কে এই নারী’ যার সাথে ভ্যালেন্টিনের ঘণিষ্টতা। এরপর পেপে কিনোগ্রাফ স্টুডিওতে এক্সট্রা হিসাবে অডিশন দিতে আসে। এ সময় ভ্যালেন্টিনের সাথে নাচের একটি দৃশ্যায়ন চিত্রায়ণ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। পেপে সুষ্পষ্টভাবেই ভ্যালেন্টিনের প্রেমে পড়ে। সে ভ্যালেন্টিনের ম্যাকআপ কক্ষে এসে তার কোটকে জড়িয়ে ধরে। ভ্যালেন্টিন তার ঠোঁটের উপর একটি তিল এঁকে দিয়ে বলে, তোমার অভিনেত্রী হিসাবে বিখ্যাত হতে হলে নতুন কিছু লাগবে। যাহোক ধীরে ধীরে প্যাপে তার অবস্থান করে নেয়। দুই বছর পর ১৯২৯ সালে প্রযোজক জিমার ঘোষণা দেয়, সে আর নির্বাক ছবি বানাবে, সবাক ছবি বানাবে। কিন্তু ভ্যালেন্টিন ছবিতে শব্দ সংযোজন ব্যাপারটি মেনে নিতে পারে না। তার মতে, ভক্তরা তাকে দেখতে আসে, তার কণ্ঠ শুনতে আসে না। যাহোক ভ্যালেন্টিন নিজেই একটি ছবি প্রযোজনায় হাত দেয়। অন্যদিকে জিমার তার সবাক ছবি বানা পেপে ও একদল নতুন শিল্পী নিয়ে। একই দিনে দুটো ছবি মুক্তি পায়। পেপে রাতারাতি তারকা হয়ে যায়, আর ভ্যালেন্টিন এর ছবি ফ্লপ হয়, সে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়। তার স্ত্রী ডরিস তাকে ছেড়ে চলে যায়। ভ্যালেন্টিনের সাথে রয়ে যায় তার প্রিয় কুকুর আর ড্রাইভার ক্লিফটন। কিন্তু ক্লিফটনকে তিনি চাকরী থেকে বের করে দেন, নিজের সব জিনিস নিলামে বিক্রি করে দেন। এক পর্যায়ে চূড়ান্ত হতাশ ও মাতাল ভ্যালেন্টিন তার ফিল্মে আগুন ধরিয়ে দেন, নাইট্রেট ফিল্মের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রিয় কুকুরটি ছুটে গিয়ে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ভ্যালেন্টিন প্রাণে বেঁচে যায়। পত্রিকায় এ সংবাদ পড়ে পেপে হাসপাতালে আসে। ভ্যালেন্টিনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। পেপে যে তাকে ভালবেসেছিলো তা পরিস্কার বোঝা যায়। ভ্যালেন্টিন আবিষ্কার করে তার নিলামের সব জিনিস পেপে কিনে রেখেছে, এমনকি তার পুরনো ড্রাইভারকে সে নিজের ড্রাইভার করে রেখে দিয়েছে। এদিকে পেপে প্রযোজক জিমারকে প্ররোচিত করে ভ্যালেন্টিন ও তাকে নিয়ে একটি ছবি বানানোর। তাদের নিয়ে এবার একটি মিউজিক্যাল বানানো হয়। ছবির শেষ অংশে এসে জিমারের কণ্ঠে সংলাপ শোনা যায় : ‘কাট, যথার্থ। অসাধারণ। আরেকটা শট কি দেয়া যায়।’ ভ্যালেন্টিন তার একমাত্র এবং ছবির শেষ সংলাপ দেয় ‘সানন্দে!’
মুক্তির সাথে সাথে দ্য আর্টিস্ট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জণ করে। ডুজারডি ২০১১ সালের কান ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেয়। সেরা ছবি ও সেরা সঙ্গীতের পুরস্কারও জিতে নেয় উদ্বোধনী এই উৎসব থেকেই। বাফটাতেও এ ছবি ১১টি মনোনয়ন ও সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা চিত্রনাট্য, সেরা অভিনেতাসহ সাতটি পুরস্কার জিতে নেয়। ফ্রান্সের সিজার এওয়ার্ডে এটি সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী সহ ছয়টি পুরস্কার পেয়েছে। অস্কারে সেরা ছবি ছাড়াও সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা সহ পাঁচটি পুরস্কার জিতে নেয়। এটি অস্কারের ইতিহাসে প্রথম ছবি যা সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিলো এবং ডুজারডি প্রথম ফরাসী অভিনেতা যিনি অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিলেন। ১৯২৭ সালে অস্কারে প্রথম নির্বাক ছবির পুরস্কার পেয়েছিলো উইংস, তার ৮৪ বছর পরে দ্বিতীয়বারের মতো একটি নির্বাক ছবি অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার পেলো।


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×