somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা বনাম সুচি

১৮ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(০১).
আলোচিত ও সমালোচিত প্রসঙ্গ হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে। এর চেয়ে বেশী গুরুত্ত্ব পায় অংসান সুচির রাজনৈতিক উত্তরণের বিষয়টি। সেই সুচি যখন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিমুখ হয়ে বসে থাকেন তভন সত্যই সেটা প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন তিনি। বিশ্বের দরবারে তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছেন। জনগণের অধিকার আদায়ে জেল খেটেছেন যুগের পর যুগ। তার মুক্তির সময় ও পরবর্তী সময়ে তার মভা-সমাবেশে, মিছিলে-মিটিঙয়ে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি ও ভালোবাসা-শ্রদ্ধার যে নমুনা পাওয়া গেছে তা প্রমাণ করে মায়ানমারে তার জনপ্রিয়তা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা এবং সামবিক শাসনের প্রতি তীব্র বিষেদাগার। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্যে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দেশের মানুষের পাশে এসে না দাঁড়িয়ে পশ্চিমা দেশ ভ্রমনে তিনি ব্যম্ত সময় কাটাচ্ছেণ। শান্তির জন্য প্রাপ্ত নোবেল প্রাইজ গ্রহণ করছেন।সর্বোপরি নিজেকে গুটিয়ে রাখায় তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

(ক). আধুনিক পন্ডিতেরা মনে করেন যে গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। আব্রাহাম লিংকন অনেক আগেই তা বলে গেছেন। একটি দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠী গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করে থাকে। ধর্ম, বর্ণ,জাতি ,গোত্র নির্বিশেষে সকলেই এখানে অংশগ্রহণ করে থাকে। আমরা যদি মার্কিন মুলুকের দিকে তাকায় তাহলে স্পষ্ট দেখতে পায় যে সেখানে নানা ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্রের লোক মিলেমিশে গণতন্ত্রের এক আদর্শ কাঠামো তৈরি করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য সাধারণ একটি দেশ। বিশ্বের আরো অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই আমরা এর নজির দেখতে পায়। মিয়ানমার দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি সেখানে সবসময় গৌণ থেকেছে। ফলে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর রাখাইনদের আক্রমণে সেনা সরকারের টনক নড়বে না এটাই স্বাভাবিক মনে হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিগৃহীত জনগণের প্রতি সরকারের চরম উদাসিনতা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে দেশটি যে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনায় সুচির নির্লিপ্ততা কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার বিচার রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা করবেন। তবে আমাদের কাছে তা সুখকর মনে হয়নি।


(খ).নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার নিউক্লিয়াস হিসেবে বিবেচিত হয়। কিছুদিন আগের একটি নির্বাচনে সুচির এনএলডি অনেক ভালো করেছে। তিনি আশাবাদী যে সামনের যে কোন নির্বানে তিনি ভাল করবেন। এজন্য হয়ত তার ক্ষুদ্র বোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভোট কোন প্রভার ফেলতে পারবে না। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এ দাঙ্গার ঘটনায় দেশের জনমত পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ছে,যা সামরিক সরকারকেও ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে তারা রোহিঙ্গাদের অনেক দেরিতে হলেও এখন রাখাইন রাজ্যে ধরে রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রন ও মানবিক বিপর্যয় রোধকল্পে ব্যাকস্থা গ্রহণের জন্য দারি উঠছে। সুচির বিরোধীরা একে একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারে। যার একটা ফল হয়ত পরবর্তী নির্বাচনে দেখা গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। সুচির ব্যাপক জনপ্রিয়তায় তারতম্য কিছুটা হলেও ঘটবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। সুচির উচিত ছিল বিদেশ সফর বাতিল বা স্থগিত করে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফিরে এসে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া ।

(গ). এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম একটা বয ফ্যাকটর। হিন্দু-মুসলিম ধর্মভিত্তিক রাজনিতি ভারত-বাঙলার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অধ্যায় বলে মনে করার কারণ আছে। ভারতে মুসলিম আগমন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ধর্ম রাজনীতিকদের অন্যতম বর্ম ও হাতিয়ার। গান্ধী, জিন্নাহ, মেহেরু. সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হক প্রমুখ উদার ও অসাম্প্রদায়িক মেতা হিসেবে পরিচিত থাকলেও আপন বা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে তারা ধর্মকে ব্যাবহার করতে ভোলেনি। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্ম এখনো জনমতকে অনেকাংশে প্রভাবিত করতে পারে। মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী সেদেশের সামরিক রাজনীতিতে কোন প্রকার প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। বর্তমানে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। এমনকি সুচি যখন একটি কথাও বললেন না তখন তারা দলে দলে বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হতে থাকে।সুচি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সমর্থনের আশায় নিজেকে এ ব্যাপারটি থেকে নিজেকে বিরত থাকেন তাহলে হয়ত ভুল করলেন। বৌদ্ধ ধর্মদর্শনের মুলকথা হলো অহিংসা। ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে, মানুষ হত্যা করে গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরা এক ঘৃণ্য নজির স্থাপন করলেন্। সুচিও ক্ষুদ্র ধর্মস্বার্থের আড়ালে নিজেকে গণতান্ত্রিক দৈত্যে পরিণত করলেন এবং এ উপমহাদেশের নোংরা ধর্মীয় রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন না।

(ঘ).তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্র যে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার সুচি তা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেথিয়ে দিলেন। রোহিঙ্গারা মায়ানমারের মোট জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যায় কম হলেও তারা কিন্তু বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে। মুসলিম বিশ্বে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রয়া লক্ষ্য করা গেছে। ফলে গণতন্ত্রকামী মুসলিম বিশ্ব সুচিকে ভালভাবে দেখবে না একথা সত্য। এ বিষয়টি তিনি হয়ত রাষ্টের প্রধার হলে তার জন্য নেতিবাচক প্রাভার বয়ে আনতে পারে। তথাপি তিনি এগুলো ভেবে বা না ভেবে যাই হোক না কেন ক্ষমতা দখলকে সম্ববত তার কার্যক্রমের শীর্ষে রেখেছেন। এব্শেষত্রে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারানোর ভয় তার ছিল। তার মানে কি এরই প্রমাষ বহর করেন্ যে গণতন্ত্র মানে যেকোন প্রকারে ক্ষমতা দখলের প্রয়ার মাত্র। আর জনগলের শাসন, জনমত, সমানাধিকার, মানবাধিকার প্রভৃতি ক্ষমতা দখলের বায়না মাত্র বলে আমরা মনে করতে পারি।এ উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশে আমরা এর সফল প্রয়োগ দেখতে পায়।

(ঙ).সুচির নিষ্ক্রিয়তার আরো একটি কারণ থাকতে পারে এ কারলে যে পশ্চিমা বিশ্বের নীতি ও আদর্শের প্রতি তার অকুণ্ঠ ও আপসহীন সমর্থন। তৃতীয় ও উন্নয়নশীল দেশে পশ্চিমারা গণতন্ত্রের মুলো ঝুলিয়ে নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত থাকে। গণতন্ত্র জনগলের শাসন না হয়ে পুঁজিবাদী এসব দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের অস্ত্রে পরিণত হয়। মায়ানমারের ক্ষেত্রে সুচি হলো পশ্চিমাদের এক নম্বর হাতিয়ার। চিন-মায়ানমার সম্পর্ক তাদের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্ককে প্রভাবিত করতেই এদেশের প্রতি তাদের এত গণতান্ত্রিক দরদ। অনেকেই বলে থাকেন তার নোবেল প্রাপ্তি এই দরদেরই অংশমাত্র। একদিকে দেশে হত্যাযজ্ঞ চলছে অন্যদিকে ইউরোপে সুচিকে দেয়া হচ্ছে রাজকীয় সম্মান।কারণ পশ্চিমারা জানে সুচি এ ব্যাপারে তৎপর হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগণের সমর্থন হারাতে পারেন।তাদের এতদিনের পরিকল্পনা ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। আমরা কোনভাবেই মনে করতে পারিনা যে সুচি এসব ব্যাপারে ওয়াকেফহাল নন। বরং খরে নেব তিনি জেনে বুঝেই এ পথে পাড়ি জমিয়েছেন এবং রোহিঙ্গা নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াননি।

(চ).রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমারের বৈদেশিক সম্পর্ককে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছে। প্রতিবেশী বাংশাদেশে ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, যা সরকারের যথেষ্ট মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবিস্ফোরণের ভেতরে এসব রোহিঙ্গাদের অবস্থান বাংলাদেশের জন্য আসলেই একটা চ্যালেঞ্জ। তারপর আবার নতুন করে তাদের এদেশে প্রবেশ এবং এতে মায়ানমার কর্তৃক বাধা না দেয়া সত্যিই কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। স্বৈরশাসক থার শোয়ে এ ব্যাপারে কথা না বললেও সুচির তৎপর হওয়া উচিত ছিল। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সে দেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ্। সামরিক সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলেও সুচি জনমত গড়তে পারতেন। ভূ-কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ এশীয়-বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত আলোচিত ও সম্ভাবনাময় একটি দেশ। ফলে মায়ানমারের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ কে সুসংহত করতে বাংলাদেশর সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে এ সমস্যার সমাধানকল্পে সুচির বুদ্ধিভিত্তিক ও সাহসী উদ্যোগ সকলেরই কাম্য ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি কূটনৈতিক রাজনীতির মাধ্যমে এ সমাধান করতে পারতেন বলে আমি মনে করি।

(ছ).জনগণের বিদ্রোহ, বিপ্লব,দাঙ্গা, অসন্তোষ ও আন্দোলনকে পুঁজি করে ক্ষমতার সুফল ও সুবিধা ভোগ করে থাকে রাজনৈতিক-গনতান্ত্রিক এলিটরা। আর জনগণ থেকে যান আড়ালে অন্ধকারে। রাখাইন প্রদেলের দাঙ্গা নিয়ে হয়ত রাজনীতি করবেন সুচি। সেনা সরকারকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করবেন দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে। নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হবেন। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন। হয়ত একদিন সরকারও গঠন করবেন। কিন্তু আজকের যে রোহিঙ্গা শিশুটিকে তার মা-বাবা বাঁচানোর জন্য একাকী সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ কি সুচির সরকার গঠন ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারবে কি? রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ও ছিন্নমূল জমগোশ্ঠী কতটুকুই বা পাবে সুখ-সমৃদ্ধময় স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা? সময়ের কাছেই ছেড়ে দেয়া যাক সে বিচার।


(০২).
নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে হাজার হাজার বার্মিজ নাগরিক রোহিঙ্গারা যখন স্বদেশভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বৃষ্টি-ঢেউয়ের মধ্যে দিনের পর দিন ভেসে বেড়াচ্ছে তখন সুচি গ্রহণ করছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রাপ্ত নোবেল পুরস্কার। শুধু তাই নয় এই সময়ে তাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেয়া হচ্ছে জমকালো সম্বর্ধনা।উপরন্ত রাখাইন-রোহিঙ্গা দাঙ্গায় সুচির নির্লিপ্ততা থেকে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন যে এ ঘটনা পশ্চিমা মুসলিম নিধনের ধারাবাহিক পরিকল্পনার একটা অংশমাত্র, যেটা আমার কাছে তেমন যুক্তিযু্ক্ত মনে হয়নি। স্যামুয়েল হান্টিঙটনের দ্য ক্লাস অব সিভিলাইজেশনে খ্রীস্টজগতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জিং ফ্যাকটর মুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ। ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি মুসলিম দেশের সাথে পাশ্চাত্য আচরণ এর অনেকটা প্রমান বহন করে। অনেকের মনে হলেও আমার মনে হয়না যে রাখাইন রাজ্যের ঘটনা পাশ্চাত্য মুসলিম নিধনযজ্ঞের অংশ।কারণ অবস্থান, সংখ্যা,শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজ, গোত্র প্রভৃতি বিচারে তারা কোনভাবেই পাশ্চাত্যেম মাথাব্যথার কারণ নয়।তবে বাংলাদেশ যেহেতূ বার্মার নিকটতম প্রতিবেশী এবং ভূ-কৌশলগত অবস্থান বিচারে বিশ্বের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশ ; তাই এ দেশের প্রতি বিষেদাগার বা সরকারকে বিব্রত করতে বা জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে বা চাপ সৃষ্টি করতে এ ধরণের দাঙ্গা সৃষ্টি ও উস্কানি দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন কোন কাজ নয়।এ ঘটনা সত্যি হলে পাশ্চাত্য স্বার্থসিদ্ধিতে সুচি তার দায় কোনোভাবে এড়াতে পারবেন না। আসল ব্যাপার হলো গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারনায় দল মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই।মায়ানমারের অবিসংবাদিত গণতান্ত্রিক মেতা হিসেবে অংসান সুচির প্রধার কাজই ছিল দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাধ্য করা। রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো। বিদেশ সফর বাতিল বা স্থগিত করে রাখাইন রাজ্যে ছুটে যাওয়া। দাঙ্গায় ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ হারানো রোহিঙ্গাদের পৃনর্বাসনের কার্যকর ব্যাবস্থা করা।অবস্থা বুঝে তিনি প্রতিবেশী বাংলাদেশ সরকারের সাথেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারতেন।মোদ্দাকথা দেশের মাটিতে উপস্থিত থেকে সামগ্রিক সমাধানের প্রচেষ্টা চালালে তা উঠতি গণতান্ত্রিক এ দেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হত।মুষ্টিমেয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমর্থনের জন্য এত বড় ঝক্কি-ঝামেলা নেয়ার কি দরকার-এ ধরনের কিছু ভেবে থাকলে তিনি রাজনৈতিক ও আদর্শিক দু'দিক দিয়েই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে ভাবতে হবে। কেননা মুষ্টিমেয় সেই জনগণেরই কেউ যদি তিনি হতেন তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াত। তার কাছে হয়ত এ ঘটনা বিচ্ছিন্ন ও রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফল বলে মনে হতে পারে, কারণ তারা সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিম। তাও যদি হয়ে থাকে তবে মনে রাখা উচিত যে- ওয়ান ম্যানস টেরোরিজম ইজ আদার ম্যানস লিবার্টি। মুক্ত রাজনৈতিক জিবনের সূচনা লগ্নে সুচির শুভবুদ্ধির উদয় হবে এমনটাই আশা করে বিশ্ববিবেক।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×