somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিভিউঃ সংকাশ লিটল ম্যাগাজিন ২০১২(প্রথম সংখ্যা- জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯)

১৭ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোববার সকালটা আমার জন্য একটু অন্যরকম। ঘুম থেকে উঠে অফিস যাবার তাড়া নেই। ঢুলুঢুলু চোখে খেলার খবর আর স্টেডিয়ামের পাতা বারবার ওলটপালট করি। মারিয়া শারাপোভার জন্ম তারিখ- পছন্দের রঙ সব মুখস্ত হয়ে যায়।
বিরক্ত হয়ে একসময় অফিসে ঢুকে পড়ি (আমি আমার বড় ভাইয়ের আইটি ফার্মে ছোটখাট একটা চাকরি করি, অফিসটি আমাদের বাসভবনের নিচতালায়)। দেখি ফয়সাল ভাই আমার পিসিতে কাজ করছেন (রোববার অফিস বন্ধ থাকলেও- অনেকে আসেন, ডিউ প্রোজেক্টের কাজ এগিয়ে নেন)। আমাকে দেখে ফয়সাল ভাই হর্ষ ধ্বনি দিয়ে ওঠেন,
- আরে কবি! আসেন, আসেন!!!
তাকিয়ে দেখি মনির মুকুল ভাইয়ের অনেক শ্রমে বানানো লিটল ম্যাগাজিনের মসৃণ কাভারটি ফয়সাল ভাইয়ের মাউসের প্যাডে পরিনত হয়েছে। ফয়সাল ভাই আমাকে আমার পিসিটা ছেড়ে দিয়ে অন্য পিসিতে গিয়ে বসেন।
তারপর! বলেন কবি... কেমন চলছে দিনকাল!
আমি অপরাধীর ভঙ্গিতে ফয়সাল ভাইয়ের দিকে তাকাই। অনেক আগে একবার ফয়সাল ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
- ভাই! কবিতা কেন লিখেন! কবিতা লিখে কি হয়?
খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। কবিতা লিখে আসলে কি লাভটা হয়! ফয়সাল ভাই পি এইচ পি- এর কাজ করেন। বিদেশি ক্লায়েন্ট থেকে সরাসরি ডলারে বেতন পান। কোডিং এর সময় একটা কি ও যদি ভুল চেপে দেন- তবে ক্লায়েন্টের পুরো সিস্টেমের বারোটা বেজে যাবে।
এমন একজন পি এইচ পি এক্সপার্ট আমার কাছে কবিতা লিখে কি হয়- জানতে চাইলে আমার তখন কেমন অবস্থা হয়, অনুমান করুন। তারচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটি হচ্ছে- যে গুরু পাপের জন্য আমাকে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে, সে পাপটি আদৌ আমি করিনি।
এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানবেন সম্ভবত মামুন ম আজিজ ভাই। অনেক চাপাচাপি- ঠ্যালাঠেলির পরও সমন্বিত কবিতার জন্য আমার কলম থেকে যখন একটা শব্দ ও বের হলনা- তখন মামুন ভাই বলেছিলেন
- বুঝছি! তোমারে দিয়া আর যাই হউক, কবিতা অইবনা!
ভাবখানা এমন- ‘যেন আমি রংচঙা পালকের ডিজাইনওয়ালা একটা হৃষ্টপুষ্ট একটা মুরগা- যেইটা কখনো আণ্ডা দিতে পারবোনা!’
সব মুরগা যে আবার একদমই আণ্ডা পাড়েনা- ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়! এই যেমন আমাদের মৃন্ময় মিজান ভাইয়ের গলাছিলা মুরগাটা- ডাকাডাকিতে খুব এক্সপার্ট আবার মাঝে মাঝে চিপায় গিয়ে নাকি ফুড়ুৎফারুৎ ডিম ও পাড়ে (ডিম পারা নাকি ডিম পাড়া! বইতে দেখাচ্ছে পারা )।
যাই হোক- লিটল ম্যাগের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আমার কাছে মনে হয়েছে মৃন্ময় ভাইয়ের কবিতা- ‘সাধ- একটি পারলৌকিক ডিম’। ফরম্যাটটা অন্যরকম; তুখোড় ধরনের। পণ্ডিত আর মুকুল ভাইয়ের পর আমি খুব দ্রুত মৃন্ময় ভাইয়ের কবিতার ভক্ত হয়ে গেছি। পাঠক হিসেবে আমি বরই অ্যাভারেজ, কবিতা একটু কঠিন হলেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। মৃন্ময় ভাইয়ের কবিতা সরল- সচ্ছ ধরনের, যেখানে শিল্প আর বুদ্ধিমত্তার কারিকুরি পাওয়া যায়।
এইযে দেখুননা- মুরগায় ডিম পাড়ে বলে আমাকে কেমন বোকা বানিয়ে দিলেন! গতরাতে অনেক ভেবেছি ব্যাপারটি নিয়ে, এই মাত্র মুরগার আকস্মিক ডিম পাড়ার মত করেই- আমার টিউব লাইটটা পং করে জ্বলে উঠলো। ‘আরব কান্ট্রি ফেরত’ প্রাক্তন মোজাহিদ বুড়া মিয়ার মুরগার ডিম খাওয়া নিয়ে যে দুর্দান্ত রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে- তার সমাধান যদি চান তবে কবিতার নামটা নিয়ে কিঞ্চিৎ নাড়াচাড়া করে দেখতে পারেন।

২।
কবিতায় আমার কাছে যেমন মৃন্ময় ভাই, গল্পে আমার সেরকম দিলরুবা মিলি। কাহিনীর আঙ্গিকের ভিন্নতা, ক্যামফ্লজ, বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা- মিলির লেখনীর মূল শক্তি। ‘দেবালয়’ গল্পটা যারাই তাড়াহুড়ো করে পড়বেন- সাংঘাতিক ভুল করবেন। শান্ত হয়ে বসুন, একটু সময় নিন, তারপর লম্বা শ্বাস... তারপর পড়ুন। দেখবেন- আপনার চারপাশটা অন্যরকম হয়ে গেছে।

৩।
সমন্বিত কবিতাটি যতই দেখি- হিংসায় পুড়ে খাক হয়ে যাই। কবে যে এরকম আণ্ডা পাড়তে... আই মিন কবিতা লিখতে পারবো! কবিতায় কিছু কিছু জায়গা কাঁচা থেকে গেছে, সেদিকে আর গেলামনা- তবে ‘আমি যে কিভাবে আছি এখানে...’- অংশটুকু যিনি লিখেছেন, তার লেখনীর প্রতি আলাদাভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি।

৪।
সংকাশের সবাই আমার চরিত্রের বিনয়ী আর হাসিখুশি দিকটার কথাই জানেন। ভেতরে ভেতরে আমি যে কতটা হিংসুক টাইপের- তা কিন্তু অনেকেই টের পাননি। বইমেলা, সিনেপ্লেক্স কিংবা টিএসসিতে অনেক সময় অনেক সেলিব্রেটির মুখোমুখি হয়ে গেলে- আমি সাথে সাথে শক্ত হয়ে যাই কিংবা ব্যস্তভাবে ফোনে কথা বলতে থাকি। ভাবখানা এমন যে- তুমি যেই হওনা কেন, আমার কাছে তোমার কোন ‘বেইল’ নাই। ওই মুহূর্তটিতে আমার ভাবভঙ্গী এতোটাই আক্রমণাত্মক আর উগ্র থাকে যে- ওই সেলিব্রেটি বেচারা পর্যন্ত অনেক সময় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জান। সেলিব্রেটি ভদ্রলোকটি একসময় চলে যান, আমি তখন নরমাল হই। সেলিব্রেটি দেখার আনন্দটি তখন অনুভব করি, রোমাঞ্চিত হই, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই- ‘সাকিব খানের সাথে কিছুক্ষণ!’
প্রিয় লেখক রুমানা বৈশাখীর লেখার পাশে নিজের আবোলতাবোল লেখাটা চলে এসেছে দেখে সেরকম রোমাঞ্চ অনুভব করছি। জানোয়ার গল্পের শুরুটা বুদ্ধিদীপ্ত, মূল গল্পে ঢুকেছেন ধীরে ধীরে, কুশলী ভাবে। সবশেষে ‘জানোয়ার’ – শব্দের আধুনিকতম সংস্করণের সংজ্ঞাটি ছিল অনন্য এবং যুক্তিযুক্ত।




৫।
নারী- পুরুষের অনৈতিক সম্পর্কের কারনে জন্ম নেয়া বাস্টারড (!), তরুন/ যুবক মডেলদের প্রতি প্রনয়াসক্ত পুরুষ ডিরেক্টর, পিতার সাথে তার হারিয়ে যাওয়া কন্যার শারীরিক সংসর্গ- এই ছিল আমার পড়া শাওন ভাইয়ের সর্বশেষ কয়টি গল্পের বিষয়বস্তু।
এবার কেন যেন মনে হয়েছিল- বিকৃত যৌনাচার আর অনৈতিক সম্পর্কের বাইরে কিছু পাবো... পেলামনা! আমরা কিন্তু হাল ছাড়ছিনা বরং কলম ছোটাচ্ছি জোরে।
গল্প সংকলন আর লিটল ম্যাগে জমা হওয়া প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বর্ণ ইতিমধ্যে স্থির বায়ুতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নৈঃশব্দের মাঝে সংকোচহীনভাবে চলা শুরু করেছে সংগবদ্ধ শব্দেরা... টর্নেডো সৃষ্টি হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। (চলবে)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×