somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর মেঘেরা চুপ করে পালালো

১৬ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হ্যালো পুটু রানী?
-আপু!
মিষ্টি করে হেসে নিশি বলছিলো আমাদের পুটু রানীর কি আজ বিকেলে ম্যালা কাজ আছে?
পুটুর আবার বিকেলেও মাঝে মাঝে ডিউটি পড়ে! আজ শুক্রবার। ছুটি। ছুটি ছাটার দিনে বিকেলে বান্ধবিরা মিলে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়া হয়। সকালে উঠেই একগাদা কাপড় ভিজিয়েছে বালতিটাতে। হোস্টেলের ছোট রুমটায় চারদিকে কাপড় চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। আড় চোখে একবার বাথরুমের ছোট্ট দরজার দিকে চায় পিনাশ। ছোট বেলা থেকে নিশিপু ওকে পুটু রানী বলে। একসময় ভীষন রেগে যেত সে এখন শুনতে ভাল লাগে তবু কপট রাগ দেখায়! আর মুখে হাসি লেগে থাকে।
-বিকেলে কি হবে আপু?
-কি হবে মানে? তুই জলদি চলে আয়। এলেই দেখবি বাসায় কি কান্ড হচ্ছে। আমেরিকা প্রবাসী দেশে ফিরেছে। দেখার জন্য উতলা হইয়া রইছে। বলা যায়না আজকেই আমার কবুতরী জীবনের শেষ দিন হইতে পারে!
তুই না থাকলে সে শালী দেখার মত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মিস করবে। এইটা আমি বাঁইচা থাকতে কেমনে হইতে দি ক?
পুটু সোনা তুমি চলে এসো কেমন?

পিনাশের মন ভাল হয়ে গেল। জলদি জলদি কাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। আজ এমনিতেই খুব ইচ্ছে করছিলো বড় মামার বাসায় যেতে। কিন্তু গত সপ্তাহেই ঘুরে এসেছে, এত ঘন ঘন যাওয়া মামী পছন্দ না ও করতে পারে। এমনিতেই গত কিছুদিন ধরে সিমু ভাই কেমন কেমন করে যেন তাকায়! মামা পড়ার খরচ দেয়। পিনাশের অনেক কিছুই উপেক্ষা করতে হবে। কুল পুটু রানী কুল! দু হাতের তালু মাথায় কাছে নিয়ে নিজেকে বোঝায় পুটু। এই নাটুকে ভঙ্গীটা তার নিজেরই খুব পছন্দের।
শেষ পর্যন্ত নিশিআপু বিয়েতে রাজী হইল তাইলে! দুপুরে ফিস্ট ছিল হোস্টেলে। রুমে এসে তানুর ইস্ত্রীটা প্লাগে দিয়ে হালকা সবুজ ফুল তোলা জামাটা বের করে। কুঁচকি খাইছে এক আধ জায়গায়। দু একবার বুলিয়ে নিলেই হবে।
তানু মুখ বাড়িয়ে বলে পুটু শোন আজ নিশি আপুকে দেখতে আসবে তোকে না বুঝলি? এই জামা পরলে দুলাভাই শালীরে বিয়ে করে ফেলতে পারে। ধুর! ওর এই একটাই ভাল জামা। কলেজে তো এপ্রনের নিচে যা তা পরে ফেলা যায়। বাইরে যেতে গেলেই সমস্যা!

সাড়ে চারটা প্রায় বাজে! এর মধ্যে নিশি চারবার ফোন দিয়েছে।পুটু তুই কতদূর? জলদি আয়। পুটু বুঝে পায়না এত উতলা হবার কি আছে বাবা! আসতেছিতো। বাসায় ঢুকতেই নিশি তাকে নিয়ে যায় নিজের রুমে। তুই থাক। আমি আধাঘন্টার মধ্যে ফিরবো। পারলারে যায়া একটু পাওডার বুলায়া আসি।
এখন? আতকে উঠছিলো পুটু। আপু সত্যি করে বল তুমি কই যাবা? মামীকে বলেছো?
ঢাকা শহরে বের হয়ে মানুষ আধা ঘন্টার মধ্যে বাসায় ফিরতে পারবে এ রেকর্ড বিরল। আর ছেলেপক্ষ সন্ধ্যের আগেই আসবে।যদিও সময় আছে এখন ও। কিন্তু নিশিকে বিশ্বাস করে ছেড়ে দেয়ার কারন নাই। গত দু মাসে সে চারবার এরকম করেছে। হাসি মুখে মেয়ে দেখার নামে রাজী হয় তারপর উধাও। চারুকলায় উড়নচন্ডী হইলেও বাসায় সে লক্ষী মেয়ে।

টেনশনে মামা একবার ঘরে আসছে। একবার বাইরে। ঘেমে নেয়ে একাকার। নিশি ফেরেনি। মাঝে একবার ফোন দিয়ে বলেছে বাবা আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করেনা। পুটুর বিয়েটা দিয়ে দাও। পাত্র ভাল। পুটুর অনেক সুখ পাওনা আছে।
নিশির মা রেগে বোম হয়ে আছে। যে কোন সময় ফেটে যেতে পারে।
সিমু ভাই বাঁকা চোখে একবার পুটু কে দেখে গেছে। যেন এসব তার ইচ্ছে করে করা।
পাত্রপক্ষ ড্রইং রুমে। ঘন ঘন ঘড়ি দেখছে ছেলে! নিশির ফোন বন্ধ। পুটুর ইচ্ছে করছে বসে বসে হাত কামড়াতে। আপু আসো। তাড়াতাড়ি আসো আপু প্লিজ। দোহায় লাগে আপু। পাওডার বুলাইতে তিন ঘন্টা লাগে! ও আপু আসো আসো আসো!

মামি পুটু কে ডেকে গম্ভীর হয়ে বললো পিনাশ তুমি একটু সেজে গুজে নাও। তোমার মামা নাস্তা নিয়ে তোমাকে ভেতরে যেতে বলছে।আর দেখো ছেলেটাকে পছন্দ হয় কিনা।
পুটুর তো মুখ শুকিয়ে এতটুকু। কি বলছে এসব মামি? নিশি আপু এ কোন বিপদে ফেলে গেল তাকে! এই ছেলে যখন জানবে বাপ মা তো নাই উল্টা মামার ভিক্ষায় তার বৌ পড়ালেখা করে উস্টা খেয়ে পড়তে টাইম লাগবেনা!

মামা আঙ্গুল ফুটাইতে ফুটাইতে বলছিলো এত ভাল ছেলে হাত ছাড়া করার মানে হয়না। নিশি বিয়া করবেনা, না করুক। পিনাশের বিয়ে তো দিতেই হত। তুমি না বইলোনা নিশির মা?
পাশের ঘর থেকে পুটু এসব শুনতে পাচ্ছে আর অস্থিরতা বাড়ছে। ডায়াল করে যাচ্ছে সমানে নিশি আপুর মোবাইলে! সুইচড অফ! কোনো মানে হয়!


বাসা থেকে বের হয়ে মিচকা হাসি দিয়া নিশি রাহাতের মেসে চলে যায়। এই গুবরে পোকা, তুই কি মনে কইরা এখন ও ঘুমাস? আমি বাড়িতে যুদ্ধ বাধায়া বাইর হইয়া আসছি আর তুই নাক ডাকতেছস?
এসব কথায় পাত্তা দেয়ার দরকার নাই। রাহাত মুখটাকে দেয়ালের দিকে ঘুরিয়ে কানে হাত চাপা দিয়া আবার ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকে। কাল সারারাত হিন্দী মুভি দেখেছে। তারপর একটা কাঠের গুড়িকে কেটে কুটে একটা ফর্ম এ আনতে পেরেছে। এখন বসলেই সে ফুটিয়ে দিতে পারবে একটা বৈষ্ণবীর মুখ!
সকালে বাজার করে এনে বুয়ার হাতে দিয়া ঘুমাইতে আসছে। এত তাড়াতাড়ি উঠার মানে হয়না। তুই ভাগ! মনে মনে বলতে বলতে রাহাত আবার ঘুমাই পড়তেছিলো। ওঠ ওঠ বলছি! মহিষ কোথাকার! পিঠের উপর ধুম ধুম করে বালিশের বাড়ি পড়তেছে। কি যন্ত্রনা! এই মাইয়ার হুশ নাই? এই গরমে কেউ এভাবে মারে? বালিশের পলিস্টার কাপড়ে পিঠের চামড়া ছিলা যাইতেছে! চোখ গরম কইরা তাকাইলে হয়! মাজারের সিন্নি! কিন্তু চোখ খোলাই তো মুশকিল!

রবীন্দ্র সরোবরের কাছটায় একটা চমৎকার রেস্টুরেন্টে বসে আছে নিশি। বহু কষ্টে রাহাত কে টেনে তোলা গেছে! এখন ও চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে! সামনে চায়ের কাপ। এই ছেলেটা কোনদিন বুঝবেনা? কেমন লাগে নিশির! সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষন। আজ যে করেই হোক বলবেই সে। যদি রাজী হয়ে যায় আজ রাতেই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে তার প্রিয় কবিতা পড়ে শোনাবে ! রাহাত হাসবে! হাসুক! সে বলবেই।

'' সবচেয়ে উঁচু তারাকে আমি বলি
এই চুমুটার আলো আমার সেই ছেলেটার চোখে দাও ঢেলে দাও!
হ্যা তুমিই! তুমি তুমি তুমি
আমার মুখে আলো হয়ে গেলে!
আমার মনে আছে। আমি দিব্যি দেখি কি করে ঘুম হয়ে যায়
তোমার মেঘের আলো!
আর মেঘেরা চুপ করে পালালো।''

রাহাত আমাকে বিয়ে করবি?
কি? ছিটকে মুখ থেকে চা পড়ে যায় রাহাতের। প্রেম করেছিস তুই আমার সাথে? যে বিয়া করবো আমি? তোর আমেরিকা প্রবাসীর কি খবর? বুলবুল পাখি?ঐ! হঠাৎ মনে পড়ে গেছে এরকম ভঙ্গী রাহাতের। তোরে না আই্জ দেখতে আসার কথা?

খবরদার! নিশি চোখ পাকায়। ছেলেটার নাম বুলবন। বেশ কিছুদিন ফোনে কথা হয়েছে। আর প্রতিদিন কার এ টু জেড রাহাত জানবে এটাতো স্বাভাবিক। হু আসছে তো। একটু আগেও আব্বা ফোন দিলো দেখলিনা? ড্রইং রুমে বইসা আছে।

কি? তাইলে তুই এইখানে কেন? চরম বিস্ময়! তুই জানিস না আমার অবস্থা?বুলবুল পাখিরে বাদ দিয়া তোর কেমনে আমার মত চামচিকা পাখির কথা মাথায় আসলো আগে সেইটা বল।
দেখ এরকম আলুর মত কইরা তাকাবিনা।বিস্ময়ের কি আছে?
বিয়া করবি কিনা বল!
অনেকক্ষন চুপচাপ থাকার পর একসময় রাহাত উঠে বলে চল।
কোথায়?
কাজি অফিসে! খবরদার হাসবিনা। দাঁত বন্ধ! কি? শাড়ি কিনে দিতে হবে? লাল টকটকা শাড়ি কিনি আগে চল।
ছ্যা! লাল টকটকা? না না এখন এইসব রং চলে না। জানোস না?
আমার কাছে চলে। আমার একমাত্র প্রথম বৌ লাল শাড়ি পরবে এইটা আমার কৈশোর কালের স্বপ্ন! তার আগে বিয়ার একমাত্র শর্ত! আমারে আজীবন আপনি বইলা সম্মানের সাথে সম্বোধন করবি। বল রাজী?
-কবুল!
খিল খিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ছিলো নিশি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০১
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×