somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাট সাহেবের তিন পা অলা কুকুর ও আমি!

১৫ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজ আমল। লাট সাহেব স্কুল পরিদর্শনে আসবেন।সবার সে কী ব্যস্ততা। লাট সাহেব গোসসা হন এমন কিছু যাতে চোখে না পড়ে তাই নিয়ে সবাই শশব্যস্ত। লাট সাহেবের মেজাজ মর্জির উপর স্কুলের অনুদান নির্ভরশীল।
পন্ডিতমশাই ব্রাক্ষ্মণ মানুষ। সকাল বেলা সূর্য স্নান সেরে জপ-তপ করতে করতে ধুতি পড়েই স্কুলে চলে আসতেন। গাঁয়ের পৈতাখানিই ছিল উর্ধাঙ্গের পোষাক। ওইদিন যেই না স্কুলে তিনি উপস্থিত হলেন সবাই পন্ডিত মশাইকে জেঁকে ধরল এবং শুধালো-
এ কী পন্ডিত মশাই! বৃদ্ধ বয়সে এসে আপনি দেখি আমাদের ভাতে মারবেন। লাট সাহেব এসে যদি আপনাকে খালি গাঁয়ে এ অবস্থায় দেখে তখন আমাদের কী অবস্থা হবে বলুন তো!
পন্ডিতমশাই আকস্মিক সবার বাক্যবাণে খেই হারিয়ে ফেললেন। অল্পক্ষণপর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেন-
এখন কী করতে পারি বাপু, বলো দেখি?
সবাই তখন মিলে কোত্থেকে একটা সোয়েটার যোগার করে এনে পন্ডিতমশাইকে দেয়।
পন্ডিত মশায়ের আবার উর্ধাঙ্গে কিছু পড়ার অভ্যাস নেই। তবুও লাট সাহেব বলে কথা। স্কুলের সবার ভবিষ্যৎ যেখানে জড়িত সেখানে সামান্য সোয়েটার তো ছাড়। তীব্র গ্রীষ্মে তিনি কম্বলের জ্যাকেট গাঁয়ে চড়াতেও প্রস্তুত।
কিন্তু বিপদ ঘটলো যখন সোয়েটার গায়ে দিলেন। অনভ্যাসের শরীরে হঠাৎ কাপড় জড়ানোর সাথে সাথে পন্ডিতমশাই সারা গাঁয়ে সে কী চুলকানি শুরু করলেন। বুকে, পেটে, কাধেঁ, পিঠে বিচিত্র অঙ্গ ভঙ্গিমায় চুলকাতে লাগলেন তিনি। মুহূর্তে পুরো শরীর ফোলে লাল আলুর মত রঙ ধারণ করল। পন্ডিতমশাই কাপড়খানি গায়ে বেশিক্ষণ রাখতে পারলেন। বদমাস ছেলেগুলো রাগী পন্ডিতমশাইয়ের এহেন অবস্থা দেখে সে কী হাসি! যেন থামতেই চায় না।
যাই হোক। সমাধান হলো-যেই লাট সাহেব স্কুলে পদার্পণ করবেন তখনই কেবল তিনি সোয়েটারখানি পড়বেন।
যথারীতি লাটসাহেব স্কুল পরিদর্শনে আসলেন এবং সোজা গিয়ে ঢুকলেন পন্ডিতমশাইয়ের ক্লাসরুমে। ইতোমধ্যে পন্ডিতমশাই সোয়েটার পড়ে নিয়েছেন। লাটসাহেব ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের এটা-সেটা জিজ্ঞেস করছেন। কেউ উত্তর দিতে পারছে কেউ পারছে না। ওই দিকে চুলকানিতে পন্ডিতমশাইয়ের অবস্থা দিশেহারা । লাটসাহেবের সামনে না পারছেন চুলকাতে, না পারছেন সোয়েটার খুলে ফেলতে। দাঁতে দাঁত চেপে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে কোন রকমে তিনি ভয়ানক সময়টা পার করলেন।
অল্প সময় পরই লাট সাহেব চলে গেলেন।
লাট সাহেব যাওয়ার সাথে সাথে পন্ডিতমশাই সোয়েটার খুলে ফেললেন এবং চোখ বন্ধ করে আরাম করে কতক্ষণ পুরা শরীর চুলকালেন। পন্ডিতমশাকে এরকম জব্দ হতে দেখে ছাত্ররা মনে মনে সে কী খুশি!
হঠাৎ পন্ডিতমশাই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
এতদিন আমি তোদের শুধু ধর্মই পড়িয়েছি। আজ গণিত পড়াবো। দেখি, তোরা কেমন গণিত পাড়িস।
পন্ডিতমশাই ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন-
তোরা কী লাটসাহেবের কুকুরটিকে দেখেছিস? সবাই হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।
আচ্ছা, বল দেখি লাটসাহেবের কুকুরের কয়টি পায় ছিল?
জবাব এলো তিনটা।
(কুকুরটির একটা পা একসিডেন্টে ভেঙ্গে গিয়েছিল বলে-তিন পায়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিল, যা কারো নজর এড়াইনি।)
এবার পন্ডিতমশাই ছাত্রদের একটি অংক করতে দিলেন। ছাত্ররা খাতা কলম নিয়ে অংক কষতে প্রস্তুত। পন্ডিতমশাইয়ের প্রশ্ন-
লাটসাহেবের তিন পা অলা কুকুরের পেছনে মাসে যদি ৭৫ টাকা খরচ হয়। আর আমি, আমার স্ত্রী, বিধবা বোন, দুই ছেলে মেয়েসহ আমার বেতন যদি ২৫ টাকা হয়, তবে লাটসাহেবের কুকুরের কয় পায়ের সমান আমার পরিবার?
সবাই নিশ্চুপ। কোন শব্দ নেই। এতক্ষণের হাসি-তামাসা মুহূর্তে কোথায় যেন উড়ে গেল। তারা ভাবতে লাগল এ ক! এটা কী ধরনের অংক। তাদের বুঝতে আর কিছুই বাকী রইল না।
পন্ডিতমশাই বারবার করে বলে যাচ্ছিলেন-
উত্তর দে? উত্তর দে?
তারা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।


(বিঃদ্রঃ পন্ডিতমশাইয়ের জায়গায় এখন আমি। ৮নং লোকাল সিটিং সার্ভিস এখন আমার নিয়তি।)
আগের পোস্টে বিস্তারিত
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারকে সবাই কৃত্রিম সন্মান দেখায়েছে, বেনজিরকে মিথ্যা স্যার ডেকেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



এমপি আনার ৪/৫ শত ক্যাডারকে লালন পালন করতো, সবাই তাকে "ভাই" ডাকতো; কত কলেজের শিক্ষক, প্রিন্সিপাল, থানার দারোগা উনাকে স্যার ডেকেছে; পার্লামেন্ট ভবনে উনাকে কত আদর করে খাবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×