somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষাক্ষেত্রে এই অস্থির সময়ে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা

১৫ ই জুন, ২০১২ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি শিক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি অস্থির অবস্থা দেখা দিয়েছে দেশে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষ, শিক্ষকদের ধর্মঘট, মৌন মিছিল, ভিসি হঠাও আন্দোলন, পদত্যাগ উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিতে, বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন, প্রাইমারী রেজিস্টার্ড শিক্ষকদের আন্দোলন শিক্ষা ক্ষেত্রে অশনি সংকেতই দিচ্ছে।

শিক্ষকরা এ সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত পেশাজীবী গোষ্ঠী। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আর্থিক দিক দিয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ভালো নেই। অথচ দেশের মোট শিক্ষকতা পেশাজীবীর শতকরা নব্বুই জনই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। আর্থিকভাবে পঙ্গু এই শিক্ষকরা সব সরকারের আমলেই দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাঝে মাঝে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধানে কথা উঠে আবার ধামাচাপা পরে যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা। অথবা শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকা রাজনৈতিক নেতারা চান না শিক্ষাক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো সমাধান হোক।

শিক্ষকদের আর্থিক সমস্যা সমাধানে মাঝে মাঝে আলাদা বেতন স্কেল প্রণয়নের দাবি উঠে। আলাদা বেতন স্কেল করতে গেলে বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে নানান ঝামেলা লেগে যাবে এবং একারণে আলাদা বেতন স্কেল বাস্তবায়ন দেরি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা বেতন স্কেল একটি অন্যতম উদাহরণ। তবে উন্নত দেশে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল আছে এবং সেসব দেশে শিক্ষকদের চাকুরিটা খুবই সম্মানের। আর আমাদের দেশে শিক্ষকরা ন্যূনতম জীবনধারনের জন্য প্রাণপাত করে ফেলে। ঋণভারে জর্জরিত শিক্ষকদের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা আজ সম্মানও পায় না।

শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করতে হবে আন্তরিকতা নিয়ে। একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করে এটা করতে হবে। যদি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন থাকতে পারে তাহলে স্বাধীন একটি শিক্ষা কমিশন অবশ্যই জরুরি। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ এই কমিশনের দায়িত্বে থাকবেন। উটকো কোনো রাজনৈতিক খবরদারী, মাতব্বরী কমিশনের উপর ফলানো যাবে না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে আটটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে কিন্তু কোনো কমিশনের সুপারিশই সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এর একমাত্র কারণ ছিল কমিশনগুলোর রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেওয়া সুপারিশসমূহ। আর এগুলো ছিল অস্থায়ী।

একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন কেনো প্রয়োজন? স্বাধীনতার পর থেকে এই চল্লিশ বছর পর্যন্ত দেখে দেখে মনে হয়েছে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন খুবই প্রয়োজন। রাজনৈতিক সরকারগুলো শিক্ষাকে গিনিপিগ হিসেবে নিয়েছে। ম্যানেজিং কমিটিকে রাজনৈতিক নেতাদের ক্লাব বানিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত এই নেতারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিজেদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে শিক্ষার বারোটা বাজছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিশন প্রয়োজন এ কারণে যে, শিক্ষাকে প্রথমেই রাজনীতিমুক্ত করতে হবে। এই স্বাধীন কমিশন শুধু শিক্ষার উন্নয়ন নিয়েই থাকবে। এই কমিশন গবেষণা করবে শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যা কি। সমস্যার সমাধানও করবে কমিশন। কোনো অর্ধশিক্ষিত রাজনীতিক কিংবা সাংসদের করুণার উপর নির্ভর করে বসে থাকতে হবে না। রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে শুধু আমলাদের বসিয়েও সমস্যার সমাধান করা যাবে না। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তারা কোচিং ব্যবসা করেন, ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী নন ইত্যাদি ইত্যাদি। কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানান রবও উঠেছে।

কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া সমস্যার সমাধান নয়। ভিন্ন নামে তা দেখা দেবে। আজকাল অভিভাবক কর্তৃক সন্তানদের শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়ার কালচার গড়ে উঠেছে। অনেকে এটাকে স্ট্যাটাস হিসেবেও দেখছেন। অনেকে কোচিং সেন্টার দিয়ে শুরু করে সেটাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছেন। সেদিন কোথায় যেনো দেখলাম ই,হক কোচিং সেন্টারের মালিক ই.হক কলেজ বানিয়ে ফেলেছেন। বিজ্ঞ শিক্ষামন্ত্রীর উচিত হবে কোচিং বন্ধে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ধীরে সুস্থে আগানো।

শিক্ষাকে রাজনীতি থেকে বের করে আনতে হলে প্রথমেই শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনই বুঝবে শিক্ষকদের বেতন কি পরিমাণ বাড়ানো যায়। এই কমিশনই বুঝবে কোচিং সেন্টার বন্ধের সময় কখন হবে। একজন শিক্ষকের বেতন যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে একজন প্রাইমারী পাস রাজনৈতিক নেতা বা সাংসদের করুণার উপর নির্ভর করে তারচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অর্ধশিক্ষিত নেতারা।

শিক্ষকদের আর্থিক দুর্বল রেখে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকদের মধ্যে রাজনৈতিক চাটুকারিতা চরম পর্যায়ে উঠেছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যখন সরকারের দালালি করেন তখন শিক্ষার দৈন্যদশাই ফুটে উঠে। একজন প্রাক্তন ভিসি যখন একটি সরকারি পদ বাগিয়ে নামের সীলে 'উপমন্ত্রী' লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তখন 'ভাইস চ্যান্সেলর' পদটি মলিন হয়ে যায়। উপায় কি! মন্ত্রী এমপিরাই যে রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি! একজন রাজনীতিবিদের ঘনিষ্ঠ থাকাটা এখন ক্ষমতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন এমপি/মন্ত্রীর আনূকূল্য পাওয়াটা এখন ভালো অবস্থানে থাকার পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সব সমস্যাই ধীরে ধীরে সমাধান হয়ে যাবে যদি একটি স্বাধীন শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। তবে অবশ্যই আইনের মাধ্যমে এই কমিশনকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তবে শিক্ষা কমিশনও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। তাই শিক্ষাকে বাঁচাতে হলে শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১২ রাত ৩:৩৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×