somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেবু সমাচার

২২ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুরের কাঠ ফাটা রোদে ভার্সিটি থেকে বাসার গলিতে রিকশা বিদায় দেওয়ার পর পর-ই আমার প্রথম কাজ এলাকার কাচা বাজার থেকে এক হালি লেবু কেনা । লেবুর শরবত হল আমার মত গরিবের গ্লুকোজ । একদম হালাল আর একশো পারসেন্ট ন্যাচারাল । ক্লান্তি ও দূর হয় আর শরীর ঠাণ্ডা করে ফটাফট । লেবু কেনার পর ই গলির মাথায় মুদির দোকানে যাই চিনি কিনতে । দুপুর দুইটার পর মুদি দোকানদার নিজে থাকেন না , তার প্রাইমারি ইস্কুল পড়ুয়া ছেলেকে দোকানে বসিয়ে যান । সেই ছেলেকে দেখলেই হাসি মুখে বলি - চিনির কেজি কত ?
- ৫০ টাকা । কয় কেজি লাগবে ?
- আমাকে আড়াইশো গ্রাম দাও ।
- আড়াইশো মানে কত ?
- আড়াইশো মানে দুই শত পঞ্চাশ গ্রাম । এক হাজার এর চার ভাগের এক ভাগ ।

ছেলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে চিনি মাপতে যায় । আমিও অপেক্ষা করি । ডিজিটাল মিটারে চিনি মাপে । তার অদ্ভুত সমস্যা হল সে ২২০ গ্রাম মাপার পর আস্তে আস্তে কমিয়ে বস্তায় রাখতে থাকে । যখন বলি , বাবা আড়াইশো গ্রাম হতে তো আরও ত্রিশ গ্রাম চিনি লাগবে । তখন সে চিনি আরও কমিয়ে বস্তাতে রাখতে থাকে । আরও একটু জোরে যখন বলি বাবা , চিনি তো আরও লাগবে । তখন আবার বস্তা থেকে অল্প অল্প চিনি মেপে দিতে থাকে । কিন্তু কখনও সে আড়াইশো গ্রাম চিনি আর মাপতে পারে না । মাপ ঠিক রাখতে গিয়ে সে সব সময় আমাকে ৫-১০ গ্রাম চিনি বেশি ই দিয়ে ফেলে ।
গরমের ভিতর এক সময় অধৈর্য হয়ে বলি - তুমি বরং আমাকে ৫ গ্রাম চিনি কম ই দাও , এটা এমন বড় কিছু না । কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না ।

এরপর যখন দাম দিতে যাই , তখন শুরু হয় আরেক ধইর্জের পরীক্ষা । সে ক্যালকুলেটর অনেক গুলো বোতাম টিপতে থাকে । কিন্তু টাকার অঙ্ক টা সে আর কখনোই বের করতে পারে না । মাথা চুল্কায় ।

- বাবা , মাথায় কি উকুন ?
- জী, না । ( ভস্ম দৃষ্টি তে তাকায় আমার দিকে , এর একটু হলেই মান হানির মামলা করবে এমন অবস্থা )
- বাবা , এক কেজি চিনি পঞ্চাশ টাকা হলে আড়াইশো চিনি বারো টাকা পঞ্চাশ পয়শা হয় । পঞ্চাশ পয়শা তো নাই তুমি তের টাকাই রাখ ।

তার সন্দেহ হয় আমি কম কম বলছি , নিশ্চই আমি তাকে ঠকাচ্ছি । সিউর হওয়ার জন্য সে আবার ক্যালকুলেটর এর দিকে তাকায় । শেষ পর্যন্ত কোন গতি করতে না পেরে ১৩ টাকা ই রেখে দেয় । তবুও তার মনে সন্দেহ কমে না । সন্দেহ কমানোর জন্য তাকে ঐকিক নিয়মের হিসেব টা একটু মনে করিয়ে দেই ।

- শোন , এক কেজি তে হয় এক হাজার গ্রাম । আড়াইশো গ্রাম হল এক কেজির চার ভাগের এক ভাগ । তাই তোমাকে আমি দিলাম পঞ্চাশ টাকার চার ভাগের এক ভাগ মানে বার টাকা পঞ্চাশ পয়শা । পঞ্চাশ পয়শা বেশি ই আছে । আর কোন ক্লাসে পড় তুমি ? বাসায় গিয়ে ঐকিক নিয়ম টা একটু ভাল করে দেখ । বাপের ব্যাবসা তো ভবিষ্যতে তোমাকেই সামলাতে হবে । তাই পাটি গনিতা না শিখলে কিন্তু কোন গতি নাই ।

লজ্জিত ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে দেয় সে ।

অনেক লেকচার , অনেক উপদেশ শেষে বাসায় ফিরে লেবুর শরবত বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি । এক গ্লাস ঠান্ডা পানি , ৭-৮ চামচ চিনি , একটা সম্পুর্ন লেবুর রস আর কয়েক চিমটি লবন । ব্যাস , জীবন ডা বাচাইলা ! শিগগিরি কয়েক গ্লাস দাও টাইপ ড্রিঙ্ক !

নটরডেমে পড়াকালীন আজমল স্যার বলতেন - যখন ই ক্লান্তি আসবে তখন ই লেবুর শরবত খাবে , এই শরবত দ্রুত শরীরে মিশে যায় আর ইন্সট্যান্ট এনার্জি দেয় । ব্রেইন ও ঠান্ডা করে । মাড়ির সমস্যা কমায় । চর্বি কাটতে সহয়তা করে । সব সমস্যার ওয়ানস্টপ সল্যুশন ।

সেই থেকে আজ অবধি যখন ই লেবুর শরবত দেখি , আজমল স্যার এর কথা মনে পড়ে । আর বিছানায় গা এলিয়ে লেবুর শরবতের গুনাগুন ভাবতে ভাবতে তলিয়ে যাই প্রশান্তির এক ঘুমের জগতে - সে জগত শুধুই সবুজ আর লেবুর সুবাসময় ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×