ইন্টারপোল হচ্ছে বিশ্বের ১৯০ টি দেশ নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা। ইন্টারপোলের মাধ্যমে অপরাধীদের আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও আটকের কাজটি সমন্বয় করা হয়। আধুনিক কালে সন্ত্রাসীসহ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, পুরাকীর্তি, মুদ্রা ইত্যাদি পাচার প্রতিহত করা এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ইন্টারপোল বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক চোরাচালানী দল এ দেশের অসংখ্য মহামূল্যবান পুরাকীর্তি (ব্রঞ্জ ও প্রস্তুর নির্মিত দেব-দেবীর ভাস্কর্য) বিদেশে পাচার করে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমান রুপসী বাংলা) থেকে বিদেশে পাচারের জন্য সংগৃহীত ৬৮ টি বিভিন্ন ধরনের মহামূল্যবান ভাস্কর্য নিদর্শন উদ্ধার করে। স্বধীনতা লাভের পর পুরাকীর্তি পাচার এতই বৃদ্ধি পায় যে, শেষ পর্যন্ত দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রান্ত হতে থাকে, আঞ্চলিক ছোট-খাট জাদুঘরগুলোতে চুরি-ডাকাতি আরম্ভ হয়। এক কথায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দারুণ হুমকির মুখে পতিত হয়। এ সব অপরাধ যারা পরিচালনা করত তাদের অনেকেই ছিল দেশী-বিদেশী, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। রাষ্টীয় আইনের ফাঁক দিয়ে তারা প্রায়শই পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেত। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বেসরকারী পাচার মাধ্যমগুলোয় দেশের পুরাকীর্তিসমূহের পুনরুদ্ধারের জন্য গণ-দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। ঠিক তখনই বাংলাদেশ ইন্টাপোলের সদস্য পদ গ্রহণ করে।
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ইন্টাপোলের সদস্যপদ গ্রহণের পর বিদেশে পাচারকৃত পুরাকীর্তিসমূহ ফিরিয়ে আনতে পারেনি সত্যি তবে পাচারকৃত পুরাকীর্তির উপর জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিচালনায় সফলতা অর্জন করেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে পুরাকীর্তি আইন গঠনে ভূমিকা রাখে।
যে সংস্থাটি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৯ টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছিল, ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তার সদস্যভুক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫-তে পৌঁছে। ইন্টারপোলের কর্মকান্ডের ব্যাপক পরিধি ও সক্রিয়তার গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এর সদস্য দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে একশ’তে উন্নীত হয়।
ইন্টারপোলের সদস্যভুক্তির পর বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন সময়ে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক অপারাধ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ভূমিকা ও প্রচেষ্টার বিষয়ে ইন্টারপোলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাংলাদেশ ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে এ সংস্থার নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয় এবং মূল্যবান পরামর্শ ও নতুন পরিকল্পনা দিয়ে সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:১৭