somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংলিশ ফর টুডে

১৩ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংলিশ ফর টুডে। আজকের জন্য ইংরেজি। গত বা আগামীকালের জন্যে নয়। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সবারই এই সিরিজের বইগুলি একবার করে গিলে ফেলার কথা। কেউ কি ফেলে? আচ্ছা আমরা দেখি গিলে না ফেলার কারণে কী ফল হতে পারে।
গিলে না ফেললেও ক্ষতি তো কিছু হয় না। ম্যাড়মেড়ে তুলতুলে পাঠ্য বই বাদে বাজারে রয়েছে রঙবেরঙের মডেল কোশ্চেন বই। সেগুলো একবার মুখস্থ করে ফেলতে পারলে কার সাধ্যি পরীক্ষায় আটকায়? সচরাচর—এদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আর বিকল্প না খুঁজে পরীক্ষায় কমন পড়ার নিশ্চয়তার আশায় এসব মডেল বই চর্চা করে। তাদের দোষও আসলে নেই। যেখানে শিক্ষকেরা ওর বাইরে আর প্রশ্ন করবেনই না, তখন খামোখা ঝুঁকি নিয়ে লাভটা কী?
কথা হল, কমিউনিকেটিভ সিস্টেমের এসব পাঠ্য বই কেন পড়া হয়ে থাকে না?
যাদের মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতির সাথে সরাসরি যোগ আছে, এটা তাদের অজানা নয়, যে ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন পদ্ধতি অত্যন্ত অদ্ভুত ধরণের। প্রায়শ এমন সব প্রশ্ন থাকে, যাতে ভাষার চর্চা থেকে আলোচ্য প্যাসেজ চর্চায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। ভাষার যথেষ্ট দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও একদম অচেনা প্রশ্নে যে কারও মাথা চুলকাতে হয়। ক্লাসরুমে পড়া-বলা-শোনা-লেখা এগুলোর চর্চা হয়ত কোথাও সত্যিই হয়ে থাকে, তবে আমার জানামতে তেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমি পাই নি। তারপরও প্রশ্নটা অতটা ভয়ঙ্কর হত না, যদি না তাতে সহজে সব কমন পড়বার নিশ্চয়তা অন্তর্হিত থাকতো। ভালোমতো কমিউনিকেটিভ সিস্টেম চর্চা করে বড়জোর “A” গ্রেডের মার্ক আশা করা যায়,—এর বেশি কিছু নয়। যেখানে “A+” এর ছড়াছড়ি, সেখানে A গ্রেডের মূল্য কোথায়?
কাজেই আমরা দেখলাম ইংলিশ ফর টুডে বইকে বেনোজলে পার করে দিলেও সমস্যা হচ্ছে না।
এখন কথা হল, আছে কী এই বইতে?
আছে অদ্ভুত জিনিস। সব শ্রেণীর সব বইতে ঘুরেফিরে যে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে, “পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে” একটা বড় সাইজের গ্রাম হয়ে গেছে। একে বলা হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। ইংরেজি এই গ্রামের প্রধান ভাষা। তুমি গ্রামে থেকে এই ভাষা শিখবে না, তা হবে না।
এই বই কি ভাষাশিক্ষা দেয়? দেয় হয়তো। সেটা নিউজ-পেপারের ভাষা। গঠনগত আর অর্থগত দিক দিয়ে দুর্জ্ঞেয় একটা ভাষা। তাতে কোনও প্রাণ নেই, কোনও সাহিত্য হয়না সে ভাষায়। কেউ খুব চেষ্টা করে এই ভাষাটা হয়তো শিখে নিতে পারবে, কিন্তু কখনো আত্মস্থ করে উঠতে পারবে না। সংবাদ পরিবেশনের জন্যে ভাষা আত্মস্থ করবার প্রয়োজন হয় না। যেটা প্রয়োজন সেটা হল তথ্য পরিবেশন।
কোনও এক অদ্ভুত কারণে বইয়ের লেখকদের ধারণা জন্মেছে ছেলেমেয়েদের মাথায় ঢুকোতে হবে, এন.জি.ও. ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাতেই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। দেশ উন্নতি করবে, তার জন্যে তো সময় লাগবে। ব্রিটিশ আর আমেরিকানদের অন্ধভাবে মান্য করতে হবে। ওনারা যে আমাদের পথের দিশা! তাঁরা যেমন চাইবেন, কথা সেভাবেই কইতে হবে, সেভাবেই দুনিয়া চিনতে হবে!
আমার লেখায় যদি মনে হয়ে থাকে আমি ইংলিশ ফর টুডের উপর বেশি অনাচার করে ফেলছি, তাহলে আপনারাই বলুন, আমাদের দুনিয়ার এত এত স্থাপত্যকির্তী থাকতে কেন স্ট্যাচু অভ লিবার্টি বিষয়ে জানতে হবে? বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় কেন ইঁদুর দৌড় দৌড়াতে হবে? এই বিশ্বায়ন তো নতুন কিছু নয়—এর যে চিরচেনা একটি নাম সকলেই জানে—নব্য সাম্রাজ্যবাদ! দুনিয়াকে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে লুটেপুটে খাওয়ার ফন্দি। এটাই কি পুঁজিবাদের চূড়ান্ত রূপ নয়?
মজার কথা হল, উচ্চ মাধ্যমিক ইংলিশ ফর টুডে বইতে আবার পুঁজিবাদ বিষয়ে সাবধানবাণী আওরানো হয়েছে। সবাই যদি নিজ পকেট ভরতে চায়, তাহলে মানব সভ্যতার কী হবে গো???
অনেক কথা হল। আমাদের বাংলা বইয়ে যখন বলা হচ্ছে বারে বারে বিপ্লবী চেতনায় জেগে উঠতে, তখন তার সমান্তরালে ইংরেজি পাঠ্য বইতে আমলা মানসিকতা কেন শেখানো হচ্ছে, সেটা আমার বোধগম্য হয়নি।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×