somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ২

১২ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মচর্চায় চরমপন্থা যুগ যুগ ধরে কেবলই সঙ্কট, অনৈক্য ও বিপর্যয় তৈরি করে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি-বুদ্ধি-বিবেকের দেয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ব্যক্তিগত প্রবৃত্তির পছন্দের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমতের অন্ধ অনুসরণ এবং গৌণ, সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয়ে অনড় অবস্থান গ্রহণ, চুলচেরা বিশ্লেষণ ও বাড়াবাড়ির ফলে মুসলিমদের মধ্যে দিনদিন দল বাড়ছে, কিন্তু বল বাড়ছে না। ভুলশুদ্ধির প্রশ্ন একবার স্থগিত রেখে যদি আমরা শিয়া, খারিজী, জাহমিয়া, কাদারিয়া, জাবারিয়া প্রভৃতি সম্প্রদায়গুলির বিশ্বাসের কেবল অবস্থান ও চারিত্র নিরীক্ষণ করি, তাহলে প্রকটভাবে চোখে পড়বে তাদের চরম অবস্থা ও প্রান্তিক অবস্থান। এদের দলিল-প্রমাণের বিশাল স্তূপ যতোই ঘাঁটাঘাটি করা হয়, ততোই ক্রমশ তর্কের তলে তলিয়ে যাওয়া যায় – কিন্তু মানুষের জন্যে শান্তির যে একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে ইসলাম এসেছে, ওসব তর্কের ভিড়ে সেই উদ্দেশ্যটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আধুনিক সময়ে চিন্তার জগতে নতুন আলো এসে পড়েছে, শুদ্ধতাবিচারের বহু নতুন উপকরণ ও মানদণ্ড আমরা হাতে পেয়েছি, ফলে দু’-একটি বাদে পুরনো দিনের গুরুতর ভ্রান্তিগুলি অতীতের গর্ভে সমাহিত হয়েছে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে ইতস্তত যেটুকু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চরমপন্থার উপস্থিতি দেখা যায় তা প্রধানত মৌলিক আকীদাগত সমস্যা নয়, বরং আচরণগত ভারসাম্যহীনতা। জঙ্গি সংগঠন, ফাতওয়ার অব্যবস্থ প্রয়োগ এবং ধর্মের নামে প্রচুর রাজনৈতিক দল-মত ও অরাজনৈতিক প্রথা-পদ্ধতির উদ্ভব এর উদাহরণ। বিশ্বময় পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী তাগূতিশক্তির দাপট এবং এর প্রতি মুসলিম দেশের শাসকদের আত্মঘাতী আনুগত্যের প্রেক্ষাপটে ইসলাম তথা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ও মযলুম মুসলিম জনগণের অস্তিত্ব ও স্বার্থ রক্ষার জায়গাটি ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে ওঠার নিরুপায় প্রতিক্রিয়া হিসেবেই শুরু হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে অধিকার আদায়ের প্রাণপণ লড়াই এবং যুলমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদ। প্রচারমাধ্যমের একচ্ছত্র মালিকানার সুবাদে নির্যাতিত মুসলিমদের এ মুক্তিসংগ্রামকে ঢালাওভাবে ‘জঙ্গী তৎপরতা’ বলে প্রচার করে সাম্রাজ্যবাদীরা দুনিয়ার বিবেকবান মানুষকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করছে। এসব আদর্শিক প্রেরণাপ্রসূত আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে সময়ে সময়ে কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠি সীমালঙ্ঘন, অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থা অবলম্বন করেছে বটে, তবে সেজন্যে শুধু চরমপন্থীরা নয় বরং চরমপন্থার উদ্ভবের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী ও সাম্রাজ্যবাদী বা তার তাবেদার সংশ্লিষ্ট সরকারও দায়ী। কথিত জঙ্গীরাও মানুষ। তাদের উগ্রতা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু যুলম-দুঃশাসনে নিতান্ত অতিষ্ঠ হয়ে না উঠলে কী কারণে একজন মানুষ সুন্দর জীবনের স্বপ্ন ছেড়ে শরীরে বোমা বেঁধে ঠাণ্ডা মাথায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে যায়, সে-ও কি চিন্তার বিষয় নয়? জঙ্গীবাদ নিঃসন্দেহে চরমপন্থা ও বাড়াবাড়ি এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা নেহাত নির্বুদ্ধিতা। স্বঘোষিত যোদ্ধা সেই সরকারগুলো, যারা গণতান্ত্রিক দস্যু পরাশক্তি বা তার সঙ্গে গোপন আঁতাতের অপরাধী এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, তাদের উচিত প্রথমে নিজের অপবৃত্তির সঙ্গে যুদ্ধ করে কালিমামুক্ত হওয়া এবং তারপর দেশে সুশাসন কায়েম করা। দেশে শান্তি থাকলে বিদ্রোহ বা চরমপন্থার উত্থান ঘটে না। তা না করে যতোই যুদ্ধ করা হোক, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা স্থায়ীভাবে দমানো যাবে না। কারণ অসন্তোষের যে বীজ থেকে চরমপন্থার জন্ম হয়, তা বাহিত থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সুযোগ পেলেই সেটি শক্তিমান হয়ে আঘাত হানতে পারে। অতএব জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক চরমপন্থা দমনের একমাত্র পথ দেশে শান্তি ও সুনীতির প্রতিষ্ঠা।

ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ১
ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ৩
(অসমাপ্ত।)
───────────────
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ সকাল ৯:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×