গ্রামজুড়ে ভূতের ভয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সেখানে ভূত-প্রেত বাস করে। গ্রামের মানুষের ধারণা তা-ই। তারা মনে করে, পূর্বপুরুষদের প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায় গ্রামজুড়ে। মওকামতো কাউকে বাগে পেলে ভর করে তার ওপর। আছর করে নানারকম আজগুবি কাণ্ড ঘটায়। এ জন্য সেখানে ভূতের ওঝারও কমতি নেই।
বিবিসি অনলাইনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ভারতীয় ওই গ্রামটির এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জেন ডাইসন নামের একজন গবেষকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে প্রতিবেদনে।
হিমালয়ের ভারতীয় অংশে বনজঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম বামনি। সমতল থেকে প্রায় নয় হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থান। দুর্গম বলে আশপাশের এলাকা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন গ্রামটি। কৃষিকাজের অনুপযোগী। বেকারত্ব বিরাট সমস্যা। তবে এসব সমস্যা ছাপিয়ে গ্রামবাসীর বড় মাথাব্যথা ভূতের আছর।
বামনি গ্রামে সমাজ পরিবর্তনের ওপর গবেষণা করছেন জেন। সেখানে স্বামী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে বাস করছেন। একদিন সকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন:
‘ছোট ওই দোকানটিতে ভিড়বাট্টা ছিল। বাইরে বিশাল এক তিব্বতি কুকুর বাঁধা। কুকুরটি আসলে রাতের পাহারাদার। চিতার কবল থেকে গ্রামবাসীর ছাগল রক্ষা করাই তার মূল কাজ। আমার চার বছরের ছেলে ফিনকে দেখে আচমকা ঘেউ-ঘেউ করে উঠল কুকুরটা। আতঙ্কে চিত্কার করতে লাগল ফিন। আমি ওকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে শান্ত করার চেষ্টা চালালাম। এমন সময় দোকানি ভেতরের দিকে চলে গেল। ফিরে এল এক থুত্থুরে বুড়িকে নিয়ে। বুড়ি সোজা ফিনের দিকে এগোতে লাগল। তার হাতভর্তি ছাই। বুড়ির কাণ্ড দেখে ফিনের চোখ তো ছানাবড়া। ফিনের কাছে গিয়ে ওর মাথায় ছাই ছিটিয়ে দিল বুড়ি। নিচু স্বরে বিড় বিড় করে কী সব আওড়ে ছেলের মাথায় ফুঁ দিতে লাগল। এতক্ষণে খোলাসা হলো, ওই বুড়ি আসলে মনে করেছে যে ফিনের ওপর ভূতের আছর পড়েছে। ভূত তাড়াতে মন্ত্র আওড়ে ঝাড়ফুঁক করছে সে।’
একপর্যায়ে দোকানি মাথা নেড়ে জেনকে ইশারায় বোঝাল, এখন সব ঠিক আছে। ভূত চলে গেছে।
গ্রামবাসীর বিশ্বাস, বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণের সময় পূর্বপুরুষের আত্মা কারও শরীরে ভর করে। বিয়ের আসরে কনের ওপর আছর করতে পারে সে আত্মা।
অস্বাভাবিক কিছু আচরণের মাধ্যমে তা ধরা পড়ে। এ দৃশ্য যেন গ্রামটির সংস্কৃতিরই একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোনো শিশু বা কিশোর যদি খুব ডানপিটে হয় বা নিতান্ত খেয়ালবশে চুপ করে থাকে, কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা না বলে, তাহলে তার ওপর ভূতের আছর পড়েছে সন্দেহ করা হয়। তখন ওই প্রেতাত্মা তাড়াতে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়।
গ্রামবাসীর বিশ্বাস, গ্রামের চারপাশে গহিন বনে ঘুরে বেড়ায় অশুভ প্রেতাত্মা। এসব আত্মা তাদের মেরে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়।
গ্রামে এসব নিয়ে বেশ কিছু গল্পও চালু রয়েছে। গল্পগুলো সবাই সত্য বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। যদিও এসব গল্পের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
এমন এক গল্প মোহন সিং নামের এক কাঠুরেকে নিয়ে। মোহনের ভাষ্য, চার বছর আগে, শীতের এক সন্ধ্যায় বনে কাঠ কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাত্ অদ্ভুত এক লোক এসে গাছকাটার কারণ জানতে চায়। মোহনের ভাষ্যমতে, এ সময় এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অন্ধ বনে যান তিনি। ওই লোকটা তাঁর শার্টের কলার খামচে ধরে। তারপর হাতের এক তালুতেই এঁটে ফেলে তাঁর গোটা শরীর।
ওই অদ্ভুত লোকটির চুল ছিল কোমর সমান। একেকটি চুল শিশুর হাতের মতো পুরু। এরপর দেখা গেল অবিশ্বাস্য এক ভেলকিবাজি। লোকটি এক মিনিটের মধ্যে নয় ফুটের মতো লম্বা হয়ে আবার পর মুহূর্তে মুরগি বনে গেল। তারপর সে হাওয়া। প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মোহন। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর প্রেতাত্মা ভর করেছিল।’ পরে পূজা করে ছাগল বলি দিয়ে এই আছর থেকে রক্ষা পান বলে তিনি জানান।
এমন ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার কথা গ্রামের অনেকেই বলে থাকে। কয়েকজন শিক্ষিত যুবক বলেছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা।
তবে গ্রামেরই এক নারী গবেষক জেনকে বলেন, ‘আমি কখনো এসব দেখিনি, তাই আমি বিশ্বাস করি না। ’
গ্রামবাসীর বিশ্বাস, যারা উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত, তাদের ওপরই ভর করে ভূত। আর তাই বেকার তরুণদের নিয়ে বাবা-মায়ের বেশি ভয়।
ওই গ্রামে ভূত-প্রেত সত্যিই আছে কি না, এর কোনো জলজ্যান্ত প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেনি। তবে ভূতের ভয়টা বেশ ভালোভাবেই গ্রামবাসীর মনে শিকড় গেড়ে আছে।
সূত্র-প্রথম আলো
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আল্লাহর সাহায্য
দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডয়েজ ভেলে'র প্রকাশিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বাহিনী থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডে যুক্ত সৈনিকদের ইউ.এন. এর পিস কিপিং মিশনে পাঠানোর বিষয়ে ইউ.এন. এর কর্মকর্তাগণ বেশ উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে ডয়েচ ভেলে ক'দিন আগেই একটি প্রামাণ্যচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?
কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।
প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!
মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন