somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ মাল্টিভার্স

১১ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দূর্ঘটনাটা ঘটার পর থেকে আমি আমার ভেতর এক ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারছি। পরিবর্তনটা আমার জন্য খুব স্বস্তিকর হচ্ছেনা এবং এটা নিয়ে আমি চরম মাত্রায় বিরক্ত। অস্বীকার করার উপায় নেই আমি অনেকখানি ভীতও!

আমি আমার চোখের সামনে মৃতদের দেখতে পাচ্ছি। হ্যা, লোকে আমাকে পাগল ঠাওরাতে পারে, হয়ত ইতমধ্যে কিছু সন্দেহবাতিকগ্রস্ত পাঠক ধরেই নিয়েছেন যেহেতু দূর্ঘটনার পর থেকেই আমি মৃতদের দেখতে পাচ্ছি সেহেতু আমার ব্রেইন ট্রমা আমার স্বাভাবিক সাইকোলজিকাল ফাংশন ব্যহত করছে।

আসলে এমন কিছুই নয়। আমি সত্যিই মৃতদের দেখতে পাচ্ছি। যে দৃশ্যগুলো দেখছি তার বেশিই সম্ভবত নরকের; কষ্ট আর যন্ত্রনার। হঠাৎ দু' একটা স্বর্গীয় দৃশ্যও চোখে পরছেনা এমন নয়।

____________________দুইঃ______________________

ছোটবেলা থেকেই আমার সুপার হিরো হওয়ার শখ ছিল। ব্যাটম্যান, সুপারম্যান আর স্পাইডারম্যানের গল্প, কমিক পড়ে, টিভি সিরিয়াল দেখে একধরণের ফ্যান্টাসীতে ভুগতাম। এমনটা হয়ত সব শিশুই ভুগে থাকে। আসলে আমাদের শৈশবটাই একটা দূর্দান্ত ফ্যান্টাসী।

তবে আমার ফ্যান্টাসীর জগৎ-এ সুপারহিরো হওয়ার ইচ্ছাটা ছিল মাত্রাতিরিক্ত ধরণের প্রবল। মনে আছে ছোটা মাকরশা ধরে হাতের উপর রেখে অপেক্ষা করতাম কখন ওটা আমাকে কামড়াবে! কামড়ালেই আমি স্পাইডারম্যান হয়ে যাবো।

একবার আমাদের দোতলা বাড়ির ছাদে উঠে সুপারম্যান স্টাইলে একহাত মুঠোবদ্ধ করে কৌনিকভাবে আকাশের দিকে তুলে নিচে লাফিয়ে পরেছিলাম। ভেবেছিলাম উড়ে যাবো, কিন্তু দু' মাস হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল।

ধীরে ধীরে বড় হতে গিয়ে বুঝেছি সুপারহিরো গল্পে, উপন্যাসে, টিভি পর্দায় বা সিনেমায় সম্ভব। বাস্তবে তা সম্ভবপর নয়। তবু মনের কোনে কোথাও একটা স্বপ্ন ধরে রাখতাম আমি কোন একটা ঐশ্বরিক ক্ষমতা পাবো। সেই ক্ষমতাবলে আমি অন্যের মনের কথা বুঝতে পারবো বা এমন কিছু।

দূর্ঘটনার পর থেকে আমি একটা অদ্ভুত ক্ষমতা পেয়েছি বটে কিন্তু মোটেও আনন্দিত হতে পারছিনা। নরকের দৃশ্যগুলো তীব্র যন্ত্রনা দিচ্ছে। স্বর্গীয় দৃশ্যের আনন্দ হচ্ছে ক্ষনস্থায়ি!

___________________ তিন _____________________

দূর্ঘটনাটা খুব বড় কিছু ছিলনা, বেশ ছোটখাটই বলা যায়। আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম। চারিদিকে দেখে পার হওয়া নিয়ম। সেই নিয়ম মেনেই রাস্তার মাঝখানে যখন দাঁড়িয়ে তখন কোথা থেকে কে জানে দমকা বাতাস এলো সেই বাতাসে উড়ে এলো একটা পলিথিন ব্যাগ। এসে আমার মুখে গেল লেপটে। কি হাস্যকর পরিস্থিতি! আমার শরীর সঙে সঙে রিফ্লেক্সের কারণে চোখ বন্ধ করে দিল আর হাটা গেল থেমে। আবার হাটতে শুরু করবো এমন সময়ে হৈ হৈ আওয়াজ, একটা বাসের হার্ড ব্রেক করার প্রচেষ্টা, রাস্তার পিচের সাথে টায়ারের ঘর্ষনের আওয়াজ এবং আমার চারদিক হঠাৎ নিশ্চুপ।

এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছি আমার ঘরে, বিছানায়। যতটুকু মনে হচ্ছে তেমন একটা আঘাত পাইনি।

পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। উঠে পানি খাবো ভাবছি এমন সময় মা এসে আমার ঘরে ঢুকলেন। বিছানায় বসলেন। তার চোখে পানি, হয়ত কিছুটা চাপা গলায় কাঁদছেন। মা আমাকে কিছু বললেন না আমি আধবোঁজা চোখে শুয়ে থাকলাম। তিনি মিনিট পাঁচেক পর চলে গেলেন। কিছু বলতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমি শান্তিতে ঘুমাচ্ছি দেখে ওনার হয়ত চিন্তা কিছুটা কমবে।

______________________চার____________________

রাত বাড়ছে। আমার পিপাসাও বাড়ছে। উঠতে কষ্ট হচ্ছে। তবু উঠে ফ্রীজ থেকে পানি খেতে হবে। হঠাৎ বাইরে একটা রিকশার আওয়াজ পেয়ে ঘরের লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সম্ভবত আমার ছোট ভাইটা ফিরেছে।

এমন সময় আবার সেই মৃতদের দেখার ক্ষমতাটা ফিরে এলো। একটা গাড়ি থেমেছে আমাদের বাসা থেকে দুই বাসা পরে। বিয়ের পোষাক পরে এক সুন্দরী নববিবাহিতা আর তার স্বামী নামলেন। নতুন বিয়ের গাড়ি, ফুলে সাজানো। স্বর্গে বিয়ের ব্যবস্থা আছে এমনটা কোথাও শুনিনি। তবে নিশ্চিৎ এটা একটা স্বর্গীয় দৃশ্য। কারণ বর-কনে দু'জনের চোখই আনন্দ, চোখ আনন্দে হাসছে।

কিন্তু দৃশ্যটা স্থায়ি হলোনা। আমার মাথাটা ব্যথা করছে। আমাদের বাড়ির সামনে সদ্যমৃত একটা লাশ এসে থেমেছে খাটিয়ায়। বেচারা এখনও স্বর্গ বা নরক কোনটিই পায়নি। লাশটার সম্ভবত এখন জানাযা হবে। একজন সাদা পায়জামা পান্জাবী পরিহিত হুজুরকে দেখতে পাচ্ছি।

আমার মা, বাবা, ছোটভাই সহ আরো অনেকেই লাশটার পাশে দাঁড়িয়ে। লাশটার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা। আমি খুব করে চাইছি মুখটা দেখতে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছিনা।
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×