somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকলিমারা শিক্ষকদের সম্মান করতে চায়

১০ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকলিমারা শিক্ষকদের সম্মান করতে চায়। শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা করতে চায়। চাইলেও তারা তা পারছে না। প্রতিক্রিয়ায় আকলিমারা বলছে, ‘স্যারদের দেখে না দাঁড়ালে খারাপ লাগে’। প্রতিবেদনটি সমকালের। ৭ জুন প্রকাশিত পত্রিকাটির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘শ্রেণীকক্ষে দাঁড়ালেও বিপত্তি!’ যেটি বলছে টাঙ্গাইলের সখীপুরের লাঙ্গুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের মেঝের প্লাস্টার উঠে গেছে। মেঝেতে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় বেঞ্চ বসে না। শিক্ষকরা ক্লাসে ঢুকলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সম্মান জানাতে দাঁড়াতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। বেঞ্চ উল্টে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রের পা ভাঙার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে দাঁড়াতে নিষেধ করে দেন শিক্ষকরা। ২০০৭ সাল থেকে ভবনটির এ অবস্থা হলেও এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সমকালের এ প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিনই প্রথম আলো আরেকটি বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখাচ্ছে ‘বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত: পাঠদান বন্ধের উপক্রম’। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন বা অবকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে কেবল এই দুইটি প্রতিবেদনই নয়; এরকম অহরহ প্রতিবেদনই প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসছে। ঝুকিপুর্ণ ভবনের কারনে কোথাও শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে গাছের নিচে, কোথাও অন্য বাড়িতে, কোথাও আশ্রয়কেন্দ্রে আবার কোথাও জীবনের ঝুকি নিয়েই ঝুকিপুর্ন ভবনে ক্লাস করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গোটা বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চিত্র বলাচলে এরকমই। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ৮১ হাজার ৫০৮ টি এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় ৩৭ হাজার ৬৭২।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কিংবা ক্লাসরুমের এই চিত্রের বাইরের চিত্র যে নেই, তা নয়। যেমন ২০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ৫শ’ বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম উদ্বোধন করেন। এ ৫শ’ বিদ্যালয়ের চিত্র দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের কথা বলে সরকার হয়তো এ বিদ্যালয়গুলোই দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে এটিই যে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র নয়, ওপরের প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। সরকার ৫০৩টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই যে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের ঢেঁকুর তুলছে, তার অসারতাই ওপরের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা। অবশ্য মডেল স্কুলগুলোর চিত্রকে একেবারে নাকচও করা যায় না। যেহেতু সরকারের পক্ষে একই দিনে গোটা দেশে একই সঙ্গে সব বিদ্যালয়কে ডিজিটাল করা সম্ভব নয়। এ জন্য যে অর্থ দরকার, সেটা হয়তো সরকারের একসঙ্গে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা না হয় মানা গেল; কিন্তু তাই বলে কোনো বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ক্লাস করতে পারবে না, অথচ আরেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া উপভোগ করবে_ এটা কীভাবে মানা যায়! সবাই একই সঙ্গে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস করার প্রত্যাশা নাও করতে পারে, তারাতো অন্তত ক্লাসরুমে ক্লাস করার অধিকার রাখে।

এ-তো গেলো বিদ্যালয় বিদ্যমান থাকা কিংবা অবকাঠামোগত সমস্যার কথা। আর যেখানে বিদ্যালয়ই নেই সেটা কেমন? ২০০৯ সালের শেষদিকে একটি জাতীয় দৈনিক প্রাথমিকও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জরিপসূত্রে বলেছিলো- ‘দেশের ১৬ হাজার ১৪২টি গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। অবশ্য এর মধ্যে সরকারি নীতিমালা আর জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনা করে সরকার বলছে ১৬ হাজার নয় বরং ১ হাজার ৯৭২টি গ্রামে বিদ্যালয় নেই। সরকারি হিসেব ধরলেও প্রায় দুই হাজার গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত। যদিও গত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ১৫শ’ বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছিলেন, অবশ্য এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তার আপডেট জানিয়ে বলেছেন, এর মধ্যে ৭৮০টি নতুন বিদ্যালয়ের কাজ সমাপ্তির পথে। সেটা নিশ্চয়ই ভালো খবর। তবে মনে রাখতে হবে, সরকার ১৬ হাজার থেকে কমিয়ে ২ হাজারে এনেছে, যেখানে বিদ্যালয় স্থাপন না করলে সেখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে না। এ রকম জরুরি প্রতিটি স্থানে দ্রুত বিদ্যালয় স্থাপন আবশ্যক। ৭৮০ বিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে অন্যগুলোর কাজও শুরু করা উচিত।

সরকার তার নির্বাচনী মেনিফেস্টো, শিক্ষানীতি এমনকি এবারের বাজেটেও বলেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার পরিবেশ তারা নিশ্চিত করবে। এবং এ কথাও এসেছে, তারা এসব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ একটি (তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, পিইডিপি-৩) বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। আমরা এসব বাস্তবায়নের প্রত্যাশাই করব।

আকলিমাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম, যারা শিক্ষকের মর্যাদা বোঝে, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করে। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এলে তাদের সম্মানে তারা দাঁড়িয়ে আসছে। এখন বিদ্যালয় পরিস্থিতি তাদের সেটা করতে দিচ্ছে না। শিক্ষকদের সম্মান করতে না পেরে তাদের খারাপ লাগছে। যারা প্রশাসনে আছেন, তাদের খারাপ লাগছে কি-না জানি না। তবে অনুরোধ, শিক্ষকদের আমরা সম্মান করি আর না-ই করি, অন্তত আকলিমাদের শিশুমন রক্ষায় তাদের বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজটা দ্রুত করুন।

সমকালে প্রকাশিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×