somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকায় নিশাত ও সিলেটে নানী নাতনি খুন: এসব কিসের আলামত:

১০ ই জুন, ২০১২ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবিবার, ১০ জুন ২০১২
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: সিলেটে নানী ও নাতনিকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। ফুলের মতো শিশু কন্যা সাদিয়াকে নির্মমভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং ৬০ বছরের বৃদ্ধ নানীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। অজ্ঞাত ঘাতকরা ফাঁকা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের আদিবাসি পল্লী দলইরপাড়া গ্রামে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ বাড়িতে ভিড় করে নির্মম এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ ঘটনায় হতবাক দলইরপাড়াবাসী। এভাবে ফুলের মতো শিশুকে কেউ খুন করতে পারে? দলইরপাড়া সিলেটের একটি পরিচিত গ্রাম। পাত্র সমপ্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষের বাস এই গ্রামে। আছে ভূমিখেকোদের উৎপাতও। এ কারণে সিলেটের বেশির ভাগ মানুষের কাছে এই গ্রামটি বিশেষভাবে পরিচিত। হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার গেইট থেকে খুব কাছে এলাকাটি। এই গ্রামের নাসির উদ্দিন কাজ করেন এফআইভিডিবিতে। তিনি ফিল্ড অফিসার হিসেবে কাজ করেন। তার স্ত্রী রোকসানা বেগম এফআইভিডিবি নিয়ন্ত্রিত কানুগুল স্কুলের শিক্ষিকা। তাদের দু’টি কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের নাম তৃষা। ছোট মেয়ের নাম সাদিয়া। দলইরপাড়ায় আধাপাকা বাড়িতে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন নাসির উদ্দিন। পাশের দাসপাড়া গ্রামে নাসির উদ্দিনের শ্বশুর বাড়ি। দুই জন চাকরিজীবী হওয়ায় প্রতিদিন সকালে স্বামী-স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। ফেরেন বিকাল নাগাদ। বড় মেয়ে তৃষা ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে প্রফুল্যপাত্র স্কুলে। বয়স ৯ বছর। সাদিয়ার বয়স ৫ বছর। সে-ও একই স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। নাসির উদ্দিনের পরিবারে এখন শোকের মাতম। গতকাল ফাঁকা বাড়িতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করেছে। সঙ্গে গলা কেটে খুন করেছে তার শাশুড়ি আমেনা বেগমকে। তিনি ছোট নাতনিকে সঙ্গ দিতে প্রায় দিনই থাকতেন মেয়ের বাড়িতে। গতকালও নাতনি সাদিয়াকে নিয়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন। এলাকার লোকজন জানান, প্রতিদিনের মতো সকালে নাসির উদ্দিন ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম কর্মস্থলে চলে যান। তাদের বড় মেয়ে তৃষাও চলে যায় স্কুলে। স্কুলে থাকাকালে তৃষার এক সহপাঠী তাকে জানায়, তার নানী ও বোন খুন হয়েছে। এর আগে তৃষার ওই সহপাঠী তৃষাকে খুঁজতে বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু কাউকে বাড়িতে না পেয়ে সে পাশের বাড়ির এক মহিলার কাছে জানতে চায়, আমেনা বেগম ও সাদিয়া কোথায়? আশপাশের বাড়ির লোকজন এসে তাদের খোঁজ নিতে থাকেন বাড়ির ভেতরেই। এ সময় বাড়ির শেষ মাথার পেছনের গুদাম ঘরে আমেনা বেগম ও সাদিয়ার লাশ পাওয়া যায়। লাশ দেখেই তৃষার সহপাঠী দৌড়ে স্কুলে গিয়ে তাকে খবর জানায়। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া তৃষা জানায়, খবর পেয়েই সে বাড়িতে ছুটে এসে দেখে তার নানী ও বোনের লাশ পড়ে আছে। পরে তার পিতা ও মাতা খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে আসেন। এলাকার লোকজন জানান, তারা প্রথমে গিয়ে দুই জনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়েই শাহপরান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা, ঘাতকরা সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে কোন এক সময় এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে কি কারণে এই জোড়া খুন- এ সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারছে না।
নাসির উদ্দিন জানান, প্রতিদিনের মতো গতকালও সকালে স্ত্রী রোকসানাকে নিয়ে তিনি কর্মস্থলে চলে যান। ওখানেই তিনি এ ঘটনার খবর পান। তিনি জানান, আমার সঙ্গে তো কারও কোন বিরোধ নেই। কারা এ নির্মম ঘটনা ঘটাতে পারে সে সম্পর্কে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না তিনি। মেয়ের লাশের উপর আছড়ে পড়ে বিলাপ করছিলেন রোকসানা বেগম। তিনি জানান, সকালে তার মেয়েকে হাসিখুশি রেখে চলে গিয়েছিলেন। এখন এসে দেখেন লাশ। তিনি বলেন, তার মা আমেনা বেগম প্রায়ই তার বাড়িতে থাকেন। ছোট মেয়েকে একা রেখে চাকরি করা যায় না। একারণে তার মা ছোট মেয়ের সঙ্গ দিতে প্রায়ই তাদের বাড়িতে থাকতেন। তিনি বলেন, আমি এ ঘটনার বিচার চাই। সাদিয়ার বড় বোন তৃষা বোনের মৃতদেহের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। সে জানায়, আমার পুতুল খেলার সাথী সাদিয়া। সকালেও আমি বোনকে নিয়ে খেলেছি। এখন আমি কার সঙ্গে খেলবো-এ প্রশ্ন এখন সাদিয়ার। এদিকে, এ ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যান ইউপি সদস্য আজাদ মিয়া। তিনি বলেন, এমন নৃশংস ঘটনা ঘটাতে পারে কেউ- সেটা কল্পনাও করা যায় না। তিনি জানান, নানী আমিনার বুকের ওপর শোয়া ছিল নাতনির দেহ। এর মধ্যে সাদিয়ার মুখে রড ও কাঠের থেঁতলানো চিহ্ন রয়েছে। তিনি ধারণা করছেন, সাদিয়াকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। আর নানী আমেনার ঘাড়ে কাটার চিহ্ন রয়েছে। রক্ত ঝরছিল। সাদিয়ার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। বিকাল চারটার দিকে শাহপরান থানা পুলিশ গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে। এ সময় বাড়ির সামনে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। পরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শঙ্কর কুমার দাস সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা কি কারণে ঘটেছে সে ব্যাপারে তারা ধারণা পাননি। তবে পারিবারিক কোন কারণে খুন করা হতে পারে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ খাদিমপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিলাল। তিনি বলেন, থানা সদর বহু দূরে হওয়ায় শাহপরান এলাকায় অপরাধ ঘটছেই। মাত্র দুই মাসে কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানান, ঘাতকরা যারাই হোক তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হবে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×