somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাত্‍ জরুরি কাজ এবং অতঃপর

০৯ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''দুঃখিত,এই মুহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে একটু পর আবার ডায়াল করুন"
এইবার নিয়ে ২০ বার।মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে।মানুষ এতো রাগ করতে পারে?না হয় আমার একটু দোষই ছিল,তাই বলে এত রাগ করতে হবে?মোবাইল বন্ধ করে রাখতে হবে?দিয়া পারেও বটে।এত জেদি আর অভিমানি মেয়ে খুব কম ই আছে।

আজ বিকেলে দুজনের দেখা করার কথা ছিল।হঠাৎ একটা জরুরি কাজ পরে যাওয়াতে ওকে ফোন দিয়ে বলি
"জান,সরি।ইয়ে মানে আমার না একটা জরুরি কাজ পরে গেছে।আজ আর আসতে পারব না।সরি জান।কিছু মনে করো না প্লিজ।"
একথা বলতে বলতে ওপাশে এতক্ষন কালবৈশাখী তৈরি হয়েছে।এবার তা ঝড়ো বেগে বইতে শুরু করলো।
"কি পাইছো তুমি,হে?আমাকে আসতে বলবে,আমি কষ্ট করে রেডি হবো,তারপর হঠাৎ ফোন দিয়ে বলবে যে আসতে পারবো না।বাহ বা বাহ!
আমার চেয়ে তোমার কাছে কাজই জরুরি হয়ে গেলো?আমি কিছুই না?আমার কোন দাম নেই?গুরুত্ত নেই?''
আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম,কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে কিছু বলার আর সাহস হলো না।কারন ওর রাগ উঠলে তখন চুপ করে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।কথা বলতে গেলেই ওর রাগ দ্বিগুন বেড়ে যায়।
ও আবার শুরু করল,''কথা বলতেছ না কেন?আমার প্রশ্নের জবাব দাও।"
"ইয়ে মানে কি বলবো?আমি সত্যিই সরি জান''
"চুপ একদম চুপ।তোমার সাথে আর কোন কথা নাই।তুমি আমাকে আর ফোন দিবে না।"
এই বলে লাইনটা কেটে দিল।

হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম যে রাত অনেক হয়ে গেছে।শেষবারের মতো চেষ্টা করলাম।নাহ আজ আর মোবাইল অন করবেনা।আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে ওর ভার্সিটির সামনে গিয়ে ওর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর ও আসল।আমি এগিয়ে গিয়ে সরি বললাম।জিজ্ঞেস করলাম মোবাইল বন্ধ কেন?
ও জাস্ট একটা কথাই বলল,"তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই"
এই বলে চলে গেল।বুঝতে পারলাম মহারানী ভীষন রাগ করেছে।
কিছুই করার নাই।একটা চায়ের দোকানে বসে চা খেতে লাগলাম আর মহারানীর ক্লাস শেষ হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ভাবলাম ওর কি কোনদিনই বোঝার ক্ষমতা হবে না যে একটা মানুষের জরুরি কাজ থাকতেই পারে।আমিতো ইচ্ছে করে এমনটা করিনি।পরে ভাবলাম সব মেয়েই হয়তো এমন।আর আমারজনতো আরো একধাপ উপরে!
এ পর্যন্ত যতবার ঝগড়া হয়েছে সব সময়ই আমাকেই সরি বলে সব কিছু থামাতে হয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে চা খেতে থাকলাম।

প্রথম ক্লাস এর সময় শেষ হতেই দেখি যে ও বের হয়ে এসেছে।কারন ও খুব ভালো করেই জানে যে আমি ওর জন্যে অপেক্ষা করতে থাকবো।
এই একটা জিনিসই মহারানী এতদিন এ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
আমার কাছে এসেই,"এখানে কি কর?আমি না বলছি তোমার সাথে আর কোন কথা নেই।তবুও কেন অপেক্ষা করতেছ?"
(যদিও দিয়া ভালো করেই জানে এবং নিজে থেকেই ক্লাস না করে বের হয়ে এসেছে।তবুও একটু ভাব নিলো।মানে পরাজয় মেনে নিবে না)
আমিও সুযোগের সদ্বব্যবহার করলাম।এমন সুযোগ কমই পাওয়া যাবে।
"আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করতেছি কে বলল?আমিতো চা খাচ্চিলাম?"
একথা বলাতে খুব একটা লাভ হল না।নারী জাতি পরাজয় মানতে নারাজ।
"দেখ,বেশি ভাব নিবে না বলে দিলাম।আমি খুব ভালো করেই জানি যে তুমি আমর জন্যেই অপেক্ষা করতেছ"
কি আর করার।আমিই পরাজয় বরন করে স্বীকার করে নিলাম।
তারপর ও বলল,"নাশতা করছো?নাকি রাগ করে করো নাই?"
"করছি"
"কী খাইছো?''
"চা"
"চা খেয়ে সকালের নাশতা হয়?এভাবে করলেতো শরীর খারাপ করবে।নিজের শরীরের প্রতি কোন যত্ন নাই।খালি আছে রাগ নিয়ে।আমি খেয়াল না রখলে এতদিনে তোমাকে হাসপাতালে থাকতে হতো,বুঝলা?"
আমি সুবোধ বালকের ন্যায় বললাম"বুঝেছি"।
এই হল আমার হবু বৌ।রাগ করে একবার বকবে।রাগ থামার পর আবার বকবে।মাঝখান থেকে আমি উভয় সংকটে।আমার 'ছুটি' গল্পের মাখনলালের কথা মনে পড়ে গেল।সেও এইভাবে দুদিক থেকে তার ভাই ফটিককে বকা খাওয়াতো।বুঝলাম যে আমার হবু বৌ এর মাঝে মাখনলালের ন্যায় শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।বিয়ের পর না জানি আরও কত কি দেখতে হবে।আমার এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ বাধা পড়ল ওর কথায়,"কি হল,বসে আছ কেন?এভাবে দর্শনিকের মতো ভাবনা বাদ দিয়ে খেতে চলো।আমারও খিদে লেগেছে।"
আমি মহারানীর কথামত উঠে পড়লাম এবং তাকে নিয়ে খেতে গেলাম।জানতাম সেও খায়নি।
বাইরে রাগ দেখালে কি হবে,ভেতরে ঠিকই আমার জন্যে অনেক ভালবাসা।কিন্তু সেটা ওভাবে প্রকাশ করে না।আমিও ঠিকই ওর মনের কথা বুঝতে পারি।তাইতো সবসময় আগে সরি বলে রাগ ভাঙ্গাই।
আসলে ভালোবাসা জিনিসটাই এমন।দুজন দুজনকে বুঝতে পারা,কেয়ার নেয়া,আর দুজনের খুনসুটি।খুনসুটি না থাকলে মনে হয় ভালোবাসা জিনিসটা কি সেটা বোঝা হত না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১২ রাত ২:০১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×