মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ’ উনার ৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সম্বলিত দিবসগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিন সমস্ত কায়িনাতকে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে ধৈর্যশীল ও শোকরগোজার বান্দা-বান্দী উনাদের জন্য ইবরত ও নছীহত রয়েছে।’
আগামী ইয়াওমুছ ছুলাছায়ি বা মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সুমহান বরকতময় ১৫ শা’বান শরীফ-
ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস।
যা কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশির দিন।
এ উপলক্ষে সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ঈছালে ছওয়াব উনার মাহফিল করে উনার পবিত্র সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করে সর্বাত্মক ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা।
আর সরকারের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিলো- এ পবিত্র ঈদ বা খুশির দিবসটি পালনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ এ পবিত্র দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করা।
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ইমাম, হযরত ইমামুল হুমাম আউওয়াল, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত(জন্ম) শরীফ দিবস হচ্ছে ১৫ শা’বান শরীফ। যা কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশির দিন।
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।”
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম বা আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম করা এবং উনাদের মুবারক খিদমত করা, উনাদের পবিত্র সাওয়ানেহে উমরী মুবারক জানা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। হিজরী ৩য় সনের পবিত্র শা’বান মাস উনার ১৫ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি শরীফ বা বুধবার তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন; যা কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশির দিন। এ উপলক্ষে সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ঈছালে ছওয়াব উনার মাহফিল করে উনার পবিত্র সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করে সর্বাত্মক ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা। কেননা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন।
আমিরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন: যখন হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে তাশরীফ আনেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন: আমার সন্তানকে আমাকে দেখান, উনার কী নাম মুবারক রেখেছেন? আমি বললাম: আমি উনার নাম মুবারক রেখেছি- ‘হারব’ (যুদ্ধ)। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: বরং তিনি ইমাম ‘হাসান’। অর্থাৎ উনার নাম মুবারক হযরত হাসান আলাইহিস সালাম। উনার জিসিম মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অপেক্ষা অপর কেউ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন না।
খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের সাথে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন; তখন তিনি ছোট্ট শিশু। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন পবিত্র সিজদায় ছিলেন। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৃষ্ঠ মুবারক অথবা কাঁধ মুবারক উনার উপর উঠে বসলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নিয়েই অতি স্নেহপরায়ণভাবে দণ্ডায়মান হলেন। তিনি যখন নামায শেষ করলেন, লোকেরা উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন: হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এই শিশু উনার সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করলেন তা আপনি আর কারো সঙ্গে করেননি। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “ইনি হচ্ছেন আমার রায়হানা অর্থাৎ আমার এক ‘ফুল’ মুবারক। আমার এ সন্তান তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদ, অচিরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দ্বারা মুসলমানদের দুটি দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করবেন। সুবহানাল্লাহ!
মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণে ৪৯ হিজরী সনের ২৮শে ছফর শরীফ প্রায় ৪৬ বৎসর দুনিয়াবি বয়স মুবারক-এ তিনি পবিত্র শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করেন বা পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী উনার মধ্যে অবস্থিত।
মূলকথা হচ্ছে- হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হচ্ছেন সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর উনাকে অনুসরণ করা ফরয। যে বিষয়টি ফরয সে বিষয়ে ইলম অর্জন করাও ফরয। তাই উনার বরকতময় সাওয়ানেহে উমরী বা পবিত্র জীবনী মুবারক জানাও সকলের জন্য ফরয। পাশাপাশি ৯৭ ভাগ মুসলমান দেশের সরকারের জন্যও ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, উনার জীবনী মুবারক মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা। আর উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ ১৫ শা’বান শরীফ ও পবিত্র বিছাল শরীফ ২৮ ছফর শরীফ উপলক্ষে বাধ্যতামূলক ছুটি ঘোষণা করা।