somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শর্ট ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ !

০৮ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্ব- Click This Link
চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম! হটাৎ করেই হার্ড ব্রেক চাপলাম, কিন্তু আমার গাড়ি থামছেনা কেন? সামনের গাড়িটা আমার গাড়ির দিকে ছুটে আসছে!!! আমার গাড়িটাকে সামলাতে পারছিনা কেন???

তারপর অনেকক্ষন অচেতন ছিলাম, কয়েক সেকেন্ডের মত হয়ত। আমার কাছে সেসব সেকেন্ডগুলো কয়েক যুগের সমান লেগেছে! আমি দ্রুত সামনের গাড়িটার দিকে তাকালাম, গাড়িটা আমার গাড়ির সামনের দিকে মনে হল ঢুকে গেছে! ততক্ষনে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বাজছে, আশেপাশেই পুলিশ ছিল হয়ত। আমি নামতে গিয়েও পারলাম না, আমার গাড়ির ডানে আরেকটা গাড়ির সামনের দিকটা ঘেষে থেমেছে। আমাকে প্রায় টেনে বের করল অফিসার। ততক্ষনে আমি ভয়ে জমে গিয়েছিলাম, অফিসার না বের করলে আজ গাড়ি থেকে বের হতে পারতাম না, কেননা যেভাবে গাড়ি আছে, আগুন লাগতে পারে যেকোনো সময়!

আমার মনে অপরাধবোধটা জেগে উঠল মনে হচ্ছিল। দ্রুত চারদিকে তাকালাম, কেউ আমাকে লক্ষ করছে নাকি। অবশ্যই আমাকে সবাই লক্ষ করছে। চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে! আমি তাকানোর তীব্র ইচ্ছা, দমন করতেও পারছিনা, তাকালেই সবার চাহনি সহ্য হচ্ছেনা। তাকাতেই একঝাক তীক্ষ্ণ চোখজোড়া আমাকে মনে হচ্ছে নিঃষেশ করে দিতে চাইছে! ওদের দৃষ্টিকে দ্রুত এড়িয়ে চলবার জন্যই সরে যাচ্ছিলাম, তখঐ দেখলাম অফিসার আমার সামনে, তাকে দেখে থমকে দাড়ালাম। প্রথমেই কয়েকজন হাসপাতাল কর্মীকে ডেকে আমাকে দেখলেন, কোন ইনজুরি হয়েছে কিনা।নাহ, আমি ঠিক ছিলাম শারীরিকভাবে, তবে মানসিকভাবে আমি তখনও ভীত, কিংবা চিন্তিত। তারপর তিনি আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স চাইলেন, যা ভাবছিলাম, ঠিক সে মুহুর্তটার সামনে এসে পড়লাম। আমার নিজের স্বর আমি চিনতে পারলাম না, তবুও জোর করে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনে আমার ড্রাইভিং পারমিট দেখালাম। অফিসার আমাকে টিকেট দিলেন, জরিমানা এক হাজার ডলার। আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গিয়েছিল পরিমান দেখে, কিন্তু তখন বাকি ছিল আসল সমস্যার কিছু।

এক্সিডেন্টে একটা ছোট্ট মেয়ে ইনজুর হয়, মেয়েটাকে ওরা অনেক আগেই নিয়ে গেছে হাসপাতালে। ইতিমধ্যে রে ফোন করেছিল, ওকে সংক্ষিপ্ত আকারে সব খুলে বলেছি। সুতরাং সব শেষে গাড়ি ড্যামেজ আর ছোট মেয়েটার ইনজুরি ছাড়া কিছুই হয়নি, তবুও যা হয়েছে তা নাও হতে পারত বলে মনে একটু ভয় লাগছিল। আমি রে'র টেক্সটটা না পড়লেও পারতাম গাড়ি চালানোর সময়, কি যে হবে এখন! এত ডলার আপুকে পেয় করতে হবে, আমাকে হাজারটা প্রশ্নের সামনে দাড়াতে হবে। আর নিউজ হলেতো, আমি আর ভাবতে পারছিনা। ক্যম্পাসে ফিরে যেতেও দ্বিধা হবে মনে হচ্ছে আজকের পর।

আমি পথের একপাশেই বসে পড়লাম, বসে দুরের গাড়িদের "ডু নট এন্টার" সাইন দেখে ঘুরে যাওয়া দেখছিলাম।কত অল্প সময়ের মধ্যেই এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল! হটাৎ করেই অনেকগুলো সাংবাদিক আমার সামনে চলে আসল, অবাকই হলাম আমি। যতটা না ওদের ক্যমেরার বহর দেখে, তার চেয়েও বেশি ওদেরকে এখানে দেখে। এদিকটায় কারো আসা বারন, অথচ ওরা ঠিক চলে এসেছে। আমার দিকে একসাথে একলক্ষ প্রশ্নতীর ছুড়ে আসলো। আর ছবি তুলছে অনেকেই। আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না, উঠে পালাবার পথও পেলামনা। রে'কে দেখে মনটে সস্তি পেল, ও ভীড় ঠেলে আমাকে বের করে আনল, যদিও আমি নিজেই বের হব ভাবছিলাম। চারপাশে এখন পরিষ্কার পর্ব চলছে। রে আমাকে টিকেট দেখাতে বলল। দেখে ও বলল এটা ও দেখবে। আমি প্রায় নিয়ে ফেলছিলাম ওটা ওর হাত থেক কিন্তু পারলাম না। রে'র চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল চোখ দুটো বলছে 'আমাকে বিশ্বাস কর!'

সাংবাদিকরা ততক্ষনে বুঝতে পারল আমাকে দিয়ে কোন কথাই বের করতে পারবেনা, তাই তারা অন্য দিকে মনযোগ দিল, পিছু যদিও কয়েকজন আসছিল, আর পুলিশ অফিসারটাও ছিল কথা বলার জন্য, তাই ওরা থামল। অন্য গাড়ির আরোহিদের পাশে ভীড় করতে লাগল ওরা। আমি একটু শান্তির নিশ্বাস নিলাম। এরা মানুষকে বিরক্ত করে ফেলে প্রশ্ন করতে করতে, অথচ ওদের বিরক্তি আসেনা!

আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আার পথে রে। আমার মনটা তখন বিষন্ন হয়ে রয়েছে। বাচ্চা মেয়েটার কান্নাটুকু মনে গেথে আছে। চারপাশটা একটু ঝাপসা লাগে একটু পর পর। চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে, আর রে'র নিষেধ! ও কান্না করাটা সহ্য করতে পারেনা, তবে বিরক্ত হয়না।হটাৎই গাড়িটা ঘুরিয়ে ফেলল ও! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে!

বললাম কোথায় যাচ্ছিস আমাকে নিয়ে? ও আমাকে আবার সেই চাহনি দিল যাতে লেখা ছিল, 'আমাকে বিশ্বাস কর!' কিন্তু পারলামনা, ফ্রন্ট মিররে অনেকক্ষন ধরেই লক্ষ করলাম একটা কালো গাড়ি আমাদের ফলো করছে, রে'র মুখের দিকে তাকালাম, সেই মুখে এখন অচেনা রহস্যময় হাসি!
(চলবে)
ভালো থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ সকাল ৮:২০
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×