এত এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কি হবে ! সব খানে তো সমস্যা, নীতি নাই, ভাল কিছু নাই, এইসব থেকে বের হয়ে সব তো ধ্বংস করবে। দরকার কি এই সব শিক্ষার।
আমি দুর থেকে চিৎকার দিয়ে বললাম- আংকেল ভাল মানুষ ও নাই!
আমার কথাটা উনার কানে তীরের মতই লাগলো। হে! তুমি তো বাবা ঠিক কথাটা বলছো বলতে বলতে কাছে আসলেন।
আমরা বন্ধুরা বসে ছিলাম চায়ের দোকানে। হঠাৎ পাগলের মত এক বয়স্ক লোকের চিৎকার শুনে প্রথমে মাথা খারাপ বলেই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু কাছে আসার পর উনার চোখের পানি আর বুকের ভিতরে জমে থাকা ক্ষোভ আমাদেরকেও নাড়িয়ে দিল !
কত টুকু ক্ষোভ মানুষ বুকের ভিতর জমিয়ে রাখতে পারে? কাছে টেনে জানতে চাইলে বুঝতে পারবেন।
আসমত আলী। বয়স ৭১+, তৎতকালীন TNT তে চাকরি করতেন। অবসরে আছেন ৮ বছর ধরে। বর্তমানে BTCL এ বাসার টেলিফোন বিলের জমে থাকা টাকা জমা দিতে গিয়েছিলেন। তার কাছ থেকে কাগজ নিয়ে অফিসার তার কাছ থেকে ৬৯ টাকা বেশি নেয়।
তিনি প্রতিবাদ করে বলেন,এটা এখনি ঠিক করেন। টাকা তো এটি সরকারের একাউন্টে যাবে না। আপনার পকেটে যাবে। অফিসার গড়িমশি করতে থাকে।
পরে বাধ্য হয়ে ইনিশিয়াল দিয়ে ঠিক করে দেয়।
উনার সাথে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডটি ডাউনলোড করে শুনতে পারবেন এখান থেকে
(সম্পুর্ণ রেকর্ড করতে পারিনি।)
৩ মিনিটের একটি ভিডি্ও ক্লিপ দেখতে পারবেন-
অনেক ক্ষোভ আর অভিমানের স্বরে বললেন-
একসময় আমি এই অফিসেই চাকরি করতাম। সততার মাধ্যমে চাকরি কাটিয়েছি। আজ আমার সাথেই দুর্নীতি ! এক অফিসারের কাছে ১০ জন বস কুক্ষিগত কেউ কিছু কয় না। ওদের সাথে তো আমি পারিনা।
বললাম যে, এখন তো আংকেল আপনি যে এখন ভাল কথা বলতে পারছেন। সবাই পারে কিন্তু কাজের সময় দেখবেন আপনি একাই আছেন আর সবাই সরে গিয়েছে-
-পশু, জানোয়ার হয়ে গেছে সব। আমার ডিপার্টমেন্টাল লোক। তারা বিলের কাগজ ঠিক ম পাঠায় না বাসায়। বিল পাই না ঠিক মত। এই দেখ চার ধরনের বিল দিয়ে আসলাম মাত্র। বিদুৎ বিল ওয়াসার বিলো ঠিক মত পায় না বাসায়। তাই বাধ্য হয়ে অনেক দিনের জমে থাকা দিতে এলাম।
একজন অভিজ্ঞ মানুষের দেশ ভাবনা,মুক্তিযুদ্ধ, বর্তমান দেশ নিয়ে হতাশা আর বিপ্লবের কথা বলছিলাম।
বলছিলাম, আংকেল আপনারা যুদ্ধ, দেখেছেন,করেছেন আমরা তো দেখিনি কিন্তু এর পর থেকে দেশের মানুষের কখনো শুনিনি ভাল আছে। সমস্যা শুধু বাড়তাছে তো আপনারা কি করলেন? আমাদেরকে এখন ঠেলে দিচ্ছেন আবার প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য-
বাবারে যুদ্ধের সময় যে বেচেঁ আছি সেটাই এখন বড় বিষয়। ১০০০ জনকে এক সাথে লাইনে দাড় করিয়ে,কলমা জানতে চাইতাছে। আমরা বেঁচে গেলাম। ব্রিগেডিয়ার জেনারেণ করিমুল্রাহ আসলু। দু-তিন কেজি মাংস খেত। আমরা বেঁচে গেলাম।[
জানতে চাইলাম-আংকেল আমরা যদি দেশে বিপ্লব করে সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চাই আপনি কি আমাদের সাথে থাকবেন?
-তুমি বিপ্লবের কথা বলছো। তুমি তো সাংগাতিক ছেলে! আমি শুনছি কিন্তু সো ম্যানি পারসন।
আমি সারা দিব।
বললাম, সো ম্যানি পারসনটাকে জানাতে হবে আনতে হবে পাশে।
ছোট খাট গড়ানের একজন মানুষ বলছিলেন, তার প্রতিবাদের কথা। কোথাও অন্যায় দেখলে ঠিক থাকতে পারি না। কিছুদিন আগে আবদুল্লাহপুরে দুই বন্ধু রক্তারক্তি অবস্থা। কেউ গিয়ে জিজ্ঞাসা করছে না কেন তারা এমন করছে। আমি এই বুড়ো মানুষটা তাদের থামিয়ে জানতে চাইলাম কেন তারা এমন করছে। তারা নিজেরাও ঠিক বলতে পারে না কেন তারা মারামারি করছে। অথচ রক্তারক্তি!
আসমত সাহেব যশোরের লোক। মুসলিম লীগের মোনায়েম খাঁ এর কথা বলছিলেন। যার ছেলে মেয়েরা এখনো পাকিস্থানের জন্য পাগল। ছেলের বাসায় তাকে দাওয়াত করেছিল কারন ছেলে নাকি যশোরের মানুষ পছন্দ করে।
''সব তো সার্থপর হয়ে গেছে। আমার এক মেয়ে ডাক্তার থাকে সৌদিতে আর এক ছেলে চাকরি করে। নাই কিছু আর। এই সব দেখে আর মাথা ঠিক মত কাজ করেনা। সব অমানুষ হয়ে যাচ্ছে।
তুমি এত সুন্দর করে দেশ নিয়ে ভাবছো দেখো ভাল লাগলো। দোয়া করি। এখন তো আর শক্তি নাই। দোয়া করি যেনো ভাল কিছু করতে পারো।
কত শত মানুষ এভাবে নিরব হয়ে আছে। কার কাছে বলবে মনের ক্ষোভ ! সুযোগ দিয়ে শুনলে বুঝতে পারবেন আমরা আসলে এখন কোথায় বাস করছি। আমি কোন সরকারকে দোষ দিবো না। দোষ দিবো নিজেদের অব্যবস্থাপনা ও বোকার মত প্রতিবন্ধী নিবার্চন করাকে। নিজের ভাগ্য অন্যের হাতে সর্মপিত করার আগে দেখে, শুনে বুঝে দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। যাতে আমরা বার বার বোকামির পরিচয় দিচ্ছি ।
সামনেও তাই করব !
দুর্নীতি শুধু মাত্র একটি মন্দ শব্দ না। এর এর ব্যাপকতা কতটুকু তা চোখ খুলে তাকালেই বুঝা যায়। আমরা এখনো শুধু মাত্র ঘুষ দেয়াকে দুর্নীতি মনে করি। কিন্তু দুর্নীতির সজ্ঞায়-
ক্ষমতার অপব্যবহার করাটাকে আমরা দুর্নীতি বলবো। সেটা হতে পারে একজন শিক্ষকের ক্লাসে ঠিক মত পাঠদান না করা থেকে শুরু করে মন্ত্রীর ক্ষমতা অপব্যবহার।
এটি এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয়, সম্মানহানি দেশের। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এখনো এটিকে গুরুত্বদিয়ে দেখা হচ্ছে না। যে সব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি বিরোধী কাজ করছে তাদের কে কুক্ষিগত করে রাখা হচ্ছে। গনতন্ত্রের নামে স্বৈরাতান্ত্রিক কথা বার্তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
মানুষের সামাজিক অবক্ষয়, সার্থপরতা বাড়ছে। কিন্তু এই সব কারো কাছে সমস্যা বলে মনে হয় না এখনো।
যখন দেশে এই সব মহামারি আকার ধারণ করবে তখন ভাল মানুষকে পাগল বলেই মনে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:১৫