somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

হাদীস

০৮ ই জুন, ২০১২ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআন মাজিদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদিস সেখানে এই মৌলনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষন ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বাতলে দেয় । ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানে কোরআন যেন হৃৎপিন্ড, আর হাদীস এ হৃৎপিন্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী । ইসলামী জীবন বিধানে মহা গ্রন্থ কোরআন মাজিদের পরেই হাদীস গ্রন্থের অবস্থান । হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম । হাদীস হচ্ছে মূলত রাসূল (সা.)-এঁর যে কোন বর্ণনা – তার কথা কাজ এবং নীরব সম্মতি, আচরণ, শারীরিক বৈশিষ্ট অথবা জীবন বৃত্তান্ত সংক্রান্ত যে কোন বর্ণনা ৷ অন্য কথায়, হাদীসের স্কলাররা যেভাবে সুন্নাহর সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন, সেই অনুযায়ী সুন্নাহ সংক্রান্ত যে কোন বর্ণনাই হচ্ছে হাদীস ৷ মুসলমানরা দাবী করেন যে , যারা হাদীস ও সুন্নাহ বিশ্বাস করেন না তারা কাফের । কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে হাদীস ছাড়া অন্যকোন উপায় নেই । আমাদের মাঝে হাদীস বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন । হাদীস কাকে বলে ? জাল হাদীস কাকে বলে ? হাদীস মুখে মুখে প্রচলিত ছিল এবং নবীর মৃত্যুর ১০০ বৎসর পরেই কেবল লিখিত আকারে আসা শুরু করে । সর্বাধিক প্রচলিত হাদীস গ্রন্থ সহীবুখারীর লেখক বুখারীর জন্ম নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ২০০ বৎসর পরে । ইসলামের শত্রুরা অতি প্রাচীন কাল থেকে ইসলামী জ্ঞানের প্রধান দুটি উৎস কুরআন ও সুন্নাহকে বিকৃত করার জন্য যুগে যুগে অনেক প্রয়াশ চালিয়েছে । কিন্তু সে চেষ্টায় তারা কখনো সফল হয়নি । আমার প্রিয় কিছু সহী হাদীস আপনাদের জন্য-

আবূ হুরাইরা [রা:] থেকে বণির্ত । তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ [সা:] বলেছেন- তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না, দালালী করো না, ঘৃণা পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না এবং তোমাদের কেউ অন্য কারো কেনাবেচার উপর কেনাবেচা করবে না । আল্লাহর বান্দাগণ ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও । মুসলমান মুসলমানের ভাই । সে তার ভাইয়ের প্রতি অত্যাচার করবে না, তাকে তুচ্ছজ্ঞান করবে না এবং তাকে ব্যর্থ করবে না । তাকওয়া বা পাহেযগারী এখানে রয়েছে । বক্ষের দিকে ইংগিত করে তিনবার তিনি এ কথাটি বললেন । একটি মানুষের মন্দ বা খারাপ হওয়ার জন্য যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করবে । প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের খুন, মাল ও মান-মযার্দা হারাম [মুসলিম-২৫৬৪] "ইসলামের সূচনা লগ্নে হাদীস লিপিবদ্ধ করা শ্রেয় মনে করা হয়নি এ কারণে যে- হাদীস যেন কুরআনের সাথে মিশে না যায় । অথবা মানুষ যেন কুরআন বাদ দিয়ে শুধু হাদীস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে না পড়ে ।"

আবু বাকারা নুফা'ই বিন হারেস [রা:] থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ [সা:] বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক গুনাহ সম্পর্কে বলব না ? এ কথাটা তিনি তিনবার বললেন । আমরা বললাম অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসুল ! তিনি বললেন : আল্লাহর সাথে শিরক করা । পিতা-মাতার আবাধ্যতা । তিনি হেলান দিয়ে ছিলেন । অত:পর সোজা হয়ে বসে বললেন: সাবধান ! মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া । এ কথাটি তিনি বার বার বলতে ছিলেন, এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আহা যদি তিনি থেমে যেতেন । [বুখারী ও মুসলিম] বলা যায় তৃতীয় শতাব্দীতে হাদীসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলোর রচনা সমাপিত হয় ।

রাসুল (সঃ) প্রথম দিকে হাদিস লেখার ব্যাপারে শর্তহীন নিষেধ আরোপ করেছিলেন । রাসুল (সঃ) হাদিসের মৌখিক প্রচার কখনোই নিষেধ করেন নি । তবে সাবধান করেছেন, যেন কেউ তার নাম দিয়ে কোনো মিথ্যা প্রচার না করে । হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.) এর হতে শোনা প্রতিটি কথা সংরণের জন্যে লিখে নিতাম । এটি দেখে কুরাইশ সাহাবীগণ আমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন । আমাকে তাঁরা বলেন- তুমি রাসূল (সা.) এর মুখে যা শোন তা সবই লিখে রাখ ? অথচ রাসূল (সা.) একজন মানুষ । তিনি কখনও সন্তোষ ও কখনও রাগের মধ্যে থেকে কথা বলেন । (আবু দাউদ, কিতাবুল ইল্ম) হজরত আবদুল্লাহ বলেন, অতঃপর আমি হাদীস লেখা বন্ধ করে দেই এবং একদিন রাসূল (সা.) এর নিকট বিষয়টি উপস্থাপন করি এবং বলি, ‘হে আল্লাহর রাসূল ! কুরাইশরা বলে তুমি রাসূলের সব কথাই লিখছ ? অথচ তিনি একজন মানুষ । সাধারণ মানুষের মত তিনি কখনও কখনও রাগান্বিত হয়ে থাকেন’। রাসূল (সা.) এ কথা শুনার সাথে সাথে নিজের দুই ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলেন- তুমি লিখতে থাক । যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, আমার এই মুখ হতে প্রকৃত সত্য কথা ছাড়া কিছুই বের হয় না । এ কথা শুনার পর হজরত আবদুল্লাহ (রা.) রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন- হে রাসূল (সা.) আপনার নিকট থেকে যা কিছু শুনতে পাই তা সবই কি লিখে রাখব ? রাসূল (সা.) বললেন,...........(হ্যাঁ)। আবদুল্লাহ (রা.) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ক্রুদ্ধ ও সন্তোষ উভয় অবস্থায় বলা সব কথাই কি লিখব ? তখন রাসূল (সা.) চূড়ান্তভাবে বললেন- হ্যাঁ এ সকল অবস্থায়ও আমি প্রকৃত সত্য ছাড়া কিছুই বলি না ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)থেকে বর্নিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাটাইয়ের (মাদুর) ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন । ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা তার মুবারক শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ ! আমরা যদি আপনার জন্য একটি তোষক বানিয়ে দিতাম ! তিনি বললেন : দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক ? আমি তো দুনিয়াতে এরুপ একজন মুসাফির, যে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নেওয়া, অতঃপর তা ছেড়ে দিয়ে চলতে শুরু করে (তিরমিজী) । আল্লাহর রাসূলের অসংখ্য সাহাবী তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন । প্রত্যেকে ঠিক যা কিছু শুনেতেন এবং তার যতটুকু মনে রাখতে পারতেন ততটুকুই বর্ণনা করতেন । সাহাবাদের মধ্যে বেশী হাদীস বর্ণনাকারী হচ্ছেন সাতজন । আহমদ বিন হাম্বল বলেন, " আমি ৭লক্ষ ৫০ হাজার হাদীস থেকে বেছে বেছে কিছু হাদীস নিয়ে আমার গ্রন্থটি সংকলন করেছি ।"

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ " তোমরা বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না-যতক্ষণ না তোমরা ঈমানদার হও । আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবেনা-যত্ক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালবাস । আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের পথ বাতলে দিব- যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে পারবে? তা-হল তোমরা নিজেদের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাও ।" (আবু দাউদ) অন্য এক হাদীসে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি নবীজী (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের সর্বোত্তম আমল কি ? উত্তরে তিনি বললেন- (ক্ষুধার্তদের) খাবার খাওয়ানো এবং চেনা -অচেনা সকলকে সালাম দেওয়া ।" (ইবনে দাউদ)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×