সম্পদ-প্রীতি ও যশ-খ্যাতির মোহ এমন মারাত্মক ধরনের দু'টি মানসিক ব্যাধি যদ্দরুন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জীবনই নিস্প্রভ ও অসার হয়ে পড়ে। গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে মানবেতিহাসে এযাবৎ যতগুলো মানবতাবিধ্বংসী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এবং যত বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি বিস্তার লাভ করেছে সেগুলোর উৎপত্তিই হয়েছিল উল্লেখিত এ দু'টি ব্যাধি থেকে।
সম্পদ-প্রীতির পরিণতি ও ফলাফলঃ (১) অর্থগুপ্ততা ও কৃপণতার অন্যতম জাতীয় ক্ষতির দিক হল এই যে, তার সম্পদ জাতির কোন উপকারে আসেনা। দ্বিতীয় ক্ষতিটি তার ব্যক্তিগত। এ প্রকৃতির লোককে সমাজে কখনও সুনজরে দেখা হয় না।
(২) তার সম্পদলিপ্সা পূরণার্থে জিনিসে ভেজাল মেশানো, মাপে কম দেওয়া, মজুদদারী, মুনাফাখোরী, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা প্রভৃতি ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন তার মজ্জাগত হয়ে যায়। স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে সে অপরের রক্ত নিংড়ে নিতে চায়। পরিশেষে পুঁজিপতি ও মজুরদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদের উৎপত্তি হয়।
(৩) এমন লোক যত সম্পদই লাভ করুক না কেন, আরও অধিক উপার্জনের চিন্তা তাকে এমনভাবে পেয়ে বসে যে অবকাশ ও অবসর বিনোদনের সময়েও তার একই ভাবনা থাকে যে, কিভাবে তার পুঁজি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে যে সম্পদ তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যম হিসেবে পরিণত হতে পারত তা পরিণামে তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
(৪) সত্য কথা যত উজ্জ্বল হয়েই সামনে উদ্ভাসিত হোক না কেন, তার এমন কোন কথা মেনে নেওয়ার সৎসাহস থাকে না, যাকে সে তার উদ্দেশ্য সাধন ও সম্পদ লাভের পথে প্রতিবন্ধক বলে মনে করে। এসব বিষয় পরিশেষে গোটা সমাজের শান্তি ও স্বস্তি বিনষ্ট করে।
গভীরভাবে চিন্তা করলে যশ-খ্যাতির মোহের অবস্থাও প্রায় একই রকম বলে পরিলক্ষিত হয়। এর ফলশ্রুতিস্বরুপ অহংকার, স্বার্থান্বেষী, অধিকার হরণ, ক্ষমতালিপ্সা এবং এর পরিণতিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও অনুরুপ আরও অগণিত মানবেতর সমাজবিরোধী ও নৈতিকতাবিবর্জিত দাঙ্গা-হাঙ্গামার উৎপত্তি ঘটে যা পরিণামে গোটা বিশ্বকে নরকে পরিণত করে দেয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এহেন অবস্থা থেকে মুক্ত রাখুন(আমিন)।