৮ম ও ১০ম শ্রেণীতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচীতে পুরস্কার পেলাম। সাথে চমৎকার সার্টিফিকেট, তার চেয়েও চমৎকার আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের দেয়া স্বাক্ষরটি। “আলোকিত মানুষ চাই” স্লোগানটি নিয়ে যিনি আমাদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন। বিটিভিতে আনন্দমেলায় ওনাকে দেখতাম, কিছুদিন পরে “চারুপাঠ” নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানও করতেন। মুগ্ধ হয়ে ওনার কথা শুনতাম, কি যেন এক মোহনীয় শক্তি আমাকে আবীষ্ট করে রাখত। ধীরে ধীরে গল্পের ছলে কথা বলেন, স্বাভাবিকভাবে এমনসব হাস্যরস করেন মনে হয় স্যারের কথা শুনতেই থাকি।
প্রসঙ্গত বলতে হয় বাংলাদেশে মাত্র ৪ জন লোকের বক্তৃতা আমাকে আকৃষ্ট করে। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার অবশ্যই এক নম্বরে, তারপর ড. ইউনূস, ড. জাফর ইকবাল ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. রেজাই করিম খন্দকার। ড. রেজাই করিম খন্দকার আমদের ব্যবসা প্রশাসন ডিপার্টমেন্টের ডিন ছিলেন। মাঝে মাঝেই আমাদের ক্লাস রুমে এসে গল্প করতেন। পান খেতেন আর মজার মজার কথা বলতেন। যেখানে আমাদের অন্য শিক্ষকদের লেকচার বিরক্তিকর মনে হতো, শুধুমাত্র এটেন্ডেন্সের কারনে ক্লাস করতাম- সেখানে আমরা সুযোগ পেলেই রেজাই স্যারের কথা শুনতে চাইতাম।
একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। বাংলা বিভাগের ম্যাডামরা শুধু সায়ীদ স্যারের গল্প করতেন। সায়ীদ স্যার নাকি কখনোই হৈমন্তী গল্পের প্রথম লাইন “কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।” শেষ করতে পারেননি। এত ব্যখ্যা, বিশ্লেষণ করতেন যে ক্লাশের ঘন্টা বেজে যেত। কিছুদিন পরেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের একাদশ শ্রেণীর বইপড়া কর্মসূচীতে ভর্তি হলাম। বাংলামটরে যাতায়াত শুরু হলো। ছোট্ট একটি জায়গায় জ্ঞানের সমারোহ, বিশাল লাইব্রেরি দেখে মনে হয়েছিল এটা যদি আমার হতো। প্রতি শুক্রবার সায়ীদ স্যার বই নিয়ে আলোচনা করতেন। শুধু শুনেই যেতাম। কিভাবে মানুষ এভাবে বলতে পারে? সময়কে কেন ধরে রাখা যায় না?
সায়ীদ স্যার যে আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে চলছেন, যে স্বপ্ন তাঁর বুকে- তার কিছুটা যদি আমরা নিতে পারতাম তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের দেশটি পাল্টে যেত।
অথচ তাঁরই এক ছাত্রের বাক্যবানে আজ তিনি জর্জরিত। তিনি কি শুধুই নিষ্ফলা মাঠের কৃষক?