somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষ্ফলা মাঠের কৃষকঃ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ

০৬ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সব সময়ই বই পড়তাম। মনে হয় তৃতীয় শ্রেণী হতেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত রঙচঙে ছবি সম্বলিত মোঘল বাদশাহদের কাহিনী বেশ ভালো লাগতো। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে বিশালত্বের হাতছানি। একদিন হারুন স্যার এসে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কথা বললেন। তারা প্রতি সপ্তাহে এসে বই দিয়ে যাবে। ১০ টাকা জমা রেখে বাসায় বই নিয়ে যাওয়া যাবে। সেই বইগুলো আমাকে ও আমার বন্ধুদেরকে পাল্টে দিল। নতুন করে ভাবতে শিখাল। প্রতি সপ্তাহে অপেক্ষা করতাম নতুন বইয়ের জন্য। সে সময় পড়া ট্রেজার আইল্যান্ড, যখের ধন, গ্রিম ভাইদের রুপকথার বইগুলো এখনো মনে দাগ কেটে আছে।

৮ম ও ১০ম শ্রেণীতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচীতে পুরস্কার পেলাম। সাথে চমৎকার সার্টিফিকেট, তার চেয়েও চমৎকার আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের দেয়া স্বাক্ষরটি। “আলোকিত মানুষ চাই” স্লোগানটি নিয়ে যিনি আমাদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন। বিটিভিতে আনন্দমেলায় ওনাকে দেখতাম, কিছুদিন পরে “চারুপাঠ” নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানও করতেন। মুগ্ধ হয়ে ওনার কথা শুনতাম, কি যেন এক মোহনীয় শক্তি আমাকে আবীষ্ট করে রাখত। ধীরে ধীরে গল্পের ছলে কথা বলেন, স্বাভাবিকভাবে এমনসব হাস্যরস করেন মনে হয় স্যারের কথা শুনতেই থাকি।

প্রসঙ্গত বলতে হয় বাংলাদেশে মাত্র ৪ জন লোকের বক্তৃতা আমাকে আকৃষ্ট করে। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার অবশ্যই এক নম্বরে, তারপর ড. ইউনূস, ড. জাফর ইকবাল ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. রেজাই করিম খন্দকার। ড. রেজাই করিম খন্দকার আমদের ব্যবসা প্রশাসন ডিপার্টমেন্টের ডিন ছিলেন। মাঝে মাঝেই আমাদের ক্লাস রুমে এসে গল্প করতেন। পান খেতেন আর মজার মজার কথা বলতেন। যেখানে আমাদের অন্য শিক্ষকদের লেকচার বিরক্তিকর মনে হতো, শুধুমাত্র এটেন্ডেন্সের কারনে ক্লাস করতাম- সেখানে আমরা সুযোগ পেলেই রেজাই স্যারের কথা শুনতে চাইতাম।

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। বাংলা বিভাগের ম্যাডামরা শুধু সায়ীদ স্যারের গল্প করতেন। সায়ীদ স্যার নাকি কখনোই হৈমন্তী গল্পের প্রথম লাইন “কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।” শেষ করতে পারেননি। এত ব্যখ্যা, বিশ্লেষণ করতেন যে ক্লাশের ঘন্টা বেজে যেত। কিছুদিন পরেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের একাদশ শ্রেণীর বইপড়া কর্মসূচীতে ভর্তি হলাম। বাংলামটরে যাতায়াত শুরু হলো। ছোট্ট একটি জায়গায় জ্ঞানের সমারোহ, বিশাল লাইব্রেরি দেখে মনে হয়েছিল এটা যদি আমার হতো। প্রতি শুক্রবার সায়ীদ স্যার বই নিয়ে আলোচনা করতেন। শুধু শুনেই যেতাম। কিভাবে মানুষ এভাবে বলতে পারে? সময়কে কেন ধরে রাখা যায় না?

সায়ীদ স্যার যে আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে চলছেন, যে স্বপ্ন তাঁর বুকে- তার কিছুটা যদি আমরা নিতে পারতাম তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের দেশটি পাল্টে যেত।

অথচ তাঁরই এক ছাত্রের বাক্যবানে আজ তিনি জর্জরিত। তিনি কি শুধুই নিষ্ফলা মাঠের কৃষক?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৫৪
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×