somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাহীন ভূইঁয়া
আমার স্বপ্ন ছিল ঘাতক রাজাকারদের বিচার ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার জীবদ্দশায় দেখার। আমার আর কোনো চাওয়া নেই তবে জামাতের সব ব্যবসা প্রতিস্ঠান অচিরেই বাংলাদেশে বন্ধকরা উচিত। না হলে ওরা আবার অঙ্কুর উদগম করবে এই মাটিতেই।

সৃষ্টিছাড়া চৈতি ধুলোর ঝড়ই উড়িয়ে নিয়ে যায় পুরনো বছর স্বাগত ১৪২০

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৈত্রমাসে কবিরা যতই প্রেয়সীর চোখে নিজের সর্বনাশের আভাস দেখে পুলকিত হয়ে উঠুক না কেন, ঘরে ঘরে ঘরণীদের হাতে এ সময় সম্মার্জনীই দেখা যায় বেশি।
আহা! কী মনোরম এই শেষ বসন্তের বেলা! কোকিল কু-উ কু-উ করছে, দুপুর দুটোয় ঘুঘু ডাকছে ঘুম-ঘুম ঘুম-ঘুম, কাকবউটি ভেবে চলেছেতিনটে ডিম পেড়েছিলাম, না চারটে! ডাগর আম ঝুলছে গাছে গাছে যেন অগুনতি সবুজ রঙা বাংলার পাঁচ! ডানপিটেরা পকেটে ঢিল গুলতি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে আম চুরি করতে। এ চুরি তো চুরি নয়, এ হল যুদ্ধজয়ের গর্ব। কার টিপ কত ভাল, তারই পরীক্ষা হয়ে যায়। গুলতি ধরো, ঢিল নাও, তাক করোথপাস! ঠিক জায়গায় লাগলেই একেবারে বোঁটাশুদ্ধ খসে পড়বে। যাদের এমন সাহস নেই, তারা বিধুর আকাশের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে কবে কালবৈশাখী আসবে। ঝড়ে আম পড়বে। চোখে ধুলো ঢুকে কড়কড় করবে, জিভে বালু কিচকিচ। আর ওই ধুলোবালি খেতে খেতেই আম কুড়িয়ে কোঁচড়ে তুলে দে দৌড়!
চৈত্রমাসে শুধু কবির কেন, আমগাছের মালিকেরও কম সর্বনাশ হয় না।

চৈত্রবৈশাখী ওই ঝড়ও কিছু কম দস্যি নয়। ক্রীড়াকৌতুকে, হাওয়ার ঝাঁটা বুলিয়ে, মাঠ ঘাট গাছপালা থেকে চৈত্রের যত সৃষ্টিছাড়া ধুলো উড়িয়ে সে খল খল করে হাসতে হাসতে চলে যায়। তার মাতনে এমন এক উড়িয়ে দেওয়ার নেশা যে ঘরে ঘরে বউরা সব ঝাঁটাহস্তেন সংস্থিতা! সেই যে শরতে শেষ বৃষ্টি হয়েছিল, তারপর হেমন্তে শরৎবিদায়ের বিষাদ, শীতে কেবল কুঁড়েমি লাগত, আর খাই-খাই ভাব। নতুন চালের পায়েস, পিঠে, পুলি! চাষি-বউ হলে তো কথাই নেই। সারাদিন ধান ঝাড়া, সেদ্ধ করা, শুকোন, গোলায় ভরাহাজার কাজে খেয়ালই থাকে না কোন খাটের তলায় মাকড়শার জাল, কোন আলমারির পেছনে টিকটিকির বাসা আর আনাচে-কানাচে ধুলোর সঙ্গে চুলের জটের জঞ্জাল!
অতএব, ঝাঁটা হাতে মেয়েদের তখন দেখায় অসি হাতে ঝাঁসির লক্ষ্মীবাঈয়ের মতো। টুঁ শব্দ করবে, এমন উপায় থাকে না পুরুষের। অ্যাই, আলমারিটা সরিয়ে দাও তো। খাটটা টানো না। লেপ তোশক বালিশউঠোনে সব রোদ্দুরে দাও দিকি! লাঠিপেটা করো। বাপরে! কী ধুলো! ঝ্যাঁটা বুলোন চলতে থাকে সব জায়গায়। শুধু আরশোলা ইঁদুর টিকটিকি কেন, হাতি গণ্ডার থাকলেও পার পাবে না! সেইসঙ্গে দুপুরে জুটবে সেদ্ধভাত। কী করব? আজ ঘর ঝেড়েছি না? বৈশাখের গিন্নি যদি বৈশাখী ঝটিকা হয়সেও নিশ্চয়ই এমনি করেই বলে।
ঝোড়ো ঝ্যাঁটানির পর যেমন শান্ত হয়ে আসে প্রকৃতি, তপ্ত বায়ু স্নিগ্ধ হয়, তেমনি পয়লা বৈশাখ। ফাল্গুনী বসন্ত পলাশে শিমুলে মাতিয়ে রেখেছিল। আমের বোলের গন্ধে তার বাতাস ছিল আমোদিত। শীতে যত পাতা ঝরার নিঃস্বতা, ভরিয়েছিল নবপল্লবদলে। এবার ফল ফলানোর পালা। হিসেবের নতুন খাতায় নম গণেশায় বলে ফুল-চন্দন ছিটিয়ে পুরুতঠাকুরের পকেট ভরানোর পালা। নতুন সবুজ পাতার সঙ্গে নতুন হালখাতা। এক বছরের যত ময়লা সরে গিয়েছে ঝড়ে। উড়ে গিয়েছে ঝাড়ু বুলোনর দক্ষ কারসাজিতে। আজ সিঁদুরের ফোঁটা পড়ছে দুয়ারে। বসুধারার মতো মঙ্গল ঝরে পড়ুক সংসারে। আজ পরনে নতুন শাড়ি, নতুন জামা, নিদেন নতুন লুঙ্গি একটি। আজ মিষ্টিমুখের দিন।
যত জাতি রয়েছে এ দেশে, সবার আছে নিজস্ব বর্ষপঞ্জী। প্রকৃতির রূপে রসে মিলিয়েই তার নতুন বছর। কেজো জগতে পয়লা জানুয়ারির যতই দাপট থাক, তিথি-নক্ষত্রর অঙ্কে ভরা দেশজ পঞ্জিকার বিক্রি এতটুকু কমেনি। জীবনযাত্রা অনেক পাল্টে গিয়েছে। তবু চারপাশের প্রকৃতিতে নিজস্ব যে রূপের খেলা তা ভুলবে কী করে মানুষ!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভ্রমণ স্মৃতি - ছাংশা, হুনান প্রদেশ, চীন ২০১৮ সাল

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ২৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৪২


জায়গাটির নাম ইউয়েলু শান বা 岳麓山 বা Yuelu Mountain. দক্ষিণ-মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরে অবস্থিত। পাহারটি শহরের মাঝে বয়ে চলা শিয়াং নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত, ছবিতে আমার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সহেলিয়া তার নাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

সহেলিয়া তার নাম
ধাপারিয়া ছিল তার গ্রাম
আমার বাড়ির সামনে দিয়ে
আসতো যেতো প্রতিদিনই সে
জানালাটা খুলে আমি
তার দিকে চেয়ে তার
হেঁটে যাওয়া দেখতাম



মাথায় দুটি বেণি ছিল
দু পাশে দুটি লাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মোছাব্বিরুল হক, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫৮



শত মমতার গল্প গাঁথুনি পৃথিবীর ভাঁজে ভাঁজে
কিছু নয় তার মাতৃতুল্য মা তাঁর তুলনা নিজে।
কত প্রিয়জন বন্ধু-স্বজন প্রাণপ্রিয় সন্তান
হতে পারে পর এলে কভু ঝড়
ভুলে শত অবদান।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×