জিহাদ মানেই কি যুদ্ধ??
কিছু কিছু কড়া মেজাজের ইসলাম পন্থী আছেন যারা জিহাদকে সব সময় যুদ্ধ মারমারি ইত্যাদি অর্থে গ্রহণ করেন। সারা পৃথিবীর মূল ধারার আলেমরা অবশ্য এটার প্রতিবাদে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। তারা নিজেদের জ্ঞানের ঝোলা উপুর করে দিয়ে জিহাদী মন মানসিকতার যুব সমাজকে নারীর শাড়ীর আচলে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করে চলেছেন। মূল ধারার আলেম বলতে বর্তমানে তাদের বোঝায় যারা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের নিকট স্বল্প মূল্যে দ্বীন ঈমান বিক্রয় করে নিঃস্ব হয়েছেন। এই সকল মূল্য ধরা ওলামা মাশায়েখরা যেসকল যুক্তি দিয়ে জিহাদ থেকে যুব সমাজকে অনুৎসাহিত করেন আমি নিচে সেগুলো উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে চাই আর আল্লাহই তৌফিকদাতা।
[1] জিহাদের শাব্দিক অর্থঃ এসকল মূল ধারার আলেমরা সর্বাপেক্ষা বড় যে ভুলটি করেন তা হলো শব্দ নিয়ে খেলা। জিহাদ কথাটি কারো মুখে কখনও শুনলে বা মনের ভুলে নিজের জবানে কখনও উচ্চারিত হলে সাথে সাথেই তওবা ইস্তিগফার পড়ার ভঙ্গিতে বলেন, জিহাদ মানেই তো আর হত্যা খুনোখুনি নয়! যে কোনো প্রকারের চেষ্টা প্রচেষ্টাকেই জিহাদ বলা হয়। ডাঃ জাকির নায়েক তো আরো খোলোশা করে বললেন, ‘‘ এমনকি মুশরিকরাও জিহাদ করে থাকে’’ তারপর কোরানের একটি আয়াত শুনিয়ে দিলেন যেখানে আল্লাহ বলেন, (وان جاهداك ان تشرك بي ......) যদি তোমার পিতা মাতা তোমাকে দিয়ে আল্লাহর সাথে শিরক করানোর চেষ্টা করে। এখানে চেষ্টা অর্থে জাহাদা (جاهد) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আর জাকির নায়েকরা এটার সুযোগ গ্রহণ করে মুশরিকদের মুজাহিদ বানিয়ে দিয়েছে এগুলো খামখেয়ালী আর শেয়ালী পান্ডিত্য ছাড়া কিছু নয়। এদের উত্তরে আমরা বলবো শুধু জিহাদ কেনো শরীয়তে যত শব্দ ব্যাবহৃত হয় তার সবগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অর্থ আছে। সলাত (صلاة) অর্থ দোয়া করা বা দরুদ পড়া আল্লাহ বলেন, (وصل عليهم) ‘‘ আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন’’ [সূরা তাওবা/103] (يا ايها الذين آمنوا صلوا عليه وسلموا تسليما) ‘‘ হে ঈমানদাররা তোমার নবীর উপর দরুদ পড়ো এবং সালাম পেশ করো’’ [আহযাব/56] এই সকল আয়াতে দোয়া ও দরুদ অর্থে সলাত (صلاة) শব্দ ব্যবাহার করা হয়েছে। এখন যদি কোনো বে-শরা নেড়া ফকীরকে বলা হয় তুমি কি পাচ ওয়াক্ত সলাত পড়ো? আর সে বলে জী হা সলাত অর্থ দোয়া দরুদ আর আমরা সারা দিনই দোয়া-দরুদ পড়ে থাকি। তবে পূর্বক্ত শেয়াল পন্ডিতগণ বিষয়টিকে কিভাবে নেবেন? এমনকি পুরোপুরি ভাষাভিত্তিক অর্থে বললে সলাত অর্থ (تحريك الصلوين) বা মাজার দুই দিকের হাড় নাড়ানো। ডাঃ জাকির নায়েকের পদ্ধতি অবলম্বন করলে মুশরিককে মুজাহিদ বানানোর মতো নর্তকিকেও মুসল্লী বানানো যায় [নাউযু বিল্লাহ] যেহেতু নাচের সময় তার মাজার দুই হাড় চরম হারে নাড়া-চাড়া করে। এগুলো সবই সত্য কিন্তু হতভাগা গবেষক গণ সলাতের ক্ষেত্রে এইসব শাব্দিক জটিলতা সৃষ্টি করেন না কেনো? তারা কেবল জিহাদের প্রসঙ্গে রঙ বেরঙের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির করে রক্ষা পেতে চান। তাবলীগ জামাতের কোনো কোনো ভাই ‘‘ অন্যায় কাজ হাত দ্বারা পাল্টে দাও ........ ’’ হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন এর অর্থ হলো নিজের হাত দিয়ে অপরাধীর পা চেপে ধরা। জানি এ ব্যাখ্যায় অনেকে হাসবেন কিন্তু শেষ মেষ মুশরিকদের মুজাহিদ বানিয়ে দেওয়ার ব্যাখ্যায় বেশিরভাগ লোক হাসার পরিবর্তে প্রশংসা করতে শুরু করেন। জিহাদ অর্থ চেষ্টা প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম করা এই যুক্তিতে যারা কাফিরদের সাথে জিহাদ করা বলতে কাফিরদের সন্তুষ্ট করতে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাওয়া বা তাদের ক্ষেত ক্ষামারে কামলা খাটা ও তাদের গরুর রাখালী করা বুঝে থাকেন তাদের জ্ঞানের ব্যাপারে করুনা হওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। কথা হলো শরীয়ত যে শব্দটিকে যে অর্থে ব্যবহার করেছে সেই শব্দটিকে সেই অর্থেই বুঝতে হবে। কোনোরুপ কুটিলতার আশ্রয় নিয়ে শাব্দিক জটিলতা সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লাহ (সুবঃ) ইয়াহুদী খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেন,
يحرفون الكلم عن مواضعه
‘‘ তারা আল্লাহর বাণীকে তার প্রকৃত স্থান হতে বিকৃত করতো। ’’
[নিসা / 46]
আল্লাহ আমাদের এই দূর্মতি হতে রক্ষা করুন।
এ বিষয়ে আরো দু-তিনটি পয়েন্ট লেখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বেশি দীর্ঘ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় তা থেকে আপাতত বিরত থাকছি। আল্লাহ তৌফিক দিলে সেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১২ ভোর ৫:২১