somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মরণ : কাওয়াল রওশন জালালাবাদী

০৫ ই জুন, ২০১২ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘‘এসো তুমি ফৌজে আলম শাহজালাল আউলিয়া, রহমতের পেয়ালা দাও গো আমারে হাত বাড়াইয়া’’ বেতার থেকে ইথারে ভেসে আসা এই বাঙলা কাওয়ালী গানের স্রষ্টা সদ্যপ্রয়াত কাওয়াল রওশন জালালাবাদী। উপমহাদেশে সঙ্গীত পিপাসুদের কাছে উর্দূ কাওয়ালী অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় সঙ্গীত। রাতভর আসর করে এই গান শোনার শ্রোতা এখনো কম নয়। সেই জনপ্রিয় মাধ্যমটিকে বাঙলায় জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য্য তিনি কাওয়াল রওশন জালালাবাদী। সত্তর এবং আশির দশকে সিলেটের পাড়া মহলস্নায় ক্লাব সংগঠনের উদ্যোগে যখনই কোন সঙ্গীতানুষ্ঠান হত তখনই ডাক পড়তো কাওয়াল রওশন জালালাবাদীর। তিনি তার দলবল নিয়ে বাঙলা কাওয়ালী গানে মুখরিত করে রাখতেন শ্রোতাদের। তার গানে যেমন ওলি আউলিয়াদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল তেমনি ছিল দেশ মাটি আর মানুষের প্রতি ভালবাসা। ৭১’এর ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সারাদেশে উত্তাল স্বাধীনতাকামী মানুষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা কামনায় মানুষের আকাঙ্খা তত বলিয়ান হচ্ছে। এমনি অবস্থায় ২৫ শে মার্চ সকাল বেলা কাওয়াল রওশন জালালাবাদী তৎকালীন রেডিও পাকিসত্মানের আমন্ত্রণে সিলেট বেতারের টিলাগড়স্থ সম্প্রচারকেন্দ্রে আসেন সঙ্গীত পরিবেশন করতে। সিলেটের আধ্যাত্মিক সম্রাট হযরত শাহজালাল (রঃ) কে উদ্দেশ্য করে তার লিখা উর্দূ কাওয়ালীটি মহড়ায় বসে তিনি উপলব্ধি করেন বাঙলার মাটিতে আর বিজাতীয় ভাষায় কাওয়ালী গাওয়া নয়, বাঙলায় গাইতে হবে। তিনি তাৎÿণিক ভাবে তার লিখা গানটিকে বাঙলায় অনুবাদ করে আঞ্চলিক পরিচালক বরাবরে অনুমোদনের জন্য দাখিল করেন এবং কিছু বাধা বিপত্তি অতিক্রম শেষে গানটি সরাসরি (লাইভ) প্রচারে সÿম হন। ১৯৩১ সনে ঢাকার বড়কাটরায় মৌলভী আহসান উলস্নাহ্ ওরফে আব্দুল হাকিম এর ঔরশে জন্মগ্রহণকারী কাওয়াল রওশন বংশ পরম্পরায় সিপাহশালার নবাব শায়েসত্মা খাঁ ’এর উত্তরসূরী। এ’কারণে তিনি নিজেকে নবাবী কাওয়াল হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন। তার রক্তে নবাবী ধারা প্রবাহিত হওয়ার কারণে তার আচার-আচরণে আভিজাত্য ও স্বাতন্ত্রবোধ ছিল স্পষ্ট। নিজেকে আপাদমসত্মক একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে জীবনের সোনালী দিনগুলো অকাতরে উৎস্বর্গ করেন কাওয়াল রওশন জালালাবাদী। অসংখ্য গানের রচয়িতা এই গুণীশিল্পী ১৯৫৬ সালে ঢাকা বেতারের সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে মৃত্যুর পুর্ব পর্যমত্ম একজন নিবেদিত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার অবদান রেখে গেছেন। তিনি একাধারে খেয়াল, ঠুমরী, গজল, নজরম্নল সঙ্গীত, পলস্নীসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তবে সমধিক পরিচিত ছিলেন কাওয়াল হিসেবে। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তিনিই প্রথম বাঙলা কাওয়ালী পরিবেশ করেন তাই বলা যায় কাওয়াল রওশন জালালাবাদীই বাঙলাদেশে বাঙলা কাওয়ালীর জনক। ঢাকার বড়কাটরায় জন্মগ্রহণ করায় উর্দূ ভাষায় তার বেশ দখল ছিল। এরই সুবাদে তিনি তদানিমত্মন সরকারি পাবলিসিটি অফিসে (বর্তমানে জেলা তথ্য অফিস) খন্ডকালীন ঘোষক হিসেবে জনস্বার্থে প্রচারিত সরকারি ঘোষণা সমূহ উর্দূ ভাষায় মাইকিং করতেন। ২৫ মার্চের বর্বরোচিত আক্রমনের পর সিলেটে কারফিউ জারীর ঘোষনায় মাইকিং করতে তিনি অস্বীকার করেন অত;পর ছড়ার পারের সিকান্দার এই দায়িত্ব পালন করেন। এই ঘটনার পর শিল্পী জালালাবাদী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরের অধীনে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যোগদান করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং সেন্টার ও শরণার্থী শিবিরে স্বাধীনতার চেতনায় সঙ্গীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেন। পেশাজীবনে তিনি কাপড়ে ছাপার কাজ করে সংসার নির্বাহ করতেন। জিন্দাবাজারস্থ সমবায় ভবনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। তার প্রতিটি কাজে শিল্পী মনের কারম্নকাজ অত্যমত্ম সুনিপুণ ভাবে ফুটে উঠতো বলে সুধীমহলে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তরকালে যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বয়ন শিল্পেও বৈপস্নবিক পরিবর্তন আসে এবং ছাপার জগৎটি যন্ত্রের দখলে চলে যায়। কাওয়াল জালালাবাদী সঙ্গীতকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। এই গুণীশিল্পী ১১ এপ্রিল ২০১২ তারিখে ৮১ বছর বয়সে ৮০ নং দিশারী হাওয়াপাড়াস্থ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ পুত্র ৩ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ভক্ত অনুরাগীদের রেখে গেছেন। জৈষ্ঠ্য ছেলে আঞ্জুমান জালালাবাদী পিতার আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রে সঙ্গীত শাখায় কর্মরত আছেন। অন্যান্যদের মধ্যে মোঃ আশরাফ জালালাবাদী ও শাজাহান জালালাবাদী লন্ডন প্রবাসী। অপর দুই ছেলে সোলেমান ও জাহাঙ্গীর শিÿা জীবনে রত। তিনকন্যার মধ্যে আঞ্জুমান আরা, ইসমত আরা ও মুনমুন আরা সকলেই বিবাহিত জীবন যাপন করছেন। সিলেটে বাঙলা কাওয়াল রওশন জালালাবাদীর নাম তার ভক্ত অনুরাগীদের মনে অমর হয়ে থাকবে। আমরা এই মহান শিল্পীর রম্নহের মাগফেরাত কামনা করছি।
[সংগ্রহ]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ সকাল ৯:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×