somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুরুদক্ষিণা (আমাদের প্রিয় শিক্ষক হাশিম আখতার মোঃ করিমদাদ স্যারের উদ্দেশ্যে)

০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিস থেকে ফেরার পথে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো । আমার , আমাদের প্রিয় শিক্ষক হাসিম আখতার মোঃ করিমদাদ স্যার খুব অসুস্থ । ২ সপ্তাহ আগে পঞ্চগড়ে দেখে এলাম গুরু কে । চোখ মন কোনটাই বাধঁ মানতে চায় না । পঞ্চগড় জেলার শিল্প , সংস্কৃতি , সাহিত্য , নাট্যজগতে তার অগাধ বিচরন । বলা যায় তিনি বাচিয়ে রেখে ছিলেন আমাদের পঞ্চগড়ের এই দিকগুলো । নির্হংকারী এই মানুষটা পঞ্চগড়ের হাজার হাজার ছাত্রের অসম্ভব প্রিয় একজন মানুষ । শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত্য সুনামের সহিত পঞ্চগড় বি পি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করছেন ।

হেনরি এডামস এর একটি কথা আজ খুব মনে পড়ছে “ শিক্ষকের প্রভাব অনন্তকালে গিয়েও শেষ হয় না “ । সে কথা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । আজ যাঁর কথা বলবো তিনি নিছক পাঠদান কারী শিক্ষক নন , তিনি জ্ঞান বুদ্ধ , তিনি আত্মার মিস্ত্রী , তিনি ভরা কলসের মতো । অযুত জ্ঞানের মাঝেও কখনও তাঁর মদ্ধ্যে এক চিলতে অহংকার দেখিনি ।

হাসিম আখতার মোঃ করিমদাদ । একটি নাম নন , তিনি একটি প্রতিষ্ঠান । এতো কিছু যানতেন , যানাতেন । মনে হতো তার পাশে থাকলেই বুঝি পুন্য হয় । আজ একটা স্মৃতি না বললেই নয় । ২০০৯ সালের কথা । আমরা সবাই তখন ঈদের ছুটিতে পঞ্চগড়ে । হতাত মনে হল পঞ্চগড়ের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নাটক করবো । দৌড়ে গেলাম স্যারের কাছে । খুব করে বললাম ১০দিনে নাটক তুলবো মঞ্চে । যারা মঞ্চে কাজ করেছেন তারা যানেন এটা কত দুরহ , তাও আমরা সবাই আনাড়ি অভিনেতা । স্যার তার লেখা “মিশন সোনারবান” নাটক টি দিলেন । রিহেয়ারসেলে অনেক হেল্প করলেন । পঞ্চগড় নাট্যসমিতির সবাইকে নিয়ে এগিয়ে এলেন । ৮দিনের মাথায় পঞ্চগড় অডিটরিয়ামে নাটক মঞ্চস্থ হলো । বাচ্চু স্যার কেঁদেদিলেন । এর পর যতবার গেছি খালি হাতে নয় বরং হাত আর হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছিলেন । পড়ে পঞ্চগড়ের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হারুন উর রশিদ, নাজিম চেয়ারম্যান ও অনেকের চরিত্র নিয়ে আমি “আত্মজ” নামে একটা নাটক লিখি । স্যারের সহায়তা ছাড়া যা সম্ভব হতো না বলে আমি মানি ।

আদর্শ ছাড়া , মুল্যবোধ ছাড়া , ন্যায় ছাড়া , জ্ঞানের রাজ্যে পরিভ্রমের আকর্ষন ছাড়া , মনের সুপ্ত চিন্তাশক্তির প্রকাশ যদি হয় গুরুর কাজ , তবে শিষ্য হিসেবে আজ বলে যেতে চাই তিনি পৃথিবীর যোগ্যতম শিক্ষাগুরু । যারা তোমার সানিধ্য পেয়েছিল তারা যানে কোন মহামুল্যবান সুগন্ধির সুবাস স্পর্শ না করলেও তনু মনে লেগে থাকে , তুমি তেমনি । আমরা হয়তো সুগন্ধ ধারনের যোগ্যতা অর্জন করিনি কিন্তু উপকৃত হয়েছি ।


কবি গোলাম মোস্তফার শিক্ষক নিয়ে একটা লাইন বলি

“ পিতা গড়ে শুধু শরীর , মোরা গড়ি তার মন ,
পিতা বড় কিবা শিক্ষক বড় – বলিবে সে কোন জন ? “

তিনি আমাদের পিতার মতই ছিলেন বটে । শিক্ষক হিসেবে আমি তার কাছে পড়ার ও জানতে চাওয়ার ক্ষুদা বাড়ানো শিখেছি । স্বামী বিবেকানন্দের কথা বললে একটা কথা বলতেই হয় ব্যক্তির আত্মা হতে অন্য আত্মায় শক্তি সঞ্চারিত হলেই যদি তাকে গুরু বলে তবে হাসিম আখতার মোঃ করিমদাদ আমার গুরু , আমি বা আমরা তার অযোগ্য শিস্য ।

বাচ্চু স্যারকে আমি কখনও সুনাম , অর্থের পিছনে দৌড়াতে দেখিনি । তিনি সত্যি পাহাড়ের মতো বড় মনের অধিকারি ছিলেন । ছোট হননি কখনও । সম্মান পেয়েছেন সব শ্রেনীর মানুষের কাছথেকে । কখনও ক্ষমতা অপব্যবহার করেন নি । স্কুলে যখন পড়তাম তখন দেখতাম অনেক বড় বড় সাহিত্যিক স্যারের কাছে তাদের বই পাঠাতো । কেমন জানি প্রচার বিমুখ ছিলেন । কেন জানি মনে হয় জীবনানন্দের মতো মৃত্যুর পর যদি মুল্যয়ন করি তাঁর তবে খুব দুঃখ পাব আমি ।

গুরুর যেমন গুরু থাকে করিমদাদ স্যারের গুরু ছিলেন মজুমদার নামের তারই এক শিক্ষক । মজুমদার স্যার কোন একদিন বাচ্চু স্যার কে ক্লাসে ধরে ফেলেছিলেন গোয়েন্দা বই পড়া অবস্থায় । শাস্তি হিসেবে তুলে দিয়েছিলেন “পথের পাচাঁলি” । স্যার আমাকে বলেছিলেন এই বইটা পড়েই তাঁর জীবন সমন্ধ্যে ধারনা বদলে যায় । অপুর মত স্যার ছিলেন ডানপিটে । অপুর দৃষ্টিতে নতুন পৃথিবী দেখেছিলেন তিনি । তারপর আর পড়াশুনা বন্ধ করেন নি ।

স্যার অসুস্থ । কিডনিতে সমস্যা । ডায়াবেটিকস টা অনেক বেশী । কিডনি ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন । মন ভীষন খারাপ । গত মে মাসে পঞ্চগড়ে দেখা করতে যখন গিয়েছিলাম দীর্ঘ ২ ঘন্টার মত কথা হয়েছিল । তখনই খুব অসুস্থ লাগছিল তাকে । আমি কায়মন বাক্যে দোয়া করি উনি ফিরে আসবেন সুস্থ হয়ে । পঞ্চগড়ের হাল না হলে কে ধরবে । আমরা যারা তরুন, আমরা জানি পঞ্চগড়ে ভাল কাজে এই মানুষটা সব সময় পাশে থাকেন । সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি যেন তারাতারি আরোগ্য লাভ করেন ।

যা দিয়েছেন আমাদের তা নাই বা বললাম । বা বলেও ছোট করা হবে তাঁকে ।
“ গুরু যদি এক বর্ণ শিষ্যের শিখায় কোনদিন
পৃথিবীর নাই দ্রব্য যা দিয়ে শোধ দিবে ঋন । “
– চানক্য পন্ডিত

আপনি আসল বিপ্লবী । আপনাকে আজ হৃদয়ের সবচেয়ে ভিতরের জায়গা টা থেকে সম্মান ও সালাম ।



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ১২:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনিদের আত্মদান ধর্মযুদ্ধ নয়; এটি স্বাধীকারের যুদ্ধ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যেকোন বিষয়কে ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে উপস্থাপন করে৷ ইসলামের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা তার ভিত্তিতে কনভারজেন্স নির্ধারিত হয়৷ বাঙালি মুসলমানরা এক্ষেত্রে এক কাঠি ওপরে৷ পক্ষ বিপক্ষ বেছে নেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×