somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই ছবিটি এখনো অম্লান!

০২ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তা ধরে দ্রুত হেঁটে চলেছে বিভিন্ন বয়সী পাঁচ শিশু। মাঝের শিশুটির গায়ে জামা-কাপড় নেই। সবার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। ভয় আর আতঙ্কে কাঁদছে সবাই। শিশুদের পেছনে কয়েকজন সশস্ত্র সেনাসদস্য।
বার্তা সংস্থা এপির আলোকচিত্র সাংবাদিক হুন কং উটের ছবিটি তুলতে সময় লেগেছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু সাদা-কালো ছবিটি অম্লান হয়ে আছে ৪০ বছর পরও। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতার এটা একটা দৃশ্য মাত্র। তবে এই একটা ছবিই নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল ছবিটি।
ছবিটি ক্যামেরায় ধারণ করে পুলিত্জার পুরস্কার জেতেন আলোকচিত্রী উট। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরতে গেলেই ছবিটি সবার সামনে চলে আসে। এই দৃশ্যের পেছনের ইতিহাসটা কিন্তু বেশ করুণ। অথচ সেটা প্রায়ই থেকে যায় অগোচরে।
ছবির মাঝে থাকা বস্ত্রহীন শিশুটির বয়স তখন ছিল নয় বছর। নাম—কিম ফুক। সেদিনের সেই শিশুটি প্রাণে বেঁচে যায়। ওর বয়স এখন ৪৯ বছর। যুক্তরাজ্যের মেইল অনলাইনকে কিম বলেছেন, ‘আমি সত্যি সেদিনের সেই মেয়েটিকে ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু পারি না। বারবার ছবিটা আমার চোখে ভেসে উঠে।’
ঘটনার বর্ণনায় কিম বলেন, ‘দিনটি ছিল ৮ জুন, ১৯৭২। সেনাদের তীক্ষ চিত্কার শুনতে পাই আমি। সেনারা সবাইকে জায়গাটা ছাড়তে বলছে। ওরা এখানে বোমাবর্ষণ করবে। আমাদেরকে হত্যা করা হবে!’
কয়েক সেকেন্ড পরই চারদিকে কালো ধোঁয়া দেখতে পায় কিম। সেনারা বোমাবর্ষণ করছে। কিমের পরিবারও তিন দিন ধরে ওখানেই আছে। গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিতে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সেনারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাণভয়ে ছুটতে থাকে কিম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানের গর্জন শুনতে পায় ছোট্ট কিম। দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিমানটি যেন ওর দিকেই তেড়ে আসছে! বিমান থেকে বোমাবর্ষণ চলতে থাকে। আগুনের শিখা এসে কিমের বাঁ-হাতে লাগে। গায়ে জড়ানো সুতি কাপড়ে লেগে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ত্বক ও পেশিতে তীব্র ব্যথা অনুভব করে শিশুটি। এ অবস্থায় গায়ের জামা-কাপড় খুলে চিত্কার করতে করতে হাইওয়ে ধরে হাঁটতে থাকে কিম। সামনেই ছিল ওর বড় ভাই। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে কিম পড়ে যায় রাস্তায়।
সেদিন ২১ বছর বয়সী ভিয়েতনামের তরুণ আলোকচিত্রীই কিমকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিত্সকেরা শিশুটির চিকিত্সা করাতে শুরুতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ পর্যায়ে সাংবাদিক উট তাঁর মার্কিন বার্তা সংস্থার ব্যাজ দেখালে মেয়েটির চিকিত্সা করেন চিকিত্সকেরা।
সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে উট বলেন, ‘ওর দৌড় দেখে আমি কাঁদছিলাম। যদি আমি ওকে সহায়তা করতে না পারতাম এবং সে মারা যেত, তাহলে আমিও নিজেকে মেরে ফেলতাম।’
কিমের ছোট্ট শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যায়। তবে ওর মুখমণ্ডল অক্ষত থাকে। কিমের স্মৃতিচারণা, ‘কোথায় ছিলাম, কী ঘটেছিল, কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। ঘুম থেকে জেগে দেখি, আমি হাসপাতালে। সারা শরীরে ব্যথা। আমার চারদিকে সেবিকারা ছিলেন। আমি চিত্কার করে কাঁদছিলাম।’ কিম বলেন, ‘শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ পরিষ্কার করতে প্রতিদিন সকাল আটটায় সেবিকারা আমাকে গোসল করাতে নিয়ে যেতেন। আমি শুধু কাঁদতাম।’
কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে বোমা হামলার ১৩ মাস পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান কিম। তত দিনে ছবিটির জন্য পুলিত্জার পুরস্কার জিতেছেন উট। ছবিটির কারণে কিমও দ্রুত বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। এখন কানাডায় আছেন কিম। বিয়ে করেছেন, সন্তানও আছে। ৬১ বছর বয়সী উট আছেন এপির সাংবাদিক হিসেবেই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এখনো দুজনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। ২০০০ সালে একসঙ্গে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। উট বলেছেন, ‘আমি সত্যি সুখী। কিমকে সহায়তা করতে পেরেছিলাম আমি। আমি ওকে মেয়ে বলে ডাকি।’

সূত্র: প্রথম আলো.....http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-02/news/262654
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×