somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত আশুগঞ্জের চরসোনারামপুরবাসী

০২ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনার বুকে থৈ থৈ পানির মাঝে জেগে ওঠা এক বিছিন্ন চরের নাম সোনারামপুর। নাম সোনারামপুর হলেও এখানকার বাসিন্দারা সব ধরনের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত। চরে বসবাসকারী প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে পার করতে হয় প্রতিটি দিন। এখানকার অধিকাংশ লোকের পেশা মাছ ধরা ও বিক্রি করা হলেও কেউ কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। নারীদের অধিকাংশ গৃহিণী। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আধুনিক জীবনযাপন এখানে স্বপ্নের মতো। চরসোনারামপুর হঠাৎ করে জেগে ওঠা কোন চর নয়। শত বছরের ইতিহাস রয়েছে এ চরের। এখানে পাশাপাশি দুটি চর রয়েছে। দুটি চরের মোট আয়তন প্রায় ২ বর্গ কিলোমিটার। ঘন বসতিপূর্ণ এ চরে বাস করে ২ হাজার ৫০০ লোক। চরের প্রবীণ ব্যক্তি যতীন্দ্র চন্দ দাস (৭৫), শৈলেজ দাস (৭০) জানান, আজ থেকে প্রায় ৭০-৮০ বছর আগে ব্রিটিশ নাগরিক মেরকাডিং প্রথম একটি পাটের গুদাম প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন এবং একটি বিনোদন কেন্দ তৈরি করেন। তখন আশুগঞ্জ ছিল পাট ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর সিলেটের ভানুগাছের হাজী কেরামত আলী চরটি কিনে নেন। স্বাধীনতার পর এ চরে সাধারণ মানুষ আসতে শুরু করেন। এখানকার প্রবীণ ব্যক্তি দেবেন্দ ও সূধীর বর্মণ জানান, প্রথমে তারা ৩-৪টি পরিবার চরে এসে বসবাস শুরু করে। তাদের চেষ্টায় আশির দশকে উপজেলার লালপুর, হবিগঞ্জের ছাতিয়ান, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, বাজিতপুর এবং ভৈরব থেকে কিছু দরিদ্র ও ভাসমান জেলে পরিবার চরে আসে। বর্তমানে আশুগঞ্জের বন্দর এলাকা ছাড়া এটি সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। আশুগঞ্জের চরসোনারামপুর মেঘনার বুকে হলেও এখানে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। আগে নদীর পানি ফুটিয়ে বা থিতিয়ে পান করা গেলেও বর্তমানে নানা কারণে নদীর পানি মারাÍকভাবে দূষিত হওয়ায় এ পানি পান করা যায় না । চরে দুটি আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল রয়েছে, যা জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য। বাধ্য হয়ে নদীর দূষিত পানি পান করেন তারা। ফলে প্রায়ই বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়। এলাকাবাসীর দাবি, এখানে অন্তত আরও ৪-৫টি আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল বসানো হলে পানির সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে। ওপারে বন্দরনগরী ভৈরব ও এপারে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দে র আলোতে আশুগঞ্জসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুতের বাতিতে ঝলমল করে ওঠলেও চরে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। এখানকার অধিবাসীদের রাতে মেঘনার বুকে দুই পাড়ের বৈদুত্যিক আলোর আভা দেখেই তৃপ্ত থাকতে হয়। রাতে চরটি একটি বিছিন্ন অন্ধকার দ্বীপের পরিণত হয়। চরের মাঝেই রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিডের বৃহৎ টাওয়ার। তাই চরের মানুষের দাবি, সরকার যদি তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়, তাহলে তারা বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যবসা করে আয়-উন্নতি করতে পারবেন এবং চরটিও বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হলে এলাকার সোন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। চরের মানুষের আশুগঞ্জ বা ভৈরব যাওয়ার একমাত্র পথ নৌকা। দিনে বা রাতে কোন মানুষ রোগক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা নেয়া কঠিন হয়ে পরে। এখানেই সরকারি স্বাস্থ্য সহকারীরা নিয়মিত আসেন না। ফলে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমও এখানে নেই বললেই চলে। চর এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করলে দরিদ্র মানুষ যেমন স্বাস্থ্যসেবা পাবেন, তেমনি পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমও জোরদার হবে। ১৯৯১ সালে চরে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার ফলে এখানে প্রাথমিক শিক্ষার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর যাতায়াত ও দরিদ্রতার জন্য স্কুলে যাওয়া হয় না অনেকেরই। চরের একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত (স্নাতক পড়ুয়া) মেয়ে চন্দনার দাবি, স্কুলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নীত করলে শিক্ষার প্রসার ঘটবে। বর্ষায় চরের মানুষের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায় বহু গুণে। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যায় চরটি প্রায় ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। ফলে চর সংরক্ষণের বাঁধ ও প্রটেকশন ওয়াল ভেঙে যায় অনেক জায়গায়। তাই বর্ষা এলেই নদীভাঙনের ভয়ে ভীত থাকে চরবাসী। চরসোনরামপুরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন জানান, চরসোনারামপুরের মানুষ অবশ্যই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×