আমাকে চুমু দেয় গোঁফওয়ালা পুলিশ। আদালতের পুলিশ ক্লাবে নেয়ার পর পরই ওই পুলিশ আমার গালে-মুখে চুমু দিতে শুরু করে। বুকে হাত দেয়। আমি বাধা দিলে আমার বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। গত মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় পুলিশের যৌন নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরী তার জবানবন্দিতে এ কথা বলেছে। এছাড়া গত বুধবার কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায়ও একই কথা বলেছেন মামলার বাদী ওই কিশোরীর মা রেবা।
ওদিকে কোতোয়ালী থানার অপারেশন অফিসার নাজমুল হুদাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া এসআই বশির আলী, এএসআই আমির আফজাল ও এএসআই নুরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বংশাল থানার এসআই জিয়াউল্লাহকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন লাল জোনের উপ-কমিশনার হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত লালবাগ জোনের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে ওই কিশোরীসহ তার পিতামাতার জবানবন্দি নেয়া হয়। ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মারুফ হাসান সরদার তার জবানবন্দি নেন। রাত ১০টা থেকে জবানবন্দি নেয়া শুরু হয়। প্রথম দফায় জবানবন্দি নেয়া হয় পুলিশের যৌন নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর। এরপর তার মা রেবা ও পরে তার পিতা ফারুকের জবানবন্দি নেয় পুলিশ। এ সময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে ৫ জন নারী আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
দেখানো হলো রাত ১০টা: বুধবার রাত ১০টায় মামলা দায়েরের জন্য কোতোয়ালি থানায় লিখিত এজাহার কপি নিয়ে যান ওই কিশোরীসহ তার পিতামাতা। কিন্তু থানা থেকে বলা হয়- ওসি স্যার নেই তাই মামলা নেয়া যাবে না। ওসি সালাউদ্দীন খানকে তারা ফোন করেন। ফোনে ওসি বলেন, তিনি রাজারবাগে আছেন আসতে ২-৩ ঘণ্টা দেরি হবে। এ পর্যায়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মারুফ হাসান সরদারকে ফোন করেন। উপ-কমিশনার তাদের লালবাগে তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে গেলে ওসিকে দেখতে পান তারা। পরে তাদের জবানবন্দি দিতে বলা হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাদের জবানবন্দি নেয়া হয়। সেখানেই রাত আড়াইটার দিকে তাদের জানানো হয় আপনাদের মামলা রেকর্ড হয়েছে। থানার এফআইআর বুকে মামলার রেকর্ড দেখানো হয় রাত ১০টা ৫ মিনিট। তারিখ ৩০শে মে ২০১২। মামলাটি পেনাল কোডের ৩৪১, ৩৪২, ৩২৩ ও ৩৭৯ ধারাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ১০-এ রুজু করা হয়েছে।
আসামি নন ওসি: মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- চিৎকার শুনে কোতোয়ালি থানার ওসি সালাউদ্দীন খান ও ৪-৫ জন পুলিশ এসে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। থানার গারদে আটকে রাখে। কিন্তু মামলায় ওসি সালাউদ্দীন খানকে আসামি করা হয়নি। ওসিকে কেন আসামি করা হয়নি জানতে চাইলে মামলা বাদী রেবা এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কথা বলতে বলেন। ওদিকে মামলার ৩নং আসামি কোতোয়ালি থানার অপারেশন অফিসার নাজমুল হুদা গতকাল থেকে ছুটিতে গেছেন। তার সার্ভিস বুকে লেখা হয়েছে গড় বেতনে ছুটি (এলএপি)। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন এসআই চিত্তরঞ্জন রায়। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্যার ১৫-২০ দিনের ছুটি নিয়েছেন। আমি গতকাল দায়িত্ব নিয়েছি। মামলায় ঘটনার মূল হোতা বংশাল থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত ওমর ফারুককেও আসামি করা হয়নি।
মামলার এজাহার: নির্যাতনের শিকার কিশোরীর মা রেবা বাদী হয়ে বুধবার কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৯শে মে আমি, আমার মেয়ে ২৭ কোর্ট হাউস স্ট্রিটে আসি। আমার মেয়ের পক্ষে স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের মামলা করার জন্য মুহুরি আবদুল গফুর মৃধার সঙ্গে আলোচনা করি। পরে সকাল ১০টার দিকে আমার স্বামী ফারুক সেখানে আসে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১নং আসামি বাবু (পুলিশের ইনফরমার) ওই চেম্বারে আসে। সে আমার স্বামীর পূর্বপরিচিত হওয়ায় নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যায়। দুপুর ১২টার দিকে মুহুরি জানান, আজ মামলা দায়ের করা যাবে না। পরে আসতে হবে। আমি আমার মেয়ে ও স্বামী দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিএমএম কোর্টের গেট দিয়ে মোটরসাইকেলে বের হওয়ার সময় ১নং আসামি বাবু ও ২নং আসামি (নিজেকে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয় দেয়) সাদা পোশাকে আমাদের পথরোধ করে। এ সময় ১নং আসামি বাবু আমাদের দেখিয়ে বলে এরা মোটরসাইকেল চোর। মহিলাদের মেয়ে বউ পরিচয় দিয়ে চুরি করে। তারা আমাদের মোটরসাইকেল কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু সেটা না নিতে পেরে আমাদেরসহ মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আরও কয়েকজন পুলিশ সেখানে এসে আমার মেয়ে ও স্বামীকে পুলিশ ক্লাবের ভেতর নিয়ে কেচি গেট আটকে দেয়। তাদের দু’জনকে দু’রুমে আটকে রাখা হয়। আমাকে ভেতর যেতে দেয় না। এ সময় ৩নং আসামি কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার নাজমুল হুদা আমার স্বামীকে চড়, লাথি ও ঘুষি মারে। চোখে খামচি মেরে উপড়ে ফেলতে চায়। এ সময় ৩নং আসামি আমার স্বামীর গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন (মূল্য ৫৫ হাজার টাকা), হাতে থাকা ঘড়ি (৫ হাজার টাকা দামের) কেড়ে নেয়। এ সময় আমার মেয়ে অপর কক্ষ থেকে চিৎকার করে বলে যে আমার গায়ে ৪নং আসামি জামান (পুলিশ), ৫নং আসামি (গোঁফওয়ালা পুলিশ) বুকে হাত দিচ্ছে। গালে মুখে চুমু খাচ্ছে। আমি তখন বাইরে থেকে চিৎকার করলে উপস্থিত আইনজীবীরা পুলিশকে গেট খুলতে বলে। গেট খুললে আমার মেয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। সে জানায়, তার গলার চেইন গোঁফওয়ালা পুলিশ জোর করে কেড়ে নিয়েছে। চিৎকার শুনে কোতোয়ালি থানার ওসি সালাউদ্দীন ও ৪-৫ জন পুলিশ আসে। তারা আমাদের ভ্যানে তুলে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। আমার স্বামীকে গারদে আটকে রাখে। আমাদের মোটরসাইকেলটি তালাহীন অবস্থায় কোর্ট এলাকায় থাকায় ৪টার দিকে আমার মেয়েসহ তালা দেয়ার জন্য কোর্ট এলাকায় যাই। এ সময় ৪ ও ৫নং আসামি আবার আমাদের গালিগালাজ ও মারধর করে। আমি চিৎকার করলে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকরা এগিলে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। ৫টার দিকে আমি ও আমার মেয়েসহ ২ জন আইনজীবীকে পুলিশ ভ্যানে তুলে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। আমার মেয়ের উপর শারীরিক নির্যাতন ও আমার স্বামীকে মারধরের বিষয়ে মামলা করতে চাইলে সাহেব না আসা পর্যন্ত মামলা করা যাবে না বলে জানায় ডিউটি অফিসার। পুলিশ দিয়ে আমাদের থানার একটি কক্ষে ঘেরাও করে রাখা হয়। সাড়ে ৫টার দিকে সাংবাদিকরা থানায় আসেন। ৬টার দিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল দু’জন সহকর্মীসহ থানা আসেন। তিনি আমাদের তার জিম্মায় নেন। পরে আমরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিই।
পুলিশ বাঘের চেয়েও ভয়ংকর: কিশোরী বললো গোফওয়ালা পুলিশ তাকে চুমু দিয়েছে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ
(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন
এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!
অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন