somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত মন্থন - গুজরাত পর্ব ২ (শেষ পর্ব উইথ ট্র্যাভেল হেল্প)

৩১ শে মে, ২০১২ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত মন্থন - গুজরাত পর্ব ১ Click This Link

প্রথম পর্বের পর থেকে...............

এত বিশাল কম্পাউন্ড, এতো বড় স্থাপনা আর এতো থমথমে একটা জমকালো মসজিদ.................. ছ’শো বছরের পুরনো আহমেদাবাদের শাহী মসজিদ কেন এতো বিখ্যাত বুঝতে পারলাম। পুরোটাই পাথরের, সারি সারি থাম আর পুরু দেয়ালে ভিতরটা ঠান্ডা, নিস্তব্ধ। দুর্দান্ত এই মসজিদে একসময় বীর মুজাহিদরা আসতেন, রাজফরমান জারী হত, অসাধারণ সব ন্যায়বিচার হত আর আজ সেই শহরে মুসলমান পরিচয় দেয়াটাও রিস্কি হয়ে দাড়িয়েছে। দু’রাকাত নামাজ পড়ে দাঙ্গায় শহীদ হওয়া মুসলিমিনদের জন্য মুনাজাত করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। বেরোতেই মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। মসজিদটা্র সরু দরজাটা ঘিরে রেখেছে কিছু কাপড়ের ভ্যান, আর সেগুলো যথারীতি মেয়েদের অন্তর্বাস। জানি না এই সেটিংটা কি ইচ্ছাকৃত, না কাকতালীয়। অবশ্য নরেন্দ্র মোদী’র কাছে এর চেয়ে ভালো আর কি ই বা চাওয়ার আছে।

আহমেদাবাদ শাহী জামে মসজিদ

আমাদের মুটের ক্লোজিং সেরিমনিটা ধরার তাড়া ছিলো, তাই বিরিয়ানীর প্রাণকাড়া ডাক উপেক্ষা করেই চললাম পরের গন্তব্যে। ল গার্ডেন............ আইন বাগান !!!! আহমেদাবাদ শহরের সবচেয়ে বড় পার্কটার এই নামকরণের উদ্দেশ্য কি তা বুঝলাম না। সাজানো গোছানো পার্ক, যেমনটি হয়ে থাকে। এরপর ইসকন কৃষ্ণ মন্দির। এখানে যাবো শুনে ড্রাইভার একটু অবাক হয়েই তাকালো। বুঝলাম না, মুসলমান হয়ে মন্দির দেখবো শুনে এতো অবাক হওয়ার কি আছে !!!

ইসকন মন্দিরের আউটলুক

ইসকন মন্দিরের ভেতর ছবি তোলা নিষেধ। ভিতরে কিছু অসাধারণ গ্রাফিটি আকা, শ্রী কৃষ্ণের জীবনের বিভিন্ন দিক। এক কোণে রাধাশ্যামের বিগ্রহ, তার চারপাশে মাথা হেট করে আছে ভক্তকূল। মন্দিরের উপরে একটা চওড়া গম্বুজ, তাতে সাইক্লিক অর্ডারে আরো কিছু ঘটনা সাজানো, খুবই জীবন্ত। ফেরবার পথে আরেকটা তীর্থে ঢু মারলাম, শ্রী গোবিন্দজী গুরুদুয়ারা। আসা যাওয়ার পথে এটার চকচকে সাদা আউটলাইন আর ডেকোরেশন দেখে চোখ টেরিয়ে গিয়েছিলো, আর এবার ঢোকার সময় শিখ লোকজনকে দেখে মাথা ঘুরে গেলো। একবার আমাদের ঢাবি ক্যাম্পাসের গুরুদুয়ারা নানকশাহীতে ঘুরতে গিয়ে ওখানকার রক্ষকের কোমরে একটা ভয়াবহ কৃপাণ বাধা দেখেছিলাম, সাথে কমপ্লিমেন্টারী হিসেবে ঘন দাড়ী আর পাকানো গোফ। সেই থেকে এই শিখ জাতিটাকে বড়ই ভয় পাই, আর তাদের ফিজিক যে শক্তিশালী। পাঞ্জাবী মেয়েরা জাতিগতভাবে বেশ সুন্দরী, কিন্তু তাকিয়ে দেখতেও ভয় লাগে, ভালো ছেলের মত চোখ নামিয়ে চলে আসলাম। ক্যাম্পাসে ফিরে আমাদের আহমেদাবাদ ভ্রমণের ইতি।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হয়েও নির্মা ইতোমধ্যেই নাম করতে শুরু করেছে

বিকেলটা আমরা কাটিয়ে দিতাম সারখেজ-গান্ধীনগর হাইওয়ে ধরে হাটতে হাটতে। ধুলো ঊড়িয়ে গাড়ি চলে তীরবেগে, আর সেই ধূলোয় স্নান করে মানুষজন খোলা আকাশের নীচে চৌকিতে বসে বসে ঐ বেসনজাত মুচমুচে খাবার-দাবার নিয়ে কাটিয়ে দেয় অলস সময়। আমরাও বেশ ক'বার ট্রাই করেছিলাম............ সাথে অত্যধিক পেয়াজ, নোনতা চাটনি আর রায়তা টাইপ পানসে পানসে সব সস। শেষে সারোয়ার ভাই সুবিধা করতে না পেরে সবজি খিচুড়ি খাওয়া শুরু করলেন, আর ঐ ধুলার রাজত্বে আমি মনের আনন্দে একের পর এক চাপাটি সাটতে লাগলাম। চেনা সব্জির মধ্যে আছে আলু, বেগুন আর বাধাকপি আর কচি মিরচ !!! (কাচা মরিচ) ............... কেন যে নিজেদের এরা জগতের স্বাদ সাম্রাজ্য থেকে বঞ্চিত রেখেছে, কে জানে।

রাত হলেই শুরু হতো আরেক মজা। দ্রুম দ্রুম বিকট সব শব্দে আমরা আতকে ঊঠতাম প্রতি রাতেই। প্রথম যেদিন শুনলাম...... সারোয়ার ভাই বললেন, স্টেনগান ফায়ারিং। লোকমান ভাই বললেন, পিস্তল। আমি ভাবলাম দাঙ্গা। সকালে আমাদের টিম ম্যানেজার বললো, আর কিছুই না............ আতশবাজী !!!! ভারতের বিয়ের অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো এই ফায়ারওয়ার্কস, আর তার ধুন্ধুমার শব্দে আমাদের ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা :P

গুজরাতের আরেকটা চোখে পড়ার মত বিষয় হলো মানুষ। একটা নরমাল সিএনজি অটোরিক্সায় কতজন আটে, ভাবুন তো! ঢাকায় চারজন পূর্ণবয়স্ক লোক কি পেছনে বসতে পারবে, বা বসতে চাইবে? ওখানে রাস্তায় হাত দেখালে অবলীলায় থেমে যায় যে কোন ট্যাক্সি, এবং নারী পুরুষ নির্বিশেষে দুমড়ে মুচড়ে পাচজন পর্যন্ত পেছনে বসে চলে যায়, একদম নরমাল !! রাস্তাঘাটে কথাবার্তাও যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি এবং হেল্পফুল। ইসকন টেম্পলের কাছে আছে বিগ বাজার, শহরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বলা যায়। মাথা খারাপ করা সব শপিং মল চারপাশে............... আর এর ভেতর দুর্দান্ত কিছু অ্যামিউজমেন্ট সেন্টার। হাসি খুশি আনন্দের এই লহরীতে দাঁড়িয়ে এখনও আমার বিশ্বাসই হয় না এই শহরে জ্যান্ত মানুষ আগুনে পুড়িয়ে উতসব করা হয়েছে।

যদিও খুব বেশি ট্যুরিস্ট এখানে আসেন না, যারা আসেন তারা সমাদরটা তাই একটু বেশিই পান।

ট্র্যাভেল হেল্প -
কোলকাতা থেকে হাওড়া আহমেদাবাদ এক্সপ্রেস আছে প্রতিদিন, মঙ্গলবার পাবেন হাওড়া পোরবান্দার এক্সপ্রেস............ সময় নেবে ৩২-৩৬ ঘন্টা। থ্রি টিয়ার এসিতে পড়বে ১৫৫০ রুপী, নন এসি স্লিপারে খরচ অর্ধেক। ঢাকা থেকে প্লেনে গেলে পড়বে ১৯,০০০ র কাছাকাছি, কলকাতা থেকে ৯০০০ (জেট এয়ার, কিংফিশার)। থাকবার জন্য শহরের পুরনো অংশই ভালো। কম দামে ভালো হোটেল পাবেন, মোটামুটি ৫০০ রুপী থেকে শুরু। সারাদিন ঘোরাঘুরি করতে একটি অটো রিজার্ভ করে নিতে পারেন, ছয়-সাতশ রুপী পড়বে। হাতে সময় থাকলে গুজরাতের নতুন রাজধানী গান্ধীনগরও ঘুরে আসতে পারেন, দূরত্বটা ৩০-৩৫ কিঃমিঃ। সেখানে অক্ষরধাম টেম্পলে একটা লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয়য়, খুবই বিখ্যাত। (আমরা দেখিনি !!) খাওয়া দাওয়া তো মূলত নিরামিষ, খরচ খুব বেশি না। একটু খুজলে নন-ভেজ ও পেয়ে যাবেন, এমনকি স্পেশ্যাল এগ রেস্টুরেন্ট ও আছে !!! হালাল খেতে চাইলে জামে মসজিদ চলে যাবেন। গুজরাতের মেমেন্টো রাখতে চাইলে ল গার্ডেনের পাশেই অনেক হ্যান্ডীক্র্যাফটস এর দোকান পাবেন।

ভালো কথা, আহমেদাবাদে মানি এক্সচেঞ্জ একটা বড় সমস্যা। ইস্কন শপিং মলে একটা মাত্র আমরা পেয়েছিলাম, তাও পুরা ধরা খাওয়ায় দিসিলো।

শুষ্ক গরম, নিরামিষ খাওয়া আর গান্ধীজির আদর্শ মিলে মিশে জিনিসটা দাঁড়ালো কি............ দেখে আসুন একবার আহমেদাবাদে !!!!

ভারত মন্থন - গুজরাত পর্ব ১

ভারত মন্থন - কোলকাতা পর্ব (একটি ট্র্যাভেল গাইডও বটে !!!)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×