somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই হাজার কোটি টাকার গ্যাস কিনতে হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকায়!!! দেশীয় কোম্পানী বাপেক্স থাকতে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান দ্বারা কেন গ্যাস উত্তোলন??

৩১ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অদক্ষ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে কিচ্ছু হবে না বলে যারা বিদেশি কোম্পানিকে ডেকে আনার অজুহাত তৈরি করে, তারাই এখন উন্নত প্রযুক্তি ও সক্ষমতার দোহাই দিয়ে আরেকটি দেশের রাষ্ট্রীয় গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্বিগুণেরও বেশি খরচে স্থলভাগের ১০টি গ্যাস কূপ খনন করার চুক্তি করছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করে। যেন কেবল রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমই পারে কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স পারে না এবং কোন দিন পারবেও না! দেশের গ্যাস সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার অজুহাত হিসেবে বারবার পুঁজি ও প্রযুক্তির অভাবের কথা বলা হয় অথচ রাশিয়ার গ্যাজপ্রমকে স্থলভাগে ১০টি গ্যাস কূপ খননের কন্ট্রাক্ট দেয়ার যে সিদ্ধান্ত গত ২১ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পাস করেছে, সেই কাজ বাপেক্স শুধু যে দক্ষতার সাথে করতে পারে তা নয়, গ্যাজ প্রমের দাবি করা অর্থের অর্ধেকেরও কম খরচে সম্পন্ন করতে পারে যা সালদা নদী, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, সুন্দলপুর, সেমুতাং ইত্যাদি গ্যাস কূপ খননের মাধ্যমে বাপেক্স ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে গত ২০ জানুয়ারি ২০১২ গ্যাজপ্রমের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে পেট্রোবাংলা ১০টি কূপ খননের চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে।
মূলত: গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির চেয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রতিই সরকারের আগ্রহ বেশি। রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক জরিপ (থ্রিডি সার্ভে) রিগসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং কারিগরিভাবে দক্ষ লোকবলসহ সব ধরনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গেই তিনগুণ বেশি অর্থব্যয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বিষয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে আরও শক্তিশালী না করে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ফলাফল আগেও ভালো হয়নি।
বাপেক্সের কর্মকর্তারা জানান, দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাপেক্সকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করে অত্যাধুনিক থ্রিডি রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে দেয়া হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্স সফলতার সাক্ষরও রেখেছে। বাপেক্সের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশি কোম্পানিগুলোকে গ্যাস উত্তোলনের ঠিকাদার নিয়োগ করায় বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে ক্রমেই বিদেশনির্ভর হয়ে পড়বে এবং দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ক্ষমতাসীনরা বরাবরই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে কমিশন নিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে থাকে। এতে ক্ষমতাসীনদের কমিশন-বাণিজ্য হলেও রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হয় না।
বাপেক্সের কর্মকর্তারা বলেছেন, ১০টি কূপের গ্যাস উত্তোলন করতে যে ধরনের কারিগরিভাবে দক্ষ জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সবই বাপেক্সের রয়েছে। বাপেক্সের মাধ্যমে এই ১০টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করলে খরচ পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে সরকারের আগ্রহ বেশি কেন এ বিষয়ে সরকারের কোনো নজর নেই।
মূলত বাংলাদেশের গ্যাসকূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে বিদেশি কোম্পানির চেয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। এ পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে, তা আমাদের নিজস্ব কোম্পানির মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা বরাবরই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশের স্বার্থের চেয়ে বিদেশিদের স্বার্থই বড় করে দেখেন। এতে তারা কিছু কমিশন পেলেও রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বাপেক্স এ পর্যন্ত প্রতি ৪টি কূপ খনন করে ৩টিতে সাফল্য পেয়েছে। যদিও তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের বিষয়ে বাপেক্সসহ রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার উদ্দেশ্য একটি-ই এখান থেকে কিছু কমিশন পাওয়া। এতে ক্ষমতাসীনদের ব্যক্তিগত উন্নতি হলেও জ্বালানি খাতের উন্নতি হয়নি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর যেসব উপদেষ্টা রয়েছেন তাদের আচার-আচরণ ও কর্মকা- দেখলে মনে হয়, তারা দেশের চেয়ে বিদেশের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছেন। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোকে বাদ দিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে তারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বাবদ মাত্র ২৫ টাকা দেওয়া হয়, অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য বাবদ গড়ে তিন ডলার বা ২১০ টাকা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কেনার পাশাপাশি তাদের কর অবকাশের সুযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে গত ছয় বছরে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে পেট্রোবাংলা যে ১৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে, তা থেকে এক টাকাও কর পায়নি বাংলাদেশ।
সব হিসেব কষে দেখা গেছে, যে গ্যাস আমরা দুই হাজার কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম, আমাদের গ্যাস ব্লক বিদেশি কোম্পানির হাতে থাকায় সেই গ্যাস প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এটা বিদেশি কোম্পানিকে ভর্তুকি দেওয়ার সমতুল্য। এই ১৫ হাজার কোটি টাকা যদি আমাদের থাকতো তাহলে দেশ থেকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর হতো। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ইত্যাদি সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা যেত। বস্তুত বিদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণের চুক্তি করার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সব সরকারের আমলেই যথারীতি এটা হচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা, যেখানে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে গ্যাস উত্তোলন করছে, সেখানে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিকে সব সুবিধা দিয়ে তাদের হাতে জ্বালানির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়াটা আত্মঘাতী। এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত সরকার তখনই সম্পন্ন করতে পারে যখন জনগণ থাকে নির্বোধ ও নিষ্ক্রিয়। অথচ কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা জালেমও হয়োনা এবং মজলুমও হয়োনা।”
কাজেই সরকার যদি দেশ ও দেশের সম্পদ বিক্রির পাঁয়তারা করে তবে সেটা রুখতে এগিয়ে আসতে হবে খোদ জনসাধারণকেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:১২
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×